
শায়রুল কবির খান।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন ১৯৭৭ সালে। তিনি একটি অর্ন্তবর্তী শিক্ষানীতি প্রণয়ণের জন্য ১৯৭৮ সালে প্রফেসর মুস্তফা বিন কাসিমের নেতৃতে জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ‘অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতি সুপারিশ’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে দেশে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় যাতে জনগণ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। এ রিপোর্টে বৃত্তিমূলক, কারিগরি, কৃষি ও চিকিৎসার সম্প্রাসারণে বিশেষ জোর দেয়া হয়। জিয়াউর রহমান নিজেও মনে করতেন যে, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতি এবং দক্ষমানব সম্পদ তৈরির জন্য বৃত্তিমূলক কৃষি ও বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষার সম্প্রাসরণ একান্ত প্রয়োজন।
শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির’ প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষণাপত্রের ২১নং ধারায় বাংলাদেশে একটি ‘গণমুখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম’ চালুর প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল- বিএনপি সরকার “এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষপাতী যা জাতীয় ঐক্য আনে, উৎপাদন বাড়ায় এবং ব্যক্তি ও সামাজিক উন্নয়নের নিশ্চয়তা দেয়।”
প্রথম শিক্ষা কমিশন হয় ১৯৭৮ সালে (কুদরত-ই খুদা কমিশন)। এই কমিশনের সুপারিশের আলোকে গঠিত হয় ‘মৌলিক শিক্ষা একাডেমি’, যা বর্তমানে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি’ নামে পরিচিত। এর প্রধান অফিস ময়মনসিংহ সদরে।
১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ অধিবেশন প্রেসিডেন্টের ভাষণে বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষাকে ‘জাতির জন্য কলাণ্যকর’ আখ্যায়িত করেছিলেন শহীদ জিয়া। তিনি বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষা-কৃষি শিক্ষা ও চিকিৎসা সস্পসারণ বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে দেশে কারিগরি শিক্ষাগ্রহণ করে তার প্রসার ঘটে। তৈরি হয় দক্ষ মানব সম্পদ। এই দক্ষ কর্মীবাহিনীই এখন পোশাকশিল্পে কর্মরত। এর ফলে প্রবাসেও শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ তৈরি পোশাকশিল্প ও প্রবাসে কর্মসংস্থান দুটোই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে শুরু। এই দুই খাতের অর্থনৈতিক মজবুত ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যা পরিষদ’ গঠন করেন। শহীদ জিয়া মনে করতেন- গ্রামীণ ও পল্লী উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যাপক প্রয়োগ ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় উপযোগী প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যাপক প্রয়োগ ও ব্যবহার দরকার। ১৯৮০ সালে গণশিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় মূলত যারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তাদের সুবিধার জন্য। মাদ্রাসা শিক্ষাকে মুলধারার যুক্ত করার লক্ষ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয়। ১৯৭৯ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। দেশে কর্মমুখি, ধর্মীয়, নৈতিক ও উচ্চশিক্ষার প্রসারে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়ার শান্তি ডাঙায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে ১৯৮০ সালে জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করা হয়। একই বছর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য অভিন্ন চাকরিবিধি এবং জাতীয় বেতন স্কেলের প্রারম্ভিকের ৫০% দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
১৯৮০-৮১ সালে উন্নয়ন প্রকল্পে থানাপর্যায়ে পাবলিক লাইব্রেরি কাম অডিটোরিয়াম স্থাপন প্রকল্প প্রনয়ণ করা হয়। ১৯৮১ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করেন। তার অধীনে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৭টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৯৩টি।
স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি প্রথম বছরেই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের বিনা বেতনে পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করেন। ১৯৯২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও গণশিক্ষা বিভাগকে একত্র করে স্বতন্ত্র ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৫ সালে বিএনপি সরকার ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের জন্য উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে।
দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ সংগঠন সার্কের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ও বিএনপির শাসনামলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আধুনিক সংস্কার হয়েছে। পাশাপাশি এ সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অসংখ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারের সহযোগিতায় বেসরকারিপর্যায়েও এ সময় অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং কলেজপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ইতিহাস এর জ্বলন্ত স্বাক্ষী। কেউ চাইলে রাজনৈতিক ভিন্ন মতের কারণে তা অস্বীকার করতে পারেন। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না।
লেখক: সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী