নারীর প্রতি সহিংসতার কোনো সামাজিক বা জাতীয় সীমারেখা নেই। আনুমানিক এক হিসাবে বিশ্বজুড়ে প্রতি তিন নারীর মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো সময় শারীরিক অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে তৃতীয়, পঞ্চম ও ষোড়শ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে নানান পদক্ষেপ গ্রহণের উল্লেখ রয়েছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বাংলাদেশের অবস্থান খুব ভালো নয়। নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা সূচকে বিশ্বে ১৬৭টি দেশ নিয়ে তৈরি তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২। নরওয়ের দ্য পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি যৌথভাবে এ সূচক তৈরি করেছে। নিরাপত্তা সূচকের নিয়ামক ছিলো তিনটি- স্বামীর নির্যাতন, সামাজিক নিরাপত্তা ও কাঠামোগত সহিংসতা।
ইউএন ওম্যানের নির্বাহী পরিচালক কারোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির পরিস্থিতিকে ছায়া মহামারি হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এক বিবৃতিতে কভিড-১৯ মোকাবেলার জন্য গৃহীত জাতীয় পরিকল্পনায় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। এই ছায়া মহামারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে তা কভিড-১৯ পরবর্তীতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যোগ করবে।
বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, গত মে মাসে ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতার মধ্যে মানসিক ৪৫ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৩ শতাংশ নারী। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৯ শতাংশ। ব্র্যাক পরিচালিত জরিপে ৩২ শতাংশ মানুষ বলেছে, করোনার কারণে কাজ হারিয়ে আয় কমে যাওয়ায় পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে।
করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য সেবাপ্রদানকারী, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। করোনা মোকাবেলার পরিকল্পনায় নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। নারীর প্রতি সহিংসতার বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, সহিংসতার শিকার নারীর জন্য নিরাপদ আশ্রয়, সহিংসতা প্রতিরোধে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে সহায়তা চাওয়ার বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে নজর দেওয়ার কথা জাতিসংঘের তরফ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি আইন সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলোও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হবেন। চলমান করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতাজনিত ছায়া মহামারি মোকাবেলায় এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।