গুণগত শিক্ষা, শিক্ষক এবং পাঠদান কলাকৌশল

ড. মো. আব্দুল হালিম
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ১২:১৮

ড. মো. আব্দুল হালিম
জ্ঞান অর্জন, নতুন জ্ঞান আবিষ্কার এবং নতুন কলাকৌশল আয়ত্বকরণ ও তা প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ অতি দ্রুত পৃথিবীর পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এ পরিবর্তনের অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে শিক্ষক। শিক্ষক একজন অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব যার মূল দায়িত্ব হলো শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা। এই সুষ্ঠু পরিবেশের মাধ্যমেই শিক্ষার্থী জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধ অর্জনের সুযোগ পায়।
পরিবর্তিত জগতের নতুন জ্ঞান ও কলাকৌশল আয়ত্বে আনার সুযোগ তখনই পাবে, যখন শিক্ষক সেই জ্ঞান কলাকৗশল সমৃদ্ধ হবেন এবং যথা সময়ে যথার্থভাবে শিক্ষার্থীর নিকট পৌঁছে দেবেন। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের একটি বিশেষ ক্ষেত্র মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন। আর এ কাজের বিস্তার ঘটানোর জন্য রয়েছেন শিক্ষক। একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষককেই এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে পাঠদান কলাকৌশল উন্নয়নের মাধ্যমে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা শিক্ষকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রবন্ধে শিক্ষার মান উন্নয়নে উদ্যোগসমূহ এবং এর সাথে সম্পর্কিত প্রত্যয়সমূহ যেমন পাঠদান কলাকৌশল এবং শিক্ষকের ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে।
গুণগত শিক্ষার মান উন্নয়নের উদ্যোগসমূহ : মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের সঙ্গে ছাত্রীদের শিক্ষা, বিদ্যালয়মুখীকরণ এবং বর্ধিত হারে এসএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পরিদর্শন ও পরিবিক্ষণ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমে বাংলাদেশ সরকার শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষ সাধনে বিগত তিন দশক থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে ফিমেল সেকেন্ডারি স্কুল অ্যাসিসট্যান্স প্রজেক্ট (১৯৯৪), ফিমেল স্কুল অ্যাসিসট্যান্স প্রজেক্ট : দ্বিতীয় পর্যায় (২০০১), টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রজেক্ট (২০০৫), সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি এন্ড একসেস এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (২০০৮) অন্যতম। শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা ও চিন্তাভাবনা শিক্ষাক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিক নির্দেশ করে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও পরিবিক্ষণ এখনও অনগ্রসর।
মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষক, উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সহায়ক পরিবেশ। প্রজেক্টসমূহের মাধ্যমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনা থেকে উত্তরনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও একাডেমিক তত্ত্বাবধানের উন্নয়নের পাশাপাশি কার্যকার পাঠদান উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তারপরও আমাদের শিক্ষার নিম্নমান, পরীক্ষায় নকল প্রবণতা, মাধ্যমিক স্তরে উচ্চহারে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ইত্যাদি সমস্যাগুলো শিক্ষার গুণগতমানকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।
গুণগত শিক্ষায় শিক্ষক : শিক্ষক শিক্ষাদান করেন। শিক্ষাদান করার অন্তর্নিহিত ক্ষমতাই তার যোগ্যতা। তার যোগ্যতার মাপকাঠি অর্জিত শিক্ষা সফলতা, অভিজ্ঞতা এবং নিয়মিত পড়াশোনা। নিয়মিত পড়াশোনা, চর্চা- অনুশীলন তার সক্ষমতাকে বৃদ্ধি ও সচল রাখতে এবং হালনাগাদ করণে সাহায্যে করে। শিক্ষকের ক্ষমতার মাপকাঠি হলো, তিনি কতটা সফলতার সাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করতে পারছেন। সকল শিক্ষার্থী যদি তার বিতরন করা জ্ঞান শতভাগ বুঝতে ও আত্মস্থ করতে পারে এবং উদ্দিপ্ত হয় তবে তার দক্ষতা পরিপূর্ণ বলে ধরা যায়।
