
ভুটানের সাথে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর করল বাংলাদেশ। এটিই বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি। সে বিবেচনায় গত ৬ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক। স্বল্পোন্নত দেশে উত্তীর্ণ হতে হলে এ ধরনের চুক্তির গুরুত্ব রয়েছে।
চুক্তিটি আমাদের দেশের অবস্থানকে একধাপ এগিয়ে নিলো। জন্মলগ্ন থেকেই ভুটানের সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও হৃদ্যতাপূর্ণ। বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ভুটান পারস্পরিক রাজনৈতিক বন্ধুত্বের সূচনা করেছিল।
ভুটানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো নিবিড়, ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ হয়েছে। বিগত দশ বছরে বাংলাদেশ-ভুটান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় পাঁচগুণ বেড়েছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি দু‘দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে সহায়ক হবে।
নতুন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। ভুটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫৭.৯০ মিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে বাংলাদেশ ভুটান থেকে সবজি, ফলমূল, খনিজ দ্রব্য, নির্মাণসামগ্রী, পাথর, কয়লা, পাল্প, রাসায়নিক আমদানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভুটানে তৈরি পোশাক, আসবাব, খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ, প্লাস্টিক, বৈদ্যুতিক পণ্য রফতানি করা হয়।
ভুটান থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পাথর আমদানি সম্ভব হলে বাংলাদেশের জন্য নির্মাণসামগ্রীর ব্যয় হ্রাস পাবে, যা নির্মাণ খাতের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়াও স্বল্পমূল্যে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করা সম্ভবপর হবে।
ভুটান একটি ভূবেষ্টিত রাষ্ট্র। আয়তন মাত্র ৩৮ হাজার ৩৯৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় সোয়া ৮ লাখ। ভুটানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো হলে তা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে। ভুটানকে সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়া গেলে বাংলদেশের আয় বাড়বে।
ভুটানের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। জলবিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব ও দামে কম। ভুটানের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে তা সাশ্রয়ী দামে অমদানি করা সম্ভব হবে।
ভুটানের উত্তরে চীন ও দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্বে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্রপূর্ণ উদ্ভিদ, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, অনন্য প্রাণীজগতের জন্য দেশটি বিশ্বের পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
এ অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি নিঃসন্দেহে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য সম্পর্কে নতুনমাত্রা যোগ করবে। একইসাথে দৃষ্টি রাখতে হবে এ বাণিজ্য সম্পর্ক যেন দীর্ঘমেয়াদে আমাদের দেশের জন্য লাভজনক সাব্যস্ত হয়।