Logo
×

Follow Us

মুক্তবচন

ঢাকার উত্তরে ও ভারতের উত্তরাখণ্ডে ত্রিচমক

Icon

প্রণব চত্রুবর্তী

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১০:১৫

ঢাকার উত্তরে ও ভারতের উত্তরাখণ্ডে ত্রিচমক

উত্তরের বাতাসে উত্তরাধিকারের চমক। শীতের সমাপ্তিকালে রোমান্টিক দোলা দেওয়ার  ঘটনা। বাংলাদেশের অভিনেত্রী রুনা খানের ৪২ বছর বয়সে শারীরিক  সৌন্দর্য পুনরুদ্ধার। এ ছাড়া রুনা খানের ভাই স্বেচ্ছায় পরলোকগত বাবার সম্পত্তির অর্ধেক রুনা খানকে দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের উত্তরাখণ্ডে জমি-সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন দেওয়ানি আইন কার্যকর করা হয়েছে।

চমক-১

অভিনেত্রী রুনা খান সম্প্রতি তার বাড়তি মেদ ঝরিয়ে  শরীরী তরবারিকে এমন শান দিয়েছেন যে ছেলে-বুড়ো সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, এ যেন বুড়ির ছুঁড়ি হয়ে ফেরা। রুনার মতে, ‘৪০-৪২ বছর বয়সী অপূর্বকে, শুভকে 

সুন্দর-আকর্ষণীয় দেখালে ৪০-৪২ বছর বয়সী রুনা খান, বাঁধনদেরও সুন্দর, আকর্ষণীয় দেখাতে পারে। বিষয় তো একই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার কাছে আসলে সৌন্দর্যের প্রতীক আমার মা। এ ছাড়া শর্মিলা (শর্মিলা আহমেদ) আন্টি, দিলারা জামান তারা। আমি যদি বেঁচে থাকি, সুস্থ থাকি তাদের বয়স পর্যন্ত, তাহলে ওনাদের মতো হতে চাই। তারা ৮০ বছর বয়সে গিয়েও অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেন কিংবা আইস টুডের কাভার মডেল হতে পারেন।’

মধ্যবয়সী বাঙালি নারীর জন্য ভিন্ন বার্তা  বহন করছে রুনার আত্মোন্নয়ন। প্রত্যাশা ও শক্তির উন্মোচনে মানুষ মাত্রই পারঙ্গম- এই কথাটি প্রতিষ্ঠায় রুনা সফল অভিযাত্রী।

চমক-২

রুনা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বণ্টনে তার ভাই তুহিন খানের ঘটনা উন্মোচন করেছেন সবার সামনে। তুহিন খান বাবার সম্পত্তির সমান বণ্টন করেছেন। রুনা খান জানান, তুহিন খান তার দেড় বছরের ছোট ভাই। তবে পড়াশোনায় তিনি ভাইয়ের চেয়ে পাঁচ বছরের বড়। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। অবসর নেন ১৯৯৮ সালে। তবে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরই রুনা জানতে পারলেন, বাবার অবসর ভাতার সব টাকা ফুরিয়ে গেছে। এর মধ্যেই বাবার অসুস্থতা, আয়-রোজগার বন্ধ।

বাবা গোটা জীবনে সম্পদ বলতে গড়েছেন গাজীপুরের সখিপুরে ২৫ কাঠার ওপর একটি বাড়ি। রুনা বলেন, ‘আমি স্নাতকে ভর্তি হলাম, তখন তুহিন ক্লাস নাইনে। পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি! 

টিউশনি-কোচিংয়ে পড়ানো, কুরিয়ার সার্ভিস অফিসে চাকরি- এসব করে ঢাকায় নিজে চলি, বাড়িতে টাকা পাঠাই, সেই টাকায় ভাইয়ের লেখাপড়া, ঘরের অন্যান্য খরচ চলে। পরে টিউশনির পাশাপাশি শুরু হয় অভিনয়ের উপার্জন।’

কিছুদিন আগে রুনার বাবার রেখে যাওয়া সে বাড়িটি বিক্রি করা হয়েছে। আর বিক্রির অর্ধেক টাকা রুনাকে দিয়েছেন তার ভাই। অনেকে তার ভাইকে বুঝিয়েছে, দেশের আইন অনুযায়ী সম্পদের বেশির ভাগ পুত্রের প্রাপ্য। তবে তুহিন মনে করেন, বোনের নিরলস চেষ্টায় তাদের পরিবার টিকে ছিল। সম্পত্তিও ছিল অক্ষয়। রুনা লিখেছেন, ‘আমি যা করেছি, তা এই দেশের বহু মেয়ে হয়তো পরিবারের-ভাইয়ের জন্য করে। তবে আমার ভাই যা করল, তা এই দেশের কয়জন ভাই বাপের সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে বোনদের সঙ্গে করে, তা ঠিক জানি না!’

