
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠককে ঘিরে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) দু’দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ভারতের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী এবং বাংলাদেশের পক্ষে সংশ্লিষ্ট সাত মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সচিব পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা সমঝোতা স্মারকগুলোয় স্বাক্ষর করেন।
হাইড্রোকার্বন খাতে সহযোগিতা, হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, বাংলাদেশ-ভারত সিইও ফোরামের টার্মস অব রেফারেন্স, নয়াদিল্লি জাদুঘরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি, হাতির সুরক্ষায় অভয়ারণ্য নিশ্চিত করা, বরিশালে সুয়্যারেজ প্রকল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, কৃষি খাতে সহযোগিতার প্রত্যাশা নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়।
ভারত-বাংলাদেশ উভয় রাষ্ট্রই পরস্পরের ক্ষেত্রে কূটনৈতিকভাবে ‘প্রথম প্রতিবেশী’র নীতি অনুসরণ করে। এ সম্পর্কের ভিতকে আরো মজবুত করতে দু’দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের এ বৈঠক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পাশাপাশি চীনের সম্পর্ক নিবিড় হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পাশাপাশি চীনের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে চলছে টানাপড়েন। ঠিক এমন একটা সময়ে ভারত তার পুরনো মিত্রের সাথে সম্পর্ক জোরালো করতে চায়। বাংলাদেশও মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকারের সমর্থনকে ভুলে যেতে চায় না। তবে শুধু এ আবেগকে ঘিরে দু’দেশের সম্পর্ক খুব বেশি দূর এগিয়ে নেয়া যাবে না।
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে কূটনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হলে কৌশলগত দর কষাকষি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য ক্ষেত্রে অসমতা দূরীকরণ, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের সমর্থন আদায়ের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সমাধানে বাংলাদেশকে উদ্যোগী হতে হবে।
ভারতের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে আরও দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের জাতীয় স্বার্থে ছাড় দিয়ে কোনো রাষ্ট্রই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেয় না। বাংলাদেশকেও ঠিক তেমনি রাষ্ট্রীয় স্বার্থ আদায়ে তৎপর হতে হবে। বাংলাদেশ ইতোপূর্বে দু’দেশের মধ্যে কৌশলগত দর কষাকষির ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে। নিষ্পত্তি করতে পেরেছে দু’দেশের মধ্যে ঝুলে থাকা ছিটমহল এবং স্থল ও সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মতো জটিল সমস্যা।
কৌশলগত দর কষাকষির অতীত অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে পানি বণ্টন, সীমান্ত-হত্যা, বাণিজ্যে সমতা, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের অবস্থানকে নিজেদের স্বার্থের পক্ষে আনতে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করতে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির দিকে নজর দিতে হবে।