বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রত্যাশা
মানুষের মৌলিক চাহিদা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হোক

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৩৫

প্রতীকী ছবি
১৯৭১ থেকে ২০২১, আমরা পেরিয়ে এসেছি বিজয়ের ৫০টি বছর। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে শৃঙ্খলমুক্তি। আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠন; যেখানে প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের গড় আয় ও আয়ু-দুটিই বেড়েছে। নারী শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা আর খাদ্য ঘাটতির দেশ নই। স্বল্পোন্নত দেশের সীমা পেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের দরজায় পা রাখছি। নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু, প্রশস্তকরণসহ মহাসড়ক সংস্কার, মেট্রোরেল, ট্যানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ওভার ব্রিজ, ফ্লাইওভার, অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবন, রেল উন্নয়ন, নৌপথ উদ্ধার, নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরনো রাস্তা সংস্কার, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
তবে আর্থ-সামাজিক কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য সত্ত্বেও সাধারণ জনগণের মৌলিক চাহিদা তথা জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়নি আজও। এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন। ৫০ বছরেও ফুটপাতে মানুষ ঘুমায়, বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা স্থাপিত হয়েছিল আমাদের আদি সংবিধানের মৌল ভিত্তি হিসেবে। পরবর্তীকালে নানা রাজনৈতিক চড়াই-উতরাইয়ের কারণে সেই সংবিধান অক্ষত থাকেনি। নানা কালো আইন ও অধ্যায় এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। স্বাধীন মত প্রকাশেও তৈরি হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি যেন স্বপ্নই থেকে গেছে। অন্যায়ভাবে একে-অন্যের ওপর প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে অবিচার।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে। দেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করলেও, থেকে গেছে প্রকট ধনবৈষম্য। স্বাধীনতা মানে শুধু দেশকে দুষ্টচক্রের কবল থেকে ছিনিয়ে আনা নয়। অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতন সরিয়ে একটি শান্তির দেশ গড়া; কিন্তু বিজয়ের ৫০ বছরে পদার্পণ করে তা কতটুকু সম্ভব হয়েছে, ভেবে দেখতে হবে। কারণ এখনো দেশে দুর্নীতিবাজ আর লুটপাটকারীদের প্রবল দাপট বিদ্যমান। প্রভাবশালী মহলের কারসাজিতে লুটপাট হয়ে যায় হাজার হাজার কোটি টাকা। দিনে দিনে গণতন্ত্র সংকুচিত হয়েছে। নির্বাচনি ব্যবস্থা কার্যত ধসে পড়েছে। বিশেষত সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনিয়ম, সহিংসতা ও সংঘাতের ঘটনায় নির্বাচনের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এর দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
এ বছর আমরা বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি। আমরা প্রত্যাশা করি, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হোক সুশাসন, গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, অসাম্প্রদায়িকতা ও সামাজিক ন্যায়। সবাইকে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা।