
এম এ মাসুদ
গাছপালা প্রকৃতির যে শুধু সৌন্দর্য
বাড়িয়ে তোলে তা নয়, গাছপালা আমাদের পরম বন্ধুও। কেবল মানুষের জন্য নয়, বরং সৃষ্টি জগতের
সকল প্রাণীর জন্যেও তা অপরিহার্য। আবহাওয়া, জলবায়ু ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালার
গুরুত্ব অনস্বীকার্য এবং বিকল্পও নেই। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য যে
অক্সিজেন প্রয়োজন তা আমরা পেয়ে থাকি ওই গাছপালা থেকেই। বৃষ্টিপাত, ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি,
ভূমি ক্ষয় রোধ, নদী ভাঙন থেকে ভূ-পৃষ্টকে রক্ষা, বাতাসে কার্বনডাই-অক্সাইডের পরিমান
কমিয়ে আনতে, প্রাণীজগতের খাদ্যের উৎস হিসেবে গাছপালার ভুমিকা অনন্য।
এছাড়া গাছ থেকে তৈরি হয়ে থাকে
কাগজ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, বিভিন্ন আসবাবপত্র।
রান্নার জন্য জ্বালানির অন্যতম উৎসও গাছপালা। শুধু তাই নয়, বৃক্ষ তার সুবিশাল
শাখা-প্রশাখা বিস্তারের মাধ্যমে উত্তাপ কমিয়ে আমাদের প্রকৃতিকে রাখে সুশীতল।
বৃক্ষের এই যে এতোসব অবদান
তারপরও আমরা নির্বিচারে গাছপালা কেটে করছি সাবাড়। পৃথিবী হয়ে পড়ছে বৃক্ষ শূন্য। পরিবেশের
ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। সেখানে সরকারি
হিসেবে বাংলাদেশে বনভূমি রয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে
এ সংখ্যা মাত্র ৫ শতাংশ। দশক তিনেক আগেও গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আনাচে-কানাচে বনজঙ্গল ছিল
প্রচুর। ছোট-বড় রাস্তার দু'ধারেও বনজঙ্গল থাকায় দিনের আলোতেও মনে হতো অন্ধকার। সন্ধ্যায়
হয়ে পড়তো ঘুটঘুটে। পথ চলতে গা করতো ছমছম। বাড়ির উঠানে ছিল বড় বড় ফলজ, বনজ ও ওষধি বৃৃৃৃক্ষ। কিন্তু এখন আর নেই সেই 'ছায়া সুনিবিড়
শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।' এর কারণ হলো-
জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি ও যৌথ
পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের জঙ্গল ও গাছপালা কেটে তৈরি করেছে
পৃথক পৃথক বাড়িঘর। বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষিজমির সম্প্রসারণে বনজঙ্গল
কেটে করা হয়েছে সাবাড়। এছাড়া জ্বালানি সংগ্রহ, দ্রুত নগরায়ন, শিল্পায়নের ফলে বনভূমির
পরিমাণ ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। একটি লাগালেও কেটে ফেলছি তিনটে। ফলস্বরূপ ধীরে ধীরে
উজাড় হচ্ছে বৃক্ষ। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৩ দশমিক ৫
শতাংশ। ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলে পড়েছে এর বিরূপ
প্রতিক্রিয়া। বিগত বছরগুলোতে বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তেও হয়েছে উত্তরাঞ্চলের মানুষকে।
পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেয়েছে দেশের খরাপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে উত্তরাঞ্চলের নাম। অসময়ে প্রচুর
বৃষ্টিপাত হলেও সময় মতো হচ্ছে না তা ফলে বাড়ছে তাপমাত্রা। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে
জানা যায়, গত ১৫ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি
সেলসিয়াস। দেশে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনে দেখা দিচ্ছে বন্যা, ঘুর্ণিঝড় ও জ্বলোচ্ছ্বাসের
মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেখা দিয়েছে বিশ্ব পরিবেশে গ্রীণ হাউজ ইফেক্ট।
সুস্থভাবে মানুষসহ অন্যান্য
প্রাণীকূলের প্রয়োজনেই বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে আমাদের। দেশের পরিবেশ রক্ষায় ও
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে ২৫ ভাগ জায়গায় বনভূমি আবশ্যক। বনজ সম্পদ
বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিবছর বর্ষায় সপ্তাহ, পক্ষ কিংবা মাসব্যাপী
বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি পালিত হলেও সারাবছরই উৎসাহিত করা হয় বৃক্ষ রোপণে। এ কর্মসূচি তখনই
সফল হবে যখন রোপণের পাশাপাশি বৃক্ষ নিধন বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে। আর এজন্য প্রয়োজন
সামাজিক আন্দোলন।
'অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো
চাই, চাই মুক্ত বায়ু
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ
উজ্জ্বল পরমায়ু।'
বিশ্ব কবির এই আহবান আমাদের
সকলের চাওয়া। তাই সকলের সর্বাত্নক প্রচেষ্টায় বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে সবুজে ভরে তুলতে
হবে দেশের প্রকৃতিকে। তবেই আমরা প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারবো দুষণ মুক্ত পরিবেশে। আগামী
প্রজন্মকে দিতে পারবো সুস্বাস্থ্য নিয়ে বাঁচার পূর্ণ নিশ্চয়তা।
লেখক : এম এ মাসুদ, কান্দি গার্লস আলিম মাদ্রাসা, পীরগাছা, রংপুর