রুনা আরো বলেন, ‘আমার থেকে শেখার তেমন কিছু না থাকলেও আমার ভাইয়ের থেকে এ দেশের ছেলেরা শিখতে পারেন। মনে মনে হাসি আর ভাবি, অর্থবিত্তে বিখ্যাত না হলেও ভাই আমার মানুষ হয়েছে, সত্যিকারের মানুষ।’ 

রুনার এই গৌরব বোধ সঠিক। এ সমাজে নিত্য চলে উত্তরাধিকারের প্রাপ্য থেকে বোন, মা ও অন্য নিকটাত্মীয়দের বঞ্চনার ঘটনা। সেখানে রুনার ভাই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাজের চোখ খুলে দিয়েছেন।

ঘটনাটি জনসমক্ষে এনে রুনা আরেকটি উদাহরণের মুখোমুখি দাঁড় করালেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের কোটি পরিবারকে। পরিবারের সদস্যরা ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। ছোট ছোট ত্যাগ এই বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। পরিবারগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্র অবয়বে যৌথ সংগ্রামের প্রতীক। কিন্তু ভালো কিছু উদাহরণের অভাবে আমরা প্রতিনিয়ত ঔদার্যের চর্চা থেকে দূরে অবস্থান করি। রুনার ভাইয়ের পারিবারিক ত্যাগ আমাদের সবার জন্য আদর্শ  হয়ে উঠতে পারে। 

চমক-৩

ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে গত ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ উত্তরাখণ্ডে চালু হয়েছে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের ঠিক আগেই দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় উত্তরাখণ্ডের ধামি সরকার।

রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পরে গত ১৩ মার্চ বিজ্ঞপ্তিতে উত্তরাখণ্ডে জমি-সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং লিভ-ইন সম্পর্কের আইন বদল কার্যকরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল উত্তরাখণ্ড সরকার। ২০২৫ সালের শুরুতেই যে রাজ্যে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ কার্যকর হতে চলেছে গত মাসেই তা জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ধামি।

উত্তরাখণ্ড সরকার প্রায় আড়াই বছর ধরে এই বিষয়ে হোমওয়ার্ক করে আসছে। চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পর এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ইউসিসি পোর্টাল এবং নিয়মাবলি উদ্বোধনের পরই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বাস্তবায়নে ভারতের প্রথম রাজ্য উত্তরাখণ্ড। সব ধর্মের মানুষের জন্য বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, জমি-সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকারসংক্রান্ত এক ও অভিন্ন আইন প্রচলনের কথা বলা হয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে।

গত ৮ মার্চ ২০২৪, বিলটি বিধানসভায় পাস হয়। তারপর এটি রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। সম্প্রতি সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের পর মুখ্যমন্ত্রী ধামি বলেন, ‘বিজেপি ২০২২ সালে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার পর উত্তরাখণ্ডে লিঙ্গ-বর্ণ-ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য থাকবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০২২ সালে বিধানসভা নির্বাচন লড়েছিলাম। সেই সময় আমরা রাজ্যের জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে সরকার গঠনের পর আমরা ইউসিসি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করব। আমরা সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছি এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) কার্যকর হতে প্রস্তুত।’

ধামি সরকারের মতে, এই আইন উত্তরাখণ্ড রাজ্যের সমগ্র অঞ্চলে প্রযোজ্য হবে। এটি রাজ্যের বাইরে বসবাসকারী উত্তরাখণ্ডের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে। এই আইন উত্তরাখণ্ডের সব বাসিন্দার জন্য প্রযোজ্য।

অভিন্ন দেওয়ানি আইন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে  সবার জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে। তবে তার জন্য আমাদের পরিবারগুলোকে খুদে মুখপাত্র হতে হবে। রুনার ভাইয়ের মতো স্বেচ্ছায় ত্যাগের ছোট ছোট উদাহরণ সৃষ্টি করে সবার জন্য অভিন্ন দেওয়ানি আইনের জন্য আমরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারি বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। উত্তরের হাওয়া আমাদের সঞ্জীবিত করতে পারে, উদ্দীপ্ত করতে পারে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