
গ্রাফিক্স: সাম্প্রতিক দেশকাল
ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের তীব্র আপত্তির পরও দেশে গ্যাসের দাম বেড়েছে। ঋণের উচ্চ সুদ, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব, ট্রাম্পের নতুন ট্যারিফ প্ল্যান, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ, ভারতের ট্রানজিট সুবিধা বন্ধসহ নানামুখী চাপে এমনিতেই দেশীয় শিল্পমালিকরা চাপে আছেনÑএর মধ্যেই নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৩ শতাংশ। প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে তাদের। পুরোনো শিল্প-কারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম। প্রতিশ্রুত শিল্প গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে।
একদিকে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনের কথা বলছে সরকার, আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন। অন্যদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এমন সিদ্ধান্ত বিনিয়োগের পথকে নিশ্চিতভাবেই কঠিন করে তুলবে। ১৩ এপ্রিলের পর গ্যাস সংযোগ পাওয়া শিল্পগুলোকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে ১০ টাকা বেশি করে গুনতে হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য পুরোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হবে, যা উদ্যোক্তা বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শিল্প খাতে গ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি উপাদান। টেক্সটাইল, কেমিক্যাল, সিরামিক, স্টিল ও অন্যান্য উৎপাদনমুখী খাতে গ্যাসের ওপর নির্ভরতা অনেক বেশি। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মানেই উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, যা শেষ পর্যন্ত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে ভোক্তাদের কাঁধে এসে পড়ে, দেশে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর পেছনে যুক্তি হিসেবে আমদানির খরচ দেখালেও সরকার নিজেই স্বীকার করছে যে কারিগরি ক্ষতির নামে অপচয় হচ্ছে হাজার কোটি টাকার গ্যাস। সুতরাং গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিই সমাধান নয়। বরং বিকল্প জ্বালানি উৎস উন্নয়ন, গ্যাস ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই সামনে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।