
সাহাবুদ্দীন আহমদ
এক
পেছন ফিরে এটা একটা উপন্যাসের ঘটনা বলেই মনে হয়। একজন ব্যক্তিমানুষের ইচ্ছের কাছে নতজানু হতে হয়েছে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে। যদিও এখানে অতি ক্ষমতাবান ব্যক্তি মানুষ ছাড়া সাধারণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা খুব একটা গুরুত্ব পায় না। কি পরিবারে, কি রাষ্ট্রে ব্যক্তি মানুষ বরাবরই তুচ্ছ। এ-ভূখণ্ডে বরং বড় হয়ে ওঠে দল বা গোষ্ঠীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা। দল বা গোষ্ঠী যিনি চালান, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা এখানে অনেক জোরদার।
আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই এই দৃশ্য উপস্থিত। রাজনৈতিক, সামাজিক সংস্কৃতিতে আমরা গুরুত্ব দেই সেই ব্যক্তির ইচ্ছাকে, যার অঙ্গুলি হেলনে চলে গোষ্ঠী বা দল। অথচ এই দেশেই একদিন একজন ব্যক্তি মানুষের ইচ্ছা পূরণেরই জন্য দেশের সংবিধান সংশোধন করতে হয়েছে। মানুষটি কোনো রাজনৈতিক নেতা নন। তাঁর পেছনে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন ছিল না। ব্যাপক জনভিত্তিও তার শক্তির উৎস ছিল না। কোনো বড় দল বা গোষ্ঠীর নেতাও তিনি নন। সামাজিকভাবে অত সংঘবদ্ধতাও তার ছিল না। অথচ দেশের সব রাজনৈতিক দলকে শাব্দিক অর্থেই বো-ডাউন করতে হয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত চাওয়ার কাছে। সেই অর্থে মানুষটি দেশের সব প্রতিষ্ঠানের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিলেন।
আজও সেই বিতর্ক চলমান আছে, একজন মানুষ কি প্রতিষ্ঠানের চেয়েও বড় যে তাঁর ইচ্ছা পূরণের জন্য দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে? বিতর্ক যাই থাক, ইতিহাসের পাতায় এই ঘটনা লেখা হয়ে গেছে, একদিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ এমন জায়গা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল, যেখানে একজন অরাজনৈতিক পেশাজীবী মানুষের সব শর্ত মেনেই রাজনৈতিক সব দল ও গোষ্ঠী বাধ্য হয়েছিল, রাষ্ট্রের সংবিধানে সংশোধনী আনতে। সেই মানুষটি ছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ, যিনি দেশের ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতির পূর্ণকাল কাটাতে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে আবার ফিরে গিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতির স্বপদে।
ইতিহাসের এই কালপর্ব বাংলাদেশের রাজনীতির যাত্রাপথের একটা খুবই বড় বাঁকবদলের ঘটনাও। এই ঘটনাসমূহে ঢোকার আগে বরং আমরা সংবিধানের সেই আলোচিত ও আলোড়িত সংশোধনীর দিকে একটু চোখ বোলাতে পারি। এই সংশোধনীটি সংবিধানের একাদশ সংশোধনী নামে পরিচিত। পারিভাষিকভাবে এই আইন সংবিধান (একাদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯১ নামে অভিহিত।
সংবিধান (একাদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯১ পাস হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট। এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগদান বৈধ ঘোষণা করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদর প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে যাবার বিধান পাস করানো হয় এই সংশোধনীতে। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মির্জা গোলাম হাফিজ উত্থাপিত বিলটি জাতীয় সংসদে ২৭৮-০ ভোটে পাস হয়। এ বিলটি সরকারি ও বিরোধী দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে পাস হয়। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ১০ আগস্ট ১৯৯১।
এ আইনবলে সংবিধানের চতুর্থ তফসিল সংশোধন করা হয় এবং তাতে ২১নং নতুন প্যারাগ্রাফ সংযুক্ত করা হয়। এই প্যারাগ্রাফ বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি পদে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নিয়োগ ও শপথ গ্রহণ এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর নিকট রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের পদত্যাগ পত্র পেশ, এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস কর্তৃক ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণকে বৈধতা দান করে। এই সংশোধনী আইন ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর সময়কালের মধ্যে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে উপ-রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রয়োগকৃত সব ক্ষমতা, প্রবর্তিত সব আইন ও অধ্যাদেশ, জারিকৃত সব আদেশ ও আইন এবং গৃহীত সব পদক্ষেপ ও কার্যপ্রণালিকে অনুমোদন দেয়, নিশ্চিত করে ও বৈধতা দেয়।
দুই
এই ভূ-খণ্ডের রাজনৈতিক যাত্রাপথ বহু চড়াই-উৎরাই পথ পেরিয়ে স্বাধীনতার পর গণতান্ত্রিক, একদলীয়, সামরিক-স্বৈরশাসকের কালপর্বে পা রাখে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর। সামরিক স্বৈরশাসন কাল পর্বে আমাদের রাজনীতির মান ও নৈতিকতাকে বহু ভাংচুরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয় এবং অবশেষে জনগণের লড়াই তাতে একটা উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। বহুপক্ষীয় ও বহু বিশ্বাসের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থ ও লাভ বিবেচনায় নিয়েও এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, সামরিক স্বৈরশাসনের তথাকথিত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথও রাজনীতির জন্য কল্যাণকর নয়। রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক মহলেরও দৃষ্টি কাড়ে। তারা দ্রুত সামরিক স্বৈরশাসকের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে, সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের বহু বছরের শাসন পালাবার পথ খুঁজে নিতে বাধ্য হয়। দেশের অভ্যন্তরেও রাজনৈতিক রসায়ন অন্যমাত্রা পায়। ১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে এরশাদবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা লাভ করে এবং দ্রুত চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। ৮ দল, ৭ দল ও ৫ দল সমর্থিত ২২টি ছাত্র সংগঠন ১০ নভেম্বর ১৯৯০ সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য নামে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়। ইতিমধ্যে এরশাদ ও তার সরকারের পদত্যাগ এবং একজন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি ফর্মুলা আসে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ হতে। এটি আন্দোলনের তিন জোট ৮ দল, ৭ দল ও ৫ দল কর্তৃক গৃহীত হয়। ১৯ নভেম্বর ১৯৯০ ঘোষিত হয় ‘তিন জোটের রূপরেখা’ খ্যাত একটি অভিন্ন ঘোষণা। এরপর রাজনীতির জল আরও ঘোলা হয়। রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে। আহত-নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়ে উঠতে থাকলে শেষাবধি আমলাতন্ত্রের বড় অংশ রাজপথে নেমে আসে এরশাদের বিরোধিতায়। ছাত্র-শিক্ষক- সর্বস্তরের জনতার সংঘবদ্ধতায় সংঘটিত হয় এরশাদবিরোধী ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থান। ৪ ডিসেম্বর ১৯৯০ সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ দীর্ঘ দিনের ক্ষমতার মসনদ ছাড়তে বাধ্য হন, ঘোষণা আসে তার পদত্যাগের। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদ পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা হয়। ওই দিনই রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করে নবনিযুক্ত উপরাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাহাবুদ্দীন আহমদ সরকারপ্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ১৯৯০ সালের ৯ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের কাছে শপথ গ্রহণ করেন এবং ১৯৯০ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথম সভা করেন। নিরপেক্ষ অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদের একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করেন। নির্বাচনের পরে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে সুপ্রিম কোর্টে ফিরে যান। ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই তিনি আওয়ামী লীগের দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদে মনোনয়নের পর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। যদিও সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই সীমিত, তথাপিও তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার সততা এবং প্রজ্ঞা দ্বারা বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান জয় করেন। ১৪ই নভেম্বর, ২০০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
তিন
এখন দেখা যাক, কে এই বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ? তাঁর সামাজিক, পেশাগত অবস্থান কী এমন ছিল, যাতে তিনি জাতির জীবনে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন? অবশ্য এই আলোচনায় যাবার আগে এটা স্বীকার করতেই হবে, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে সুদীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। বলা যায়, বাংলাদেশের ইতিহাসের তিনিই হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্বপালনকারী দ্বিতীয় মানুষ। দেশের ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি হিসেবে সাহাবুদ্দীন আহমদের মেয়াদকাল ছিল ০১ জানুয়ারি ১৯৯০ থেকে ৩১ জানুয়ারি ১৯৯৫। তার চাইতে বেশি সময় ১২ এপ্রিল ১৯৮২ থেকে ৩০ নভেম্বর ১৯৮৯ সময়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দেশের চতুর্থ প্রধান বিচারপতি ফজলে কাদেরী মোহাম্মদ আবদুল মুনিম। আবার বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবেও ৯ অক্টোবর ১৯৯৬ থেকে ১৪ নভেম্বর ২০০১, পাঁচ বছর ৩৬ দিন তাঁর দায়িত্ব পালন করেন।
দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি হিসাবে পূর্ণ মেয়াদ পালনকারী সাহাবুদ্দীন আহমদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার পেমল গ্রামে। তাঁর পিতার নাম তালুকদার রেসাত আহমদ ভূঁইয়া। সাহাবুদ্দীন আহমদ নান্দাইলে তাঁর বোনের বাড়িতে বড় হন।
১৯৪৫ সালে নান্দাইলের চণ্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে (সম্মান) স্নাতক এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথমে লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমি এবং পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
সাহাবুদ্দীন আহমদের কর্মজীবনের সূচনা প্রশাসন ক্যাডারে ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে। তিনি গোপালগঞ্জ ও নাটোরের মহকুমা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৬০ সালের জুন মাসে তাঁকে বিচার বিভাগে বদলি করা হয়। মাত্র ছয় বছর প্রশাসনের নির্বাহী বিভাগে তাঁর চাকরির সমাপ্তি ঘটে বিচার বিভাগে বদলীর মাধ্যমে।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ঢাকা ও বরিশালে কাজ করেন। জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি তাঁকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারক পদে উন্নীত করা হয়। তিনি প্রেষণে নিযুক্ত হয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯৭৩-৭৪)। এরপর বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সাহাবুদ্দিন আহমদকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করা হয়। ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে যোগদান করেন। ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি হিসাবে সাহাবুদ্দীন আহমদের মেয়াদকাল ছিল জানুয়ারি ১৯৯০ থেকে জানুয়ারি ১৯৯৫।
১৯৭৮ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন। ওই ঘটনায় কয়েকজন ছাত্র নিহত এবং বহু ছাত্র আহত হয়। কিন্তু ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও তৎকালীন সরকার কর্তৃক এই তদন্ত প্রতিবেদন কখনোই সাধারণ্যে প্রকাশ করা হয়নি। ১৯৮৪ সালে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ।
চার
সাহাবুদ্দীন আহমদের বর্ণাঢ্য পেশাজীবন নানাকারণে ব্যতিক্রমী। তিনি শুধু প্রধান বিচারপতির স্বপদে ফেরার জন্য সংবিধান সংশোধন করেই ক্ষান্ত হননি, সব সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পেশাজীবনে মিডিয়ার পাদপ্রদীপ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন সযত্নে। অতিবচনে ভারাক্রান্ত করেননি জনগণকে। তাঁর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, জেলাপ্রীতি, আঞ্চলিকতাপ্রীতির কোনো অভিযোগ মেলেনি কখনই। ৩৫ বছরের বিচারিক জীবনে এক অদ্ভুত নির্মোহতায় নিজের কাজটিই করে গেছেন সকল চাপ-প্রলোভন উপেক্ষা করে। ছুৎমার্গীয় আর্থিক সততা ও কেতাবি মিতব্যয়িতা তাঁর পুরো জীবনকে এক জীবন্ত মিথে পরিণত করেছে। তিনি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিলেন, ব্যক্তিগত সততা ও কর্মকুশলতায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানকে বড় করার উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটা খুব একটা পরিলক্ষিত হয়নি। যদিও সীমিত ক্ষমতার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে রাষ্ট্রপতি নামের প্রতিষ্ঠানকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হয়েছিলেন, বিরাগভাজন হয়েছিলেন দলীয় সরকারের। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে চেয়েছেন সর্বক্ষণ কিন্তু প্রয়োজনে জাতির ক্রান্তিলগ্নে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কুন্ঠাবোধ করেননি। লোকনিন্দা বা পরনিন্দার তোয়াক্কা না করে, পরের প্রশংসার লোভাতুর আকুতি উপেক্ষা করেই নিজের বিবেককে সমুন্নত রেখেছেন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে। সে হিসাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীক ইতিহাসে বিরল মানুষদের একজন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ।
সাহাবুদ্দীন আহমদ প্রশাসনের নির্বাহী বিভাগে কর্মজীবন শুরু করলেও তাঁর পেশাগত জীবনের পুরোটাই কাটে বিচার বিভাগে। সাহাবুদ্দীন আহমদ ঔপনেবেশিক আমলের শেষ সময়ের প্রতিনিধি হিসাবে প্রশাসন ক্যাডারে জয়েন করেন। সেসময় প্রশাসনের নির্বাহী বিভাগ থেকে অনেককেই বিচার বিভাগে পাঠানো হতো; কিন্তু সেটা ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। তাছাড়া কলোনিয়াল যুগের ধরনে গড়ে ওঠা প্রশাসন ক্যাডার ছিল ক্ষমতায়, সামাজিক প্রতিপত্তিতে, আর্থিক মানদণ্ডে জৌলুসময়। বিচার বিভাগে সেসময় প্রশাসন ক্যাডারের কারো পোস্টিংকে এক ধরনের পানিশমেন্ট পোস্টিং হিসাবেই বিবেচনা করা হতো; কিন্তু সাহাবুদ্দীন আহমদ তাঁর ছয় বছরের প্রশাসনের নির্বাহী বিভাগের কর্মজীবনের স্মৃতিকে পেছনে ফেলেই বিচার বিভাগের প্রেমে পড়েছিলেন। তিনি আর নির্বাহী বিভাগে ফেরত আসেন নাই। তাঁর একাডেমিক লেখাপড়ার ক্ষেত্র ছিল মূলত অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জনপ্রশাসন বিষয়ে’ কিন্তু জুডিশিয়াল জগতেই তিনি স্বস্তি বোধ করতে থাকেন। বিচার বিভাগের পেশাগত জীবনে যে নির্মোহতা, নিরপেক্ষতা, জনবিচ্ছিন্নতা, ছুৎমার্গীয় আর্থিক সততা, বিষয়গত বুৎপত্তিকে আদর্শস্থানীয় বলে ধরা হতো-তারপ্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন চূড়ান্ত রকমের নিমগ্ন মানুষ। ফলে, বিচার বিভাগের কর্মজীবনে তাঁর প্যাশন ও ভালোবাসা সত্যি সত্যিই নিখাদ ছিল। হয়তো সে কারণেই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে অবসরে যাওয়ার চাইতে, প্রধান বিচারপতি হিসাবে স্বপদে ফিরে মূল পেশাগত জীবনের অবসর নিতেই তিনি এমন গোঁ ধরেছিলেন। যে কারণে সংবিধান সংশোধন করাতেও তাঁর জেদ বজায় রেখেছিলেন।
বিচার বিভাগে তাঁর কর্মজীবন ছিল প্রায় ৩৫ বছরের। এর মধ্যে মাত্র ৭ বছর জেলা আদালতে কাটিয়েছেন। ২৮ বছর তাঁর কেটেছে উচ্চ আদালতে। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার একটি উচ্চতরপ্রশাসনিক পদ। সে পদে ছিলেন পাঁচ বছর। হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে আট বছর, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দশ বছর এবং প্রধান বিচারপতি হিসেবে পাঁচ বছরের কর্মজীবন তার। বোঝা যায় বিচারকের এক পূর্ণ জীবন পেয়েছেন তিনি। বিচারপতি হিসেবে তাঁর প্রদত্ত বহুসংখ্যক রায় আলোচিত। চাকরি সংক্রান্ত বিষয়, নির্বাচনী বিরোধ এবং শ্রমিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক বিষয়ে তাঁর প্রদত্ত কিছু রায় উচ্ছ্বসিত প্রশংসা লাভ করে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৮ম সংশোধনীর ওপর তাঁর প্রদত্ত রায় দেশের শাসনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।
সাহাবুদ্দীন আহমদ আমাদের পেশাজীবীদের মধ্যে গুটিকতক বিরল মানুষদের একজন, যিনি পেশাজীবনের সকল নীতিকে আক্ষরিক অর্থেই মান্য করে চলেছেন। ভক্তি বা ভাবে, কখনই প্রজাতন্ত্রের নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করেননি। আবার তাঁর নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরে যেয়ে অতিরিক্ত কোনো কর্মকাণ্ডও করেননি। ক্রিকেটের পরিভাষায় বলা চলে, অনেকটা কপিবুক ক্রিকেটের নীতি ছিল তাঁর চাকরীজীবনের সর্বত্র। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ হাইকোর্টের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদ, রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন। অথচ ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলেই তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পান। ১৯৭১ সালে তাঁর কোনো কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি।
১৯৯০ সালে সামরিক শাসনের অবসানে বাংলাদেশ যখন গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে পা রাখতে যাবে, তখন ক্ষমতার হস্তান্তর, নির্বাচন অনুষ্ঠান এসব দায়িত্ব পালনে সাহাবুদ্দীন আহমদের দীর্ঘ পেশাজীবনের সততা ও নিরপেক্ষতা এতটাই প্রশ্নাতীত ছিল যে, তাঁর কোনো বিকল্প নাম আর আসে নাই। অধিকন্তু তাঁর দেয়া শর্তকেই মানতে হয়েছে রাজনৈতিক সব পক্ষকে। ১৯৯১ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছিল সেটা দেখলেও প্রমাণ মেলে সাহাবুদ্দীন আহমদ কতটা নিরপেক্ষতা কিন্তু গুণগত উচ্চতা বজায় রেখেছিলেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে সেই নির্বাচনে তারা সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল। তারপরও পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সাহাবুদ্দীন আহমদকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। কেননা দীর্ঘ দিন পর ক্ষমতায় বসে আওয়ামী লীগের দরকার ছিল এমন একজন মানুষকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাওয়া, যিনি প্রকৃতপক্ষেই যে কোনো সাংবিধানিক কিংবা রাষ্ট্রীক বিপদে আওয়ামী লীগকে সুরক্ষা দেবেন। সাহাবুদ্দীন আহমদ সেই নির্ভরতায় চিড় ধরাননি। তবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, রাজনীতিতে ও রাষ্ট্রে সুসংহত হয়ে উঠলে সাহাবুদ্দীন আহমদের ব্যাকরণনিষ্ঠ নীতিবাগিশতায় বিরক্ত হয়ে ওঠে। সংবিধানে ক্ষমতা সীমিত হলেও রাষ্ট্রপতি হিসাবে সাহাবুদ্দীন আহমদের নৈতিক অবস্থান আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তি বয়ে আনে। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জননিরাপত্তা আইন নামের একটি বিতর্কিত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত নীতিভঙ্গ করায় সই করেননি। সেকারণে তার সঙ্গে তৎকালীন সরকার এবং আওয়ামী লীগের তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। সেই সম্পর্কের আর উন্নতি হয়নি।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ বিবিসি রেডিওতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছিলেন, “সাহাবুদ্দীন আহমদকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগই রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিল। ওই সময়টায় আমরা দেখেছি, এটি (প্রেসিডেন্ট পদটি) দলের বাইরে গেলে অসুবিধা হয়।...রাষ্ট্রপতি এবং যে দল ক্ষমতায় থাকবে, তাদের মধ্যে যদি সমঝোতা বা বোঝাপড়া না থাকে, তাহলে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হতে পারে ... বিষয়টা সরকারের জন্য আমি বলব বাঞ্ছনীয় নয়।”
সাহাবুদ্দীন আহমদের আর্থিক সততা নিয়ে অনেক ধরনের গল্প চালু আছে। কিছুটা ছুৎমার্গীয় ধরনের সততা অনেক সময় তাঁর নীতিবান সহকর্মীদেরও বিপত্তিতে ফেলেছে কিন্তু তিনি তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেননি। পদ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই নীতির পরিবর্তনের কোনো নজিরও পাওয়া যায় না। বিচারবিভাগের বড় অধিকর্তাদের একধরনের পাবলিক লাইফের প্রতি মোহ দেখা যায়। সাহাবুদ্দীন আহমদ এইক্ষেত্রে কলোনিয়াল যুগের নীতিনিষ্ঠতা বজায় রেখেছিলেন কঠোরভাবে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রচারপ্রিয় পাবলিক ফিগার হবার কোনো আকাঙ্ক্ষাই কখনো দেখা যায় নাই তার মধ্যে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে অবসরের পরও লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন, মিডিয়ার সকল আকুতি সত্ত্বেও।
পাঁচ
লেখাটি শুরু করেছিলাম বাংলা ভাষার শক্তিমান কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৩-১৯৫৫) রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘ধর্মে আছ জিরাফেও আছ’ শিরোনামের অনুকরণে প্রায় প্রবাদে পরিণত হওয়া বাক্য ‘ধর্মে আছি জিরাফেও আছি’র অনুরণন দিয়ে। এই কথিত প্রবাদটির একটি ব্যখ্যা বা পটভূমিকা পাওয়া গেল ফেসবুকের কল্যাণে। সেখানে বলা হয়েছে, ভারতের জয়পুরের মহারাজ একবার জাহাজে করে আফ্রিকা থেকে একটি জিরাফ আনান তার চিড়িয়াখানার জন্য। এইরকম অদ্ভুত দর্শন বিশাল আকৃতির জীব জয়পুর কেন আশপাশের কেউ কখনো নাম শোনেনি। দেখা তো দূরের কথা। জয়পুর এবং আশপাশ থেকে দলে দলে লোক সেই চিড়িয়াখানায় ভিড় জমাতো অদ্ভুত দর্শন সেই জন্তু দেখতে। আশপাশের দেশীয় রাজারা ঈর্ষান্বিত হয়েই কিছু মানুষকে দিয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে রটিয়ে দিল যে এই রকম অদ্ভুত দর্শন জন্তুর উল্লেখ হিন্দু, মুসলমান বা খ্রিষ্টান ধর্মগ্রন্থে কোথাও নেই তাই এই জন্তুটি ঈশ্বরের সৃষ্টি না, শয়তানের সৃষ্টি। একে দেখাও পাপ। জিরাফ দেখলে তাকে নরকে বা দোজখে যেতে হবে। এই ফতোয়াতে দর্শনার্থী প্রথম চোটে অনেকটা কমে গেলেও আস্তে আস্তে আবার দুয়েক জন করে আসতে লাগল। মানুষের কৌতূহলের জোর ধর্মীয় ফতোয়ার চেয়েও শক্তিশালী মনে হলো। তখন জয়পুরের মহারাজ একটু চালাকি করে রাতের দিকেও অনেকক্ষণ চিড়িয়াখানা খোলা রাখার ব্যবস্থা করলেন। ক্রমশ দেখা গেল যেসব লোক দোজখ বা নরকের ভয়ে দিনের বেলায় জিরাফ বিরোধী ফতোয়ার কথা ধর্মস্থানে ভক্তদের বোঝায় তারাই আবার অন্ধকার হলে চুপিচুপি সপরিবারে জিরাফ দেখতে চিড়িয়াখানায় যায়। এসব দ্বিচারি, দোদুল্যমান লোকদেরই জয়পুরের লোকেরা বলা শুরু করল, এই ব্যাটারা দিনের বেলায় ধর্মেও আছে রাতের বেলায় জিরাফেও আছে।
বর্তমান সমাজেও এরকম দ্বিচারি দোদুল্যমান, ব্যক্তিগত সামান্য লাভের জন্য সমষ্টির ক্ষতি করে দুই নৌকায় পা দেয়া লোকের অভাব নেই। বরং তাদের সংখ্যাই বেশি। বিশেষ করে শিক্ষিত ক্ষমতাপূজারী নৈতিকতাহীন মানুষদের মধ্যে এই আচরণ বেশি লক্ষ্য করা যায়। বাঙালি মুসলমানের মধ্যে এই প্রবণতা ভয়ংকররকমের বেশি। তার হয়তো অনেক সামাজিক-ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে। সে আলোচনা এখানে অবান্তর; কিন্তু একথা বলার অপেক্ষা নেই যে, এই দ্বিচারি সুবিধাবাদী প্রবণতা বাংলাদেশের আজকের সমাজে সর্বত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চিরায়ত মূল্যবোধকেও প্রায় নিস্ক্রিয় এবং গুরুত্বহীন করে তুলেছে এই প্রবণতা। আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র এই দোদুল্যমান, দ্বিচারী, অনৈতিক, লোভদুষ্ট, পক্ষপাতময় অনাচারকেই শক্তিমত্তা হিসাবে আদরণীয় করে তুলেছে। ফলে, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মতো লোক ক্রমশ দুর্লভ হয়ে উঠছে। সে কারণেই, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা আজ জরুরি। তাঁর বিচারিক মন বা জুডিশিয়াল মাইন্ড নিয়েও বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ করা দরকার। তিনি বহু রায় লিখেছেন। সেসব রায়ের অনুপুংখ আলোচনা হওয়া দরকার। আমাদের বিচার বিভাগ সম্পর্কে মানুষের হালফিল ধারণা পরিবর্তনের জন্য সেটার গুরুত্বও কম নয়। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বহুবিচারে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য একজন পথনির্দেশক। তাঁকে নিয়ে আলোচনা, তাঁর কাজ নিয়ে বিশ্লেষণ তাই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকেই লাভবান করবে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।