চিকিৎসার ব্যয় বাড়ছে
আর্থিক অসামর্থ্যদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:১৮

প্রতীকী ছবি
দেশে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। এমনকি সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে রোগীর নিজস্ব ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে বছরে ১ কোটি ১৪ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ না বাড়ানোর কারণে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলেও মত সংস্থাটির।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্রমাগত উন্নতির কথা বলা হয়; কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, স্বাস্থ্যসেবা নিতে একজন মানুষের খরচের প্রতি ১০০ টাকায় গড়ে ৬৭ টাকা নিজের পকেট থেকেই খরচ হয়, সরকার দেয় আনুমানিক ২৩ টাকা, বাকিটা অন্যান্য উৎস থেকে আসে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাণিজ্যিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে সেবা নেওয়ার প্রবণতা বাড়ার কারণে নিজস্ব স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দেওয়া ইশতেহারে এক বছরের কম বয়সী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিককে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। গ্রামাঞ্চলের সেবাকেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেবার মান বৃদ্ধি ও উপস্থিতি নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু এর বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাইনি বরং ২১ জানুয়ারি ২০১৯, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা দেশের ৮ জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছিলেন। ওই দিন হাসপাতালগুলোতে ২৩০ জনের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে ছিলেন ১৩৮ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপস্থিত স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসকের পক্ষে বিপুলসংখ্যক রোগীকে মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টি আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি মানসম্পন্ন সেবার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে দেশের মানুষ এখন বেসরকারি খাত থেকে বেশি স্বাস্থ্যসেবা নেয়। সামর্থ্যবানরা চলে যান দেশের বাইরে। প্রচুর মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠলেও মানসম্পন্ন চিকিৎসাশিক্ষা হচ্ছে না। রোগীরা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে, এক চিকিৎসকের কাছ থেকে অন্য চিকিৎসকের কাছে দৌড়ায়। এতে খরচ বাড়ছে।
ব্যক্তির স্বাস্থ্য ব্যয় কমাতে স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের ১০ শতাংশ বরাদ্দ করা, গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, ওষুধের দাম কমানো ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি, দুর্নীতি কমানো, নজরদারি বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বাড়লে, দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত মানুষ চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত থাকে অথবা চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। আর্থিক অসামর্থ্যরে কারণে কেউ যেন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।