
আমার মনে হয় না। অন্তত পেহেলগাম ইস্যুতে নয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ক্রমেই সন্দেহ দানা বাঁধছে যে এটি একটি ফলস ফ্ল্যাগ (মানুষের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য নিজেরাই কোনো নতুন সমস্যা সৃষ্টি করা)। ইউটিউবে একটি আলোচনা দেখলাম; তারা যুদ্ধ বাধিয়েই দিয়েছেন। বোধ করি কিছু তথ্যের অভাবের কারণে তারা এমনটি ভাবছেন।
এ কথা ঠিক,
পাকিস্তান থেকে সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশ ভারত। আয়তনে তারা পাকিস্তান থেকে সাড়ে তিন
গুণ বড়; কিন্তু সামরিক বাহিনী সমান অনুপাতে বড় নয়। উপরন্তু, পাকিস্তান বিমানবাহিনী
ভারত থেকে এক প্রজন্ম এগিয়ে। এ কথা একজন ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান স্বীকার করেছেন।
ভারতের কাছে রয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে পঞ্চম
প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, শিগগিরই তারা ষষ্ঠ প্রজন্মের বিমানও হাতে পাচ্ছে। এই তফাৎটি
উল্লেখযোগ্য ব্যবধান গড়ে দিতে পারে, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
ভারতের কোনো
একনিষ্ঠ পরাশক্তি বন্ধু নেই, পাকিস্তানের আছে। এই দৃঢ় বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল ৫৪ বছর
পূর্বে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ আগ্রহে পাকিস্তানের মধ্যস্থতায়
তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার প্রথম মার্কিন পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে চীন
ভ্রমণ করেন। এই একটি ভ্রমণ সমগ্র বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে পরবর্তী কয়েক
দশক ধরে ব্যাপক ভূমিকা রাখে, এখনো রেখে চলেছে। এর ফলেই চীন পশ্চিমা অর্থনীতিতে প্রবেশের
সুযোগ পায় এবং সেটি কাজে লাগিয়ে একটি অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে
তারা ১ নম্বর অর্থনৈতিক পরাশক্তি, যদিও বুদ্ধিমান জাতি বিধায় তারা সেটি প্রচার করে
না। চীন তাদের এই মহা-উত্থানের পেছনে পাকিস্তানের অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সম্মান করে।
তাই শত চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পাক-চীন বন্ধুত্ব কংক্রিটের মতো সলিড। বলা যায়, চীন পাকিস্তানের
সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক
শক্তির কারণে চীন সামরিক শক্তিতেও ব্যাপক এগিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন
করেছে রাশিয়া। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের সর্বোচ্চ সামরিক প্রযুক্তি শুধু চীনের
সঙ্গে শেয়ার করে থাকে মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, চীন তাদের মতোই মার্কিনবিরোধী কাজেই,
তারা শক্তিশালী হলে রাশিয়ার লাভ। দ্বিতীয়ত, চীন তাদের বিপুল অর্থনৈতিক শক্তি দিয়ে রাশিয়াকে
ব্যাপকভাবে সহায়তা করে চলেছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের পুরোটা সময় রাশিয়ার জন্য অর্থনৈতিক
ঢাল হয়ে রয়েছে। ফলে রাশিয়া অর্থনৈতিক ঝড়ঝাপটা ততটা বুঝতে পারেনি। উভয়ের দুই দশকের ঘনিষ্ঠ
সম্পর্ক সময় ও বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, যা এখন অভঙ্গুর। তাই রাশিয়া যেকোনো শীর্ষ
কৌশলগত গোপনীয় অস্ত্র আবিষ্কারের কিছুদিনের মধ্যেই শুধু চীনকেই দেয় এবং আশা করে, চীন
ত্বরিত সেগুলো চৈনিক সংস্করণ বের করে ফেলুক। বলা বাহুল্য, চীন করেও থাকে তাই।
এবার আসি পাকিস্তানের
সামরিক শক্তির বিশ্লেষণে। ভারত দুটি কারণে পাকিস্তানকে আক্রমণ করবে না। প্রথমত, তারা