বাংলাদেশকে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সময় এসেছে একজন শিক্ষকের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ কার্যক্রমে সাড়া দিয়ে আধুনিক শিক্ষাদান কার্যসম্পাদনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার এবং যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের। একজন উত্তমমানের শিক্ষকই পারেন প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ভালভাবে শেখাতে। যেহেতু পরিবার, সমাজ এবং জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে বর্তমান প্রজন্মের সৃজনশীলতা, দক্ষতা, জ্ঞানের পরিধির উপর। অবশ্যই শিক্ষক প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে শিক্ষার্থীর প্রতিভাকে প্রতিপালন ও বিকশিত করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞানসম্বলিত মানব সম্পদ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। গুণগতমানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ শিক্ষাথীদের কৃতিত্ব অর্জনের একটি প্রধান উপাদান। শিক্ষার্থীদের এই সুযোগ সৃষ্টি করা শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
শ্রেণিকক্ষে সফলভাবে পাঠদানের জন্য একজন শিক্ষকের নিজ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা প্রয়োজন, একই সাথে শ্রেণিকক্ষে পঠনীয় বিষয় কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কলাকৌশল কী হবে, শিখন সহায়ক শিক্ষা উপকরণ কখন কীভাবে ব্যবহার করা যায়, শ্রেণির সকল ছাত্র-ছাত্রী প্রতি সমানভাবে রেখে সমভাবে গুরুত্ব দিয়ে কীভাবে পাঠ পরিচালনা করা যায়, পাঠে শিক্ষার্থীদের ঔৎষুক্য সৃষ্টি এবং তাদের চিন্তা ও কল্পনা শক্তির উন্মেষ ঘটানোর উপযোগী অগ্রগতি নিরুপণের জন্য মূল্য যাচাই কীভাবে ব্যবহার করা যায় ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষকের সুস্পষ্ট জ্ঞান ও ধারণা থাকা বিশেষভাবে প্রয়োজন। একজন শিক্ষককে এসব বিষয়গুলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে কার্যকর পাঠদান করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকা দরকার।
পাঠের ধারাবাহিক উপস্থাপন : একটি দেশ ও জাতির শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করে একটি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রেণিকক্ষ। বস্তুত শিক্ষার অবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার গুণগতমান সর্ম্পকে সবার আগে জানতে হবে। শিক্ষকগণ শ্রেণিকক্ষে যথার্থ, মানসম্পন্ন, কার্যকর পাঠদানে সক্ষম হলেই কেবল সার্থক শিখন সম্ভব হয়। বস্তুত শ্রেণিকক্ষে কার্যকরী পাঠদানের উপর শিক্ষকের সাফল্য নির্ভর করে। পাঠদান যান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। পাঠদান সম্পূর্ণ মানসিক প্রক্রিয়া।
শিক্ষকের বয়স, অভিজ্ঞতা, ধারণক্ষমতা সব কিছুই বেশি। পক্ষান্তরে শিক্ষার্থীর বয়স কম, অভিজ্ঞতা কম কিন্তু জানার আগ্রহ বেশি। শিক্ষক শ্রেণিতে একটি বিষয়বস্তু উপস্থাপনে সচেষ্ট থাকেন। তাঁর সময় সসীম। তাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিষয়বস্তুর পারস্পরিক ধারাক্রম বজায় রেখে শিখন সঞ্চালনের কাজটি সুসম্পন্ন করতে হয়। একটি পাঠের সাথে অন্য পাঠের একটি আনুক্রমিক যোগসূত্র থাকে। শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রেও একটি অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রয়েছে। এ কারণে একটি পাঠ সেই একটিতে শেষ হয়ে যায় না। অন্য পাঠের সঙ্গে তার সম্পর্ক সূত্র রচিত হয়। শিক্ষকের শ্রেণিতে পাঠ উপস্থাপন কালে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে। অন্যদিকে পাঠ্য বিষয়টিও ধারাবাহিকভাবে বিস্তৃত। শিক্ষককেও শ্রেণিতে পাঠ উপস্থাপন কালে বিষয়বস্তুর নিরিখেই তার পাঠদান কৌশল ও পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সুশৃঙ্খল উপস্থাপনার জন্য বিষয়বস্তুর বিস্তার অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে বিষয়বস্তুকে ছোট ছোট পর্বে ভাগে করে নিতে হবে শিক্ষককে। কাজেই শিক্ষককে বিষয়বস্তু ভালোভাবে পড়ে সুশৃঙ্খল উপস্থাপনের জন্য একটি সুনিদিষ্ট পর্যায়ক্রম অনুসরণ করতে হবে।
