Logo
×

Follow Us

মুক্তবচন

ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক দায়িত্ববোধ

Icon

সুমিত বণিক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৫৪

ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক দায়িত্ববোধ

ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের উৎকণ্ঠা হয়তো কিছুটা কমেছে। তারপরও বর্তমান সময়ে সারাদেশব্যাপী ডেঙ্গু রীতিমতো এক আতঙ্কের নাম। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর থেকেই বলা হচ্ছে যে, আতঙ্কিত না হয়ে বরং সচেতন হোন, কারণ ডেঙ্গু প্রতিরোধযোগ্য। ইতিমধ্যে আমরা অনেকেই আমাদের স্বজন হারিয়েছি, অনেকেই এখনো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রয়েছেন। তারা হয়তো উপলব্ধি করেছেন এর ভয়াবহতাটা। জনস্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে মাছিবাহিত রোগ ‘কালাজ¦র’ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে যেটা উপলব্ধি হয়েছে, কালাজ¦রের বাহক বেলেমাছির একটা কামড় একজন ব্যক্তি ও তার পরিবারকে পুরো বিপন্ন করে দিতে পারে বা শেষ করে দিতে পারে বেঁচে থাকার ভবিষ্যৎ সব আনন্দায়োজন। সেই বাস্তব কর্ম অভিজ্ঞতা ও ভাবনা থেকে আজকে কালাজ¦র নয়, ডেঙ্গু নিয়ে কিছু বলতে চাই।

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু ছাড়াও চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, কালাজ্বর এবং ইয়েলো ফিভার বা হলুদ জ্বর প্রভৃতি রোগগুলো হলো বাহক বাহিত রোগ। এই নির্দিষ্ট রোগগুলোর ক্ষেত্রে নিদিষ্ট নির্দিষ্ট বাহক বা ভেক্টর থাকে। এবং এর পাশাপাশি থাকে পোষক বা হোস্ট। তবে এই রোগগুলোর সবই মশা-মাছি দ্বারা সংক্রমিত হয়। তাই, ডেঙ্গু রোগের হাত থেকে যদি নিজেকে রক্ষা করতে চাই, তাহলে প্রথম শর্তই হলো, নিজেকে এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে হবে; কিন্তু কাজটি এতো সহজ নয়, কারণ আমি হয়তো সচেতন হয়ে ডেঙ্গু মশার আবাসস্থল ধ্বংস করেছি; কিন্তু অন্যের অসচেতনতার বলিও কিন্তু আমরা যে কেউ হতে পারি! আর সে কারণেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ কোনো একক উদ্যোগে সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। 

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। বৈশ্বিকভাবেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি। গত জুলাই মাসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গুসহ এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে শুধু রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ বা নির্মূল করা সম্ভব না। এজন্য প্রয়োজন দ্রুত রোগীর সঠিক চিকিৎসা এবং কার্যকর বাহক দমন কার্যক্রম। এই রোগ প্রতিরোধ বা নির্মূলের ক্ষেত্রে বৈশ্বিকভাবে যে কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করা হয়, তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- দ্রুত রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা, বাহক দমনে স্থায়ী সমন্বিত উদ্যোগ, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। অন্তত এই উদ্যোগগুলো ছাড়া এই রোগ প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব। তাই রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি নিজের আশপাশে এডিস মশার প্রজননস্থল বা বসবাসের জায়গা ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই।

অনেকক্ষেত্রেই আমরা নিজেদের সামাজিক দায়বদ্ধতাকে ভুলে গিয়ে, শুধু সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দোষারোপ করার মধ্য দিয়ে নিজের নাগরিক দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করি! যা কখনোই কাম্য নয়। তবে এ বছর ডেঙ্গু রোগের ব্যাপকতা ও ভিন্নতা অনুযায়ী, এই সব রোগ প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে কর্ম পরিপরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি, তাই কীটতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ ও উদ্ভাবনী গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে এই রোগের বাহক এডিস মশার ভিন্নতা বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জানা ও কার্যকর ওষুধ নির্বাচন করা সম্ভব বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) এর স্বনামধন্য পরজীবি বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও গবেষণা পরিচালনায় সরকারকে কারিগরি সহায়তা প্রদান এবং ভূমিকা রাখতে পারবে বিশ্বাস করি।

সবশেষে বলতে চাই, নিজে ডেঙ্গুর লক্ষণ সম্পর্কে জানুন, অন্যকে জানাতেও উৎসাহিত করুন, সম্ভাব্য লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন, প্রয়োজনে জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বরে কল করে পরামর্শ নিন। সর্বোপরি, ডেঙ্গুতে আতংকিত না হয়ে, প্রতিরোধে সোচ্চার হোন। আসুন, নিজের নাগরিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়ে গড়ে তুলি ডেঙ্গু মুক্ত দেশ।

লেখক: সুমিত বণিক
জনস্বাস্থ্য কর্মী।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