
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাক্কলিত হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ দেখানো হয়েছে। স্থির মূল্যে এই জিডিপির আকার প্রায় ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। অবশ্য অর্থনীতিবিদরা প্রবৃদ্ধির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলেছেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ভালো ছিল। করোনার কারণে মার্চের পর এ গতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। তবে এ হিসাব অর্থবছরের প্রথম আট মাসের তথ্য নিয়ে পরবর্তী মাসগুলো প্রাক্কলন করা হয়েছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বিবিএসের হিসাব মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ১ হাজার ৯০৯ ডলার।
বিদায়ী অর্থবছরের (২০১৯-২০) জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিবিএসের তথ্য বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জিপিডির প্রবৃদ্ধিকে একটা রাজনৈতিক সংখ্যা হিসেবে উল্লেখ করে একটি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন তৈরির সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
সত্যিকার অর্থে জিডিপি ব্যাপারটির মধ্যেই একটা মারপ্যাঁচ আছে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিকেই উন্নয়ন মনে করা হতো। তবে উন্নয়নের এই ধারণা সত্তরের দশকেই বাতিল করেছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ, প্রবৃদ্ধি যত বাড়ে, আয়বৈষম্য বাড়ে তার চেয়ে বেশি। তবে অনেক রাষ্ট্রনেতা জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেশ পছন্দ করেন। সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রচার করে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিয়ে বিতর্ক যাই থাক, সাধারণ মানুষের কাছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নির্ণায়ক হলো তাদের দৈনন্দিনের স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির বদলে সরকার যদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য হ্রাস ও আয় বৈষম্য নিরসনের মতো বিষয়গুলো আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করেন তাহলে প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিতর্কের ধূম্রজাল তৈরি হওয়ার সুযোগ কমে আসবে।