সুশৃঙ্খল উপস্থাপনের জন্য নিচের নির্দিষ্ট পর্যায়ক্রম অনুসরণ করা যেতে পারে :
শিক্ষককে পাঠে পূর্বাপর সঙ্গতি রক্ষা করতে হবে।
একটি পর্বের উপস্থাপন, মূল্যায়ন শেষে পরবর্তী পর্বের উপস্থাপন শুরু করতে হবে।
পর্ব ও পর্যায়ক্রম মেনে পরিকল্পিত পাঠ শিক্ষককে স্বাচ্ছন্দ দিয়ে থাকে এবং পাঠ ও গতি সঞ্চারিত হয়।
পর্ব ও পর্যায়ক্রম অনুসরণ করে পাঠ দিলে পাঠ বিন্যস্ত ও দৃঢ় গাঁথুনীর উপর স্থাপিত হয়।
পাঠ যৌক্তিক ধারাক্রম অনুসরণে পরিচালিত হয়।
পাঠদানের বিবেচ্য বিষয় : শিক্ষকতা পেশায় সফলতা লাভের জন্য বিষয়বস্তু শ্রেণিকক্ষে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের কাজটি শিক্ষককে নানাভাবে পূর্ব পরিকল্পিত পথে ধীরে ধীরে করতে হয়। শ্রেণিকক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য শিক্ষক বিভিন্ন করণীয় নির্ধারণ করেন। এ করণীয়গুলো শিক্ষকের প্রধান কাজ।
প্রথম পর্যায়ে শিক্ষাদানের জন্য পাঠক্রম বিন্যাস করা, এরপর আসে বিষয়মুখী বা পাঠাংশের বিন্যাস।
এই দুই ধরনের কাজ শেষেই শিক্ষকেই পরবর্তী কাজ হল শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা। এটাই হল শিক্ষকের প্রত্যক্ষ শিক্ষণমূলক কাজ। এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রয়োজন হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল নির্বাচন করে তা শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করতে হয়। উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষক সময় শ্রম বাঁচাতে প্রয়াসী হবেন। তাই পাঠদান শেষে শিক্ষক নিম্মোক্ত বিযয়গুলো পুনঃবিবেচনা করবেন:
তার পাঠদানের প্রতিটি পদক্ষেপ সঠিক ও লক্ষ্যাভিমুখী ছিল কিনা। পাঠগ্রহণে তিনি শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট সহায়তা করতে পেরেছেন কিনা। শিক্ষার্থীর সাড়া যথেষ্ট ছিল কি না। পাঠদানে পদ্ধতি ও কৌশলগুলো যথাযথ ছিল কি না।
শিখন অর্থবহ এবং কার্যকর হয়েছে কি না।
এভাবে পর্যালোচনা করা শিক্ষকের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। পাঠদান কাজটা হলো ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া। এ ধাপগুলো আবার পাঠ সমাপন থেকে আরম্ভ হওয়ার দিক তাকিয়ে দেখতে হয় : কোন কোন পথ বেয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছে।
এই পথপরিক্রমায় কি কি বাধা ছিল? বাধাগুলো কিভাবে অতিক্রম করা হলো? সাফল্যের উপাদানগুলো কী কী? ভবিষ্যতে এই কাজটি আবারো করলে কী কী সংযোজন বা বিয়োজন করা যাবে।
যে ধাপে শিখনফল অর্জিত হয়নি বলে প্রতিয়মান হবে, তখন সে অংশগুলো আবার পুনরালোচনায় প্রাধান্য দিতে হবে। এভাবে শিক্ষক তার শ্রেণিতে গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে নিয়মিত মূল্যায়ন করে অগ্রসর হবেন। পিছনে ফিরে তাকানোর ফলে নিজের ভুলক্রটি আবিষ্কার করবেন এবং গ্রহণ বর্জনের মাধ্যমে তার পাঠদানের দক্ষতাও অব্যাহত ভাবে উন্নত থেকে উন্নতর পযায়ের পৌঁছাবে। এ পদক্ষেপ পর্যালোচনার কাজটি একজন সৃজনশীল শিক্ষক পাঠদানকালীনও করবেন। যদি তিনি মনে করেন শ্রেণিতে তার গৃহীত পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের সক্রিয় শিক্ষনে আগ্রহী করেছেন তখন তিনি পদ্ধতি কৌশল তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তন করে পাঠকে স্থবিরতার হাত থেকে মুক্তি দিয়ে গতিশীল করে তুলবেন। পদক্ষেপ পর্যালোচনার এ ধারা শিক্ষককে সফল শিক্ষককে পরিণত করে এবং এটি একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে কোনো কাজেই পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। তাই জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই বিভিন্ন কাজে পরিকল্পনা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণের গুরুত্ব আরো বেশি। কারণ শিক্ষাদান কার্যে শিক্ষককে শিক্ষার্থীর মন মানসিকতা, শিক্ষণীয় বিষয়, শিক্ষাদান কৌশল এই তিনটি উপাদানের প্রতি নজর রেখে সঠিক শিক্ষাদান পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। শিক্ষার্থীর বয়স, সামর্থ ও অভিরুচির বিষয়টিও স্বততই বিবেচনায় রাখতে হয়।
নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীর শিখনফল অর্জন ও তা মূল্যায়নের সামগ্রিক কাজ সম্পন্ন করার জন্য বিষয়বস্তুর কতটুকু অংশ উপস্থাপন করা যাবে শিক্ষক তা স্থির করবেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখতে অংশগ্রহণমূলক শিখন পদ্ধতি অনুসরণ অপরিহার্য। সে উদ্দেশ্য শিক্ষক যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন সেগুলো হলো শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস (ছোট থেকে বড়, যেন শ্রেণিতে উপস্থিত সকলেরই শিক্ষক, বোর্ড, প্রদর্শিত উপকরণ ইত্যাদি সবই দৃষ্টিগোচর হয়।)
দলীয় কাজ বা জোড়ায় কাজ করার জন্য সুবিধাজনকভাবে শিক্ষার্থীদের আসনবিন্যাস।
জেন্ডার সচেতনতা অনুসরণে আসন বিন্যাস। ছেলে ও মেয়েদের পৃথক সারিতে না বসিয়ে পাশাপাশি এবং মিলেমিশে বসার সুযোগ তৈরি করতে হবে। দলীয়ভাবে বা জোড়ায় কাজ করার সময় তারা যেন পারস্পরিক ভাব-বিনিময়ের সুযোগ পায়। এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
শ্রেণিতে অল্প মেধা ও বেশি মেধা বা কম মনোযোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পারিক ভাব-বিনিয়ম অত্যন্ত জরুরি একটি পদক্ষেপ। এ উদ্দেশ্যে উভয় প্রকৃতির শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এবং মিলেমিশে বসার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
শিক্ষণ-শিখন কৌশল : শিক্ষণ শেখানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। কাজটি শ্রেণিকক্ষে যিনি যত সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারেন, তিনি তত দক্ষ শিক্ষক। আর এজন্য শিক্ষককে পাঠদানের পূর্বে পাঠদানের কলাকৌশল সম্পর্কে গভীরভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এটাই কাম্য। শিক্ষার্থীর সত্রিুয়তার উপর পাঠদানের আধুনিক কলাকৌশল নির্ভরশীল। যিনি শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা অর্জনে বেশি পারদর্শী তিনি তত ভালো শিক্ষক। বিষয়বস্তুর উপর শিক্ষকের পাণ্ডিত্য ও দক্ষতার ওপর পাঠদান কলাকৌশল যেমন নির্ভর করে, তেমনি শিক্ষার্থীর বয়স, মেধা, আগ্রহ ও গ্রহণ ক্ষমতার ওপর ও পাঠদানের কলাকৌশল নির্ভর করে। আধুনিক উপকরণ সমৃদ্ধ উন্নত পরিবেশ ও উচ্চ বৃদ্ধির শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণি পাঠদানের যে কলাকৌশল হবে অনুন্নত পরিবেশ ও দূর্বল পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর জন্য নিশ্চয়ই আলাদা কলাকৌশল প্রয়োগ করতে হবে। তাই একজন যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষককে শ্রেণি পাঠদানের পূর্ব চিন্তা করতে হবে তিনি কাদেরকে পাঠদান করবেন, শেখাবেন? কেন শেখাবেন? কি শেখাবেন? কিভাবে শেখাবেন? কখন শেখাবেন? এবং কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এ সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য একজন যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক শ্রেণি পাঠদানের ক্ষেত্রে নিম্মোক্ত কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন :
শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করবেন। শিক্ষার্থীরা পাঠে অংশগ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে তাদের বয়স মেধা ও গ্রহণ ক্ষমতা বিবেচনায় আনতে হবে। তাই শিক্ষককে জানতে হবে তিনি কোন শ্রেণির শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন।
পাঠদানের শিখনফল কি হবে এসব শিক্ষককে অনুধাবন করতে হবে; পাঠদানের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীর গ্রহণ উপযোগী হতে হবে। বয়সের তুলনায় জটিল বিষয় হলে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করবেন তা পূর্বে থেকে নির্ধারণ করতে হবে।পাঠদানে মাঝে মাঝে বৈচিত্র্য আনতে হবে।
শিক্ষক কখন পাঠদান করবেন এবং কত সময় যাবৎ পাঠদান করবেন এটা পূর্ব নির্ধারিত হতে হবে। একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীর সার্বিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা জানতে হবে। শিখনফল অর্জিত হয়েছে কিনা শিক্ষক মূল্যায়নের মাধ্যমে বিচার করবেন।
শ্রেণি ব্যবস্থাপনা : গতানুগতিক ধারায় শিক্ষকই শ্রেণিকক্ষকে নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। কিন্তু আধুনিক শিক্ষণ ও শ্রেণিকক্ষ পাঠদান ব্যবস্থাপনায় (এ প্রবন্ধের শেষের দিকে আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতিতে পাঠদান ব্যবস্থাপনার কিছু কৌশল আলোচনা করা হয়েছে)। শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয়ের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পাঠদান করা হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে শিক্ষক শিক্ষার্থী আলোচনার মাধ্যমে পাঠের উদ্দেশ্য, শিখনফল, পাঠদান পদ্ধতি, মূল্যায়ন ইত্যাদি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা এককভাবে, জোড়ায় ও দলীয় কাজের মাধ্যমে মতামত উপস্থাপন করার সুযোগ পায়। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের ফলে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব, বিশ্বাস, আস্থা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে ওঠে। পাঠ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষক কিভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন, শিখন-শেখানো কার্যাবলি কেমন হবে, যথাযথ উপকরণের ব্যবহার কেমন করে করবেন, মূল্যায়ণ কিভাবে করবেন তা জানা আবশ্যক এবং নিম্মোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী ফলপ্রসূ পাঠদান করা যেতে পারে-
শিক্ষকের প্রস্তুতি : (ক) পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন (খ) শ্রেণি ব্যবস্থাপনা ও শ্রেণি বিন্যাস করবেন (গ) বিষয় বস্তুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও প্রেষণা সৃষ্টি করবেন।
শিখন- শেখানো কার্যাবলি : (ক) বিষয়বস্তু উপস্থাপন/আলোচনা করবেন আকর্ষণীয়ভাবে, প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে (খ) সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে (গ) বিষয় সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের গভীরতা থাকতে হবে (ঘ) যথাযথ শিখন-কৌশলের ব্যবহার করতে হবে। (ঙ) পাঠে একঘেয়েমি পরিহার করে পাঠদানে বৈচিত্র্য আনতে হবে (চ) পাঠের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে (ছ) প্রশ্ন করার কৌশল, ধারাবাহিকতা ক্রমোচ্চ কাঠিন্যমান রক্ষা করতে হবে (জ) শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা সাড়া প্রদান করবে। শিক্ষক ফিডব্যাক দিবেন (ঝ) শিক্ষক শিক্ষর্থীর পারস্পারিক ক্রিয়া অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে (ঞ) শিক্ষকের প্রফুল্লতা ও রসবোধ থাকতে হবে (ট) শ্রেণি উপযোগী কণ্ঠস্বর ও উচ্চারণের বিশুদ্ধতা থাকতে হবে (ঠ) শ্রেণি উপযোগী কণ্ঠস্বর ও উচ্চারণের বিশুদ্ধতা থাকতে হবে (ঠ) শ্রেণি কক্ষে চলাচল ও দৈহিক ভাষার প্রয়োগ করবেন।
উপকরণের ব্যবহার : (ক) সঠিক সময়ে উপকরণ প্রদর্শন করবেন (খ) ব্যবহৃত উপকরণের যথার্থতা থাকবে (গ) প্রদর্শনের পর উপকরণ সরিয়ে রাখবেন (ঘ) চকবোর্ডের/হোয়াইট বোর্ডের যথাযথ ব্যবহার করবেন।
মূল্যায়ন : (ক) শিখন ফলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্নের প্রয়োগ করবেন (খ) প্রত্যাশিত শিখনফল অর্জনে সফলতা পরিমাপ করবেন (গ) প্রয়োজনে বাড়ির কাজ প্রদান করবেন (ঘ) সময় ব্যবস্থাপনা মেনে চলবেন (ঙ) ধন্যবাদ দিয়ে ক্লাস শেষ করবেন।
সুষ্ঠু শিক্ষাদান পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য : সুষ্ঠু, বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুক্তিপূর্ণ শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। প্রশ্ন আসে, কি কি বৈশিষ্ট থাকলে শিক্ষাদান পদ্ধতিকে সার্থক বলা যায়? এর উত্তরে বলা যায়- পদ্ধতি হবে লক্ষ্য ভিত্তিক। প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিয়ে লক্ষ্যের অনুকূলে বিষয়বস্তু উপস্থাপন ও লক্ষ্যে পোঁছাবার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সর্বশেষ লক্ষ্য অর্জন নির্ণয়ের জন্য যথাযথ মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রয়োগকে একটি সুষ্ঠু রূপদান করে। সুষ্ঠু নীতির উপর ভিত্তি করে সুপরিকল্পিত পদ্ধতি প্রয়োগ হতে হবে। জানা থেকে অজানা, বাস্তব থেকে অবাস্তব, মূর্ত থেকে বিমূর্ত, বিশ্লেষণ থেকে সংশ্লেষণ ইত্যাদি হল সুষ্ঠু পদ্ধতি প্রয়োগের নীতি। প্রয়োজন নীতির অন্যথা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটি নির্ভর করে শিক্ষকের দূরদৃষ্টি, প্রজ্ঞা ও কল্পনা শক্তির উপর। শিশু যা শিখে তাই তার আচার-আচরণে রূপান্তরিত হয়ে জীবনের প্রতিক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়। তাই শিক্ষার্থীর বয়স, সামর্থ, আগ্রহ, ইচ্ছা ও অভিরুচি অনুযায়ী শিক্ষাদান কার্য পরিচালনা করা বাঞ্চনীয়। সুতরাং পদ্ধতি হবে মনোবিজ্ঞান ভিত্তিক। উত্তম পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হল শিক্ষার্থীর মনকে যুক্তি ও চিন্তাধর্মী করে তোলা। শিক্ষার্থী যত বড় হতে থাকে, তার ভিতর ধীরে ধীরে যুক্তি ও বিচারবুদ্ধিও তত জাগ্রত হয়।
সার্থক শিক্ষাদান পদ্ধতি ব্যক্তি ও শ্রেণি উভয়কেই প্রাধান্য দেয়। একজন সার্থক শিক্ষক ব্যক্তি বিশেষের বিভিন্নতার দিকে যেমন খেয়াল রাখেন, তেমনি সমগ্র শ্রেণির প্রতি তার দৃষ্টি সদা জাগ্রত থাকে। স্বল্প মেধা, গড় মেধা এবং উচ্চ মেধা এই তিন শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর প্রতি সমান দৃষ্টি রেখেই তাকে শিক্ষাদান করতে হয়।
শিক্ষাদান পদ্ধতি : সুষ্ঠু শিক্ষাদান পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য জানা থাকলে একজন শিক্ষকের শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হয়। কারণ পাঠদানের কলাকৌশলের মধ্যে অন্যতম উপাদান হল শিক্ষাদান পদ্ধতি। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে সক্রিয় করেন এবং তথ্য সরবারাহ ও বিনিময় করেন। শিক্ষাদান পদ্ধতি একদিকে বিজ্ঞানধর্মী এবং অপদিকে সৃজনশীল শিল্পকলা। এ দুয়ের মাঝে সংযোগ সাধনের মধ্যে রয়েছে পদ্ধতি প্রয়োগের সার্থকতা। সেই সঙ্গে নিজ চিন্তা, যুক্তি ও বিবেচনা দিয়ে পদ্ধতিকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে মুহূর্তেই জানা যায় পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের ঘটনাপ্রবাহ। কাজেই শিক্ষাকে নতুনভাবে রূপ দেবার এবং পদ্ধতিকে নতুনভাবে সাজাবার সময় এসেছে। পাঠদানে বৈচিত্র্য আনয়ন করা বা উপযুক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা একজন শ্রেণি শিক্ষকের অন্যতম কাজ। পাঠদানে বৈচিত্র আনয়নের জন্য কার্যকর কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে শিক্ষক- শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞাতা কাজে লাগিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন। দলীয় কাজ, দলীয় আলোচনা, ব্রেইন স্ট্রর্মিং , প্রশ্ন উত্তর , Expert jigsaw ইত্যাদি এ পদ্ধতির উপাদান। অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে শিক্ষাদানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং দ্বিমুখী যোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষাদান পরিচালিত হয়। এ পদ্ধতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমান অংশগ্রহণের মাধ্যমে পাঠদান তাৎপর্যমণ্ডিত হয় এবং সফল সমাপ্তি ঘটে। এ পদ্ধতি জীবন সম্পৃক্ত এবং শিক্ষার্থী নিজেকে সঠিকভাবে বিকাশের সুযোগ পায় এবং দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত হয়।
মিথষ্ক্রিয়ামূলক পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীকে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। বিজ্ঞান বিষয়ক ব্যবহারিক ক্লাশে এ পদ্ধতি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় কারণ এ পদ্ধতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক আলাপ আলোচনাকে গুরূত্ব দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে উৎসাহ, সাহস ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় এবং পাঠে আগ্রহী হয়ে ওঠে। শিক্ষক তাঁর বন্ধুতের হাত বাড়িয়ে দেন ফলে শিক্ষণ শিখনে বৈচিত্র্য নিয়ে আসা যায়। বাংলাদেশে আধুনিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে এ পদ্ধতি ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে। এ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে মাটি ও মানুষের সাথে শিক্ষার সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং একজন শিক্ষকের এ পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
সহযোগিতামূলক পদ্ধতি : সহযোগিতামূলক পদ্ধতিতে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবেন। শিক্ষণ-শিখন যাবতীয় কর্মকা- পরিচালনা করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক এখানে Facilitator ev Moderator হিসেবে তাদের পাঠদানে সহায়তা করেন মাত্র। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে তাদের চিন্তা, চেতনা, জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে প্রদত্ত সমস্যা বিশ্লেষণ করতে পারে। সমাধানের জন্য নিজেরা পরিকল্পনা ও সিন্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। এখানে শিক্ষার্থীর ভুলকে তিরষ্কার না করে সংশোধন করা হয় এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রয়োগমুখী রাখতে সচেষ্ট হবেন। শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞাতার আলোকেই নতুন কিছু শিখতে পারে ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটতে পারে।
শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে শিক্ষক কতটুকু জানেন সেটা বড় কথা নয়, শিক্ষার্থী কতটুকু জেনেছে বা জানার মধ্যে কোনো ক্রটি আছে কি না সেটা বড় কথা। পাঠদানে শিক্ষকের অংশগ্রহণ থাকে (৫-১০ শতাংশ ) সহায়কের। কোথাও কোনো ভুলক্রটি হলে শিক্ষক শুধু ভুল সংশোধন করেন। পাঠদান শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ৯০-৯৫ শতাংশ।
সুতরাং সুষ্ঠু পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক উপরিল্লিখিত পদ্ধতি সমন্বয় করে পাঠদান করলে শিক্ষার্থীরা পাঠে আগ্রহী হবে এবং যৌক্তিক চিন্তার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবেন। ফলে পাঠদান কার্যক্রম সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে।
উপসংহার : শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম একটি উন্নত ধরনের শিল্প। শিক্ষকতা একটি পেশা নয় এটি একটি ব্রত। এই মহান পেশায় যারা নিয়োজিত তাদের চৌকস ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের হতে হবে। একজন সফল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গরূপে অনুধাবন করবেন। সময় সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। শ্রেণির পরিবেশ ও শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থাকে ভালভাবে উপলব্ধি করবেন। শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা জন্য তিনি বহুবিধ কৌশল সম্পর্কে জানবেন। পদ্ধতি উদ্ভাবন করবেন। সর্বোপরি তিনি শিক্ষার্থীর মানসিক উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য পাঠদানে বৈচিত্র আনবেন। তাহলে আশা করা যায় গুণগত শিক্ষা সম্পাদনের মাধ্যমে একটি নৈতিকতা, মূল্যবোধ সম্পন্ন সুন্দর জাতি গঠনের দীর্ঘ্য দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
লেখক : অধ্যাপক ও পরিচালক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।