
গ্রাফিক্স: সাম্প্রতিক দেশকাল
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) থেকে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বড় একটি অংশ পরিচালিত হয়। ১৭ বছর ধরে টার্মিনালটি হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। গত অর্থবছরে বন্দর কর্তৃপক্ষ আয় করেছে প্রায় এক হাজার ২১৬ কোটি টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রকৃত আয় ছিল ৫৭৪ কোটি টাকা। অথচ এমন একটি লাভজনক ও সুসংগঠিত টার্মিনাল এখন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার ভার দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্প অনুযায়ী, চুক্তির পর টার্মিনালটি পুরোপুরি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে চলে যাবে। তারাই মাশুল আদায় করবে, লোকবল নিয়োগ দেবে।
বিদেশি অপারেটরদের হাতে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, এতে পেশাদারি, দক্ষতা ও আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন হবে, যা বন্দর ব্যবস্থাপনাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করবে। কিন্তু দেশের এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা ও বাণিজ্যিক প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ যদি বিদেশি সংস্থার হাতে যায়, ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য তা হুমকি হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি স্থানীয় দক্ষতা ও সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদেশি অপারেটর নিয়োগ হলে দেশীয় জনশক্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন অবকাঠামো তৈরিতে বিদেশি বিনিয়োগ যুক্তিযুক্ত, কিন্তু সম্পূর্ণ প্রস্তুত, লাভজনক ও দেশীয় পদ্ধতিতে সফলভাবে পরিচালিত একটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার যৌক্তিকতা কী?
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল শুধু একটি অবকাঠামো নয়; বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতারও প্রতীক। আমাদের মত হলো, নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনার জন্য জাতীয় স্বার্থ, স্থানীয় সক্ষমতা ও স্বচ্ছ চুক্তির বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।