জানে পেহেলগাম হত্যাযজ্ঞ নিজেরাই ঘটিয়েছে অথবা ঘটতে সহায়তা করেছে। পশ্চিমা ইন্টেলিজেন্স
শিগগিরই এটা বের করে ফেলবে, চীনও বের করবে। কাজেই নিজেদের কু-কর্মের কারণে একটি পারমাণবিক
শক্তিধর দেশকে আক্রমণের ঝুঁকি তাদের নেওয়ার কথা নয়। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধটি প্রচলিত অস্ত্রে
হলেও ভারতের হেরে গিয়ে বেইজ্জতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাদের ইন্টেলিজেন্সের সেটিও
না জানার কথা নয়। হ্যাঁ, পাকিস্তানের হাতে সম্মুখযুদ্ধের ভারী অস্ত্র যেমন ট্যাংক,
কামান, মর্টার ও সাঁজোয়া যান সংখ্যায় কম আছে। তবে ভারত তার বিশাল বাহিনী নিয়ে আক্রমণ
করলে পাকিস্তান তার মোকাবিলা করবে নিখুঁত সব ভারী অস্ত্র বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে।
সেগুলো আকাশ ও ভূমি থেকে নিক্ষেপ করা যায়। ওগুলো তাদের হাতে পর্যাপ্তই রয়েছে। কাজেই
ব্যাপক ভারতীয় অগ্রাভিযান তারা সহজেই থামিয়ে দিতে পারবে।
রাশিয়ার একটি
অত্যাধুনিক মারাত্মক কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রের নাম ‘জারকন’। এটি একটি জাহাজ বিধ্বংসী হাইপারসনিক
ক্ষেপণাস্ত্র, যেটি শব্দের চেয়ে ৯ গুণ বেশি গতিতে ছোটে। রেঞ্জ এক হাজার কিলোমিটার।
ক্ষেপণাস্ত্রটি জাহাজ, ভূমি ও আকাশ থেকে ছোঁড়া যায় এবং নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে
আঘাত করে। এটির বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের হাতেও নেই।
চীন আগেই এটির চৈনিক সংস্করণ বানিয়ে ফেলেছে এবং মার্কিন নৌবহরের বিরুদ্ধে ব্যবহারের
উদ্দেশে ব্যাপকভাবে মোতায়েন করেছে। নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যায়, এই মিসাইল পাকিস্তানের
হাতেও আছে। আগেই বলেছি, তাদের বিমানবাহিনী ভারত থেকে এক প্রজন্ম অথবা একযুগ এগিয়ে।
সেটির প্রমাণ মিলেছে পুলওয়ামা ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনের পর ভারতের চালানো সার্জিক্যাল
স্ট্রাইকের করুণ পরিণতি দেখে। ওই অভিযানে পাকিস্তান কিছু না খোয়ালেও ভারত একটি হেলিকপ্টারসহ
মোট তিনটি বিমান খুইয়েছে। দুটি পড়েছে ভারতীয় সীমানায়, যে তথ্য তারা গোপন করেছে।
আবার ভারত যদি
পাকিস্তানকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আরব সাগরে তাদের বিরাট নৌবাহিনী নিয়ে ব্লকেড সৃষ্টি
করে তাহলে পাকিস্তান তাদের বিমানবাহিনী ব্যবহার করে অনেক দূর থেকে ভারতের বিমানবাহী
রণতরিসহ ক্যাপিটাল জাহাজগুলো ডুবিয়ে দিতে খুব বেগ পাওয়ার কথা নয়। হুতিরা ইয়েমেন থেকে
অনেক পুরোনো সব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে লোহিত সাগরে বিশ্বার শ্রেষ্ঠতম মার্কিন নৌবহরের জন্য
কি মারাত্মক ঝামেলাই না সৃষ্টি করে চলেছে! সেখানে পাকিস্তানের দক্ষ বিমানবাহিনী ও অত্যাধুনিক
ক্ষেপণাস্ত্র খুব সহজেই ভারতীয় নৌবাহিনীকে নিউট্রালাইজ করে ফেলতে পারবে। ভারতীয় সাধারণ
মানুষ যতই বোকা হোক, ইন্টেলিজেন্স অতটা বোকা নয় এবং এসব খবর তাদের কাছে অবশ্যই আছে।
এরপর বাকি থাকল
পারমাণবিক যুদ্ধ। সেটি ঘটলে দুটি দেশই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
ওপরে প্রদত্ত
তথ্যের আলোকে মনে হয় না দুটি দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বেধে যাবে। তবে মোদি এই পেহেলগাম
চক্রান্তের মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য হয়তো হাসিল করতে পারবেন। অর্থাৎ বিজেপি সরকারের বিভিন্ন
ব্যর্থতা আপাতত ঢাকা দিয়ে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন।