Logo
×

Follow Us

মুক্তবচন

পারমাণবিক ঝুঁকি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প

Icon

কাজী সানজীদ

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২২, ১৩:২২

পারমাণবিক ঝুঁকি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প

কাজী সানজীদ

অধিকাংশ পাঠকই হয়তো আমার এই অভিমতের সাথে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন। তবে তথ্য ও উপাত্তনির্ভর করে বেশকিছু বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাতে নিবন্ধটি পড়া শেষে অনেকেরই ধারণা পরিবর্তিত হবে বলে বিশ্বাস করি।

কেননা সাধারণভাবে  ৯০ ভাগ মানুষ চলমান হাওয়া বা প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে কোনো নির্দিষ্ট ধারণায় উপনীত হন। বিষয়টি স্বাভাবিক, কেননা বিষয়কে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করে দেখার মতো সময় বা মানসিকতা তাদের থাকে না। উপরন্তু প্রচারমাধ্যম এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ জন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে আটজন ডেমোক্র্যাট এবং সাতজন রিপাবলিকান। তারা সবাই ছিলেন যুদ্ধবাজ, ব্যতিক্রম ছিলেন একজন। তিনি হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকরা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট আখ্যা দিয়ে থাকেন তাকে। সন্দেহ নেই এটি আবেগভিত্তিক অতিশয়োক্তি। তবে, নিকট অতীতের বারাক ওবামা কিংবা বিল ক্লিনটনের সাথে তুলনা করলে অনেক ক্ষেত্রেই তাকে শ্রেয়তর মনে হয়।

প্রাক্তন দুই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের ষোল বছরের শাসনামলে আমরা পৃথিবীতে সংঘাত বাড়তে এবং নতুন সংঘাত তৈরি হতে দেখেছি। আর বর্তমান ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শাসনকালে বিশ্বকে আক্ষরিক অর্থেই পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও ঘটনাপ্রবাহে নজর দিলে তা সহজেই অনুমিত হয়। মনে রাখা প্রয়োজন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দলটিই ক্ষমতায় ছিল এবং এ যাবৎ মানব জাতির ওপর একমাত্র পারমাণবিক হামলার নজিরবিহীন নৃশংসতা এই দলের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যাপক বিস্তার ও ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞও তাদের আমলেই ঘটেছিল। অথচ দেশে বিরাট অংশের কাছে তারা জনদরদী দল হিসেবে বিবেচিত!

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরাও যুদ্ধবাজ হিসেবে কম ছিলেন না। বিশেষ করে রোনাল্ড রিগান, জর্জ বুশ সিনিয়র ও জুনিয়র। কিন্তু, রিপাবলিকান হয়েও ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন তাদের থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম। এমনকি, দলীয় অনেক নেতাদের থেকেও তিনি বেশ ব্যতিক্রম। তিনি পেশাদার রাজনীতিক নন, সেটিই ছিল তার প্রধান শক্তি। তিনি একজন ব্যবসায়ী, সুস্থ ও নিরপেক্ষ মস্তিষ্কে দেশের কল্যাণের চিন্তা করতে পারেন যেটা পেশাদার রাজনীতিকরা পারেন না।

ট্রাম্প তার চার বছরের শাসনামলে কোনো নতুন যুদ্ধ শুরু করেননি বরং যুদ্ধরত আফগানিস্তান থেকে তিনিই সরে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেন। ট্রাম্প চেয়েছিলেন স্থানীয়ভাবে পণ্য তৈরিতে আমেরিকার পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনতে, বেআইনি অভিবাসন বন্ধ করতে, ন্যাটোর বাজেট অন্যান্য অংশীদারদের আনুপাতিক হারে বহন করাতে এবং রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন এই পরাশক্তিটির সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে তা উভয় দেশ তথা পুরো বিশ্বের জন্য মঙ্গলজনক। ইদানীং তিনি বলে থাকেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুই হতো না। আমারও ধারণা তাই। সম্ভবত তিনি শত্রুতার কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে উভয় পক্ষকে একটি গ্রহণযোগ্য আপোসরফায় আসতে উৎসাহিত করতে পারতেন। তিনি ছিলেন সব দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন রাষ্ট্রনায়ক।

যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার রাজনীতিবিদরা প্রভাবমুক্ত চিন্তা করতে অক্ষম। তারা মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স বা বিলিয়নিয়র মাফিয়াদের দ্বারা শক্তভাবে নিয়ন্ত্রিত। এই মাফিয়া অর্থের জোরে নিজ স্বার্থ অনুযায়ী দেশটির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, তাতে দেশের ক্ষতি হলে তাদের কিছু যায় আসে না। তারাই সব অস্ত্র তৈরির কারখানাগুলো ও বড় বড় ব্যাংকগুলোর মালিক। অস্ত্র ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক, তারা কিছুতেই এই ব্যবসার ক্ষতি হতে দেয় না। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র তৈরি করে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছেই বিক্রি করে। সরকার সেগুলো ট্যাক্সদাতাদের অর্থে কিনে নেয়। ডিফেন্স বাজেট কংগ্রেসে বিনা আলোচনায় অনুমোদিত হয়ে যায়। কাজেই, সারা বছরই বিশ্বের কোথাও না কোথাও যুদ্ধ চালু রাখা তাদের খুব প্রয়োজন। খেয়াল করলে দেখা যায়, অস্ত্র তৈরির ইন্ডাস্ট্রি দেশ ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়নি, বরাবরই তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে। মিডিয়াগুলোও তাদের মালিকানায় ও নিয়ন্ত্রনে। তাই তাদের পছন্দমাফিক খবরগুলোই পরিবেশন করে। তা করতে গিয়ে তারা নজিরবিহীনভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে।

সাম্প্রতিক কালের ঘটনাপঞ্জি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপরেও তাদের ব্যাপক প্রভাব। সব রাজনীতিবিদরা তাদের ইচ্ছেমতো চলতে বাধ্য। একটু এদিক-ওদিক হতে চাইলে মহাবিপদ। আমরা প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ভয়ানক পরিণতি দেখেছি। তিনি ওই মাফিয়াদের শক্ত মুষ্টি থেকে দেশকে বের করতে চেয়েছিলেন। সত্যিকার দেশপ্রেমিক কোনো নেতা বা প্রেসিডেন্টকে ওই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মিডিয়ার মাধ্যমে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে তাকে লাইমলাইট থেকে সরে যেতে বাধ্য করে। 

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলিয়নিয়ার মাফিয়া দলভুক্ত নন। তাদের তুলনায় ট্রাম্প কাচকি মাছও নন। তিনি একজন রিয়েল এস্টেট ও হোটেল ব্যবসায়ী অর্থাৎ, সাধারণ ব্যবসায়ী। এই শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসার সাথে দেশের উন্নতিও কামনা করেন। তাই, তিনি নিজ দেশের উন্নতির কথা বলেছেন, সে ধরনের নীতি প্রণয়ন সমর্থন করেছেন। স্বাভাবিক কারণেই তিনি মিডিয়ার আনুকূল্য পাননি। বরং তাকে একজন নিকৃষ্ট নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা সব ধরনের মিডিয়াতে দেখা যায়। এমন কি সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে তাকে মত প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়েছে। 

অথচ গণমুখী নীতির জন্য তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক, বর্তমানে তা আরো বেড়ে চলেছে। সে কারণেই তিনি পরবর্তী নির্বাচনে দাঁড়ালে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে বিলিয়নিয়র মাফিয়া শুধু নিজেদের অর্থ উপার্জনের ওপর জোর দিয়ে থাকে তা, যেভাবেই হোক। নির্বাচন লড়াইয়ে সত্যিকার দেশপ্রেমিক কেউ আবির্ভূত হলে তা, তাদের উচ্চ মুনাফার ব্যবসার জন্য অশুভ লক্ষণ। তাই, সন্দেহ হয় তারা ট্রাম্পকে পরবর্তী নির্বাচনে দাঁড়াতে দেবে কিনা! তারা তাকে দৌড় থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে, অজুহাতের অভাব হবে না, না থাকলে তৈরি করে নেবে। 


লেখক: প্রকৃতি ও ইতিহাস অনুসন্ধানী

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