
গ্রাফিক্স: সাম্প্রতিক দেশকাল
গ্যাসসংকট বর্তমানে দেশের শিল্প, বিদ্যুৎ ও গৃহস্থালির জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের অভাবে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও ভোগান্তি বাড়ছে। এর মধ্যেই শিল্পক্ষেত্রে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দূরের কথা, পুরোনোগুলোকেও টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত সরকারের আমলে দেশে গ্যাসের অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রমে স্থবিরতা ছিল। একদিকে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব, অন্যদিকে বাপেক্স যেসব পরিকল্পনা করেছিল, তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে ছিল বছরের পর বছর। ফলে দেশে দীর্ঘ সময় ধরে জোরালোভাবে গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা হয়নি। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো, বিশেষ করে বিবিয়ানা, তিতাস ও অন্য গ্যাসক্ষেত্রগুলো ধীরে ধীরে উৎপাদনক্ষমতা হারিয়েছে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের অভাব, গ্যাস সরবরাহ ও বিতরণে দুর্বল অবকাঠামো এবং অব্যবস্থাপনা সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এদিকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পে শ্রমিক খরচ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদন খরচ ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ অবস্থায় গত কয়েক মাসে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্পের ওপর এটি যেমন বিরূপ প্রভাব ফেলবে, তেমনি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে আরও সংকুচিত করবে। তাই দাম না বাড়িয়ে কীভাবে সিস্টেম লস কমানো যায়, তা ভাবতে হবে।
এ ক্ষেত্রে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন এবং গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানের জন্য সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে শুধু গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল না থেকে নবায়নযোগ্য শক্তি, কয়লা ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়া উচিত। গ্যাস ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি, অবৈধ সংযোগ ও অপচয় রোধ করে কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ করা প্রয়োজন।