জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি
বিকল্প পথে সংকট নিরসনের কথা ভাবতে হবে

নাসরিন আখতার
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২২, ১৬:৪৮

নাসরিন আকতার।
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আট মাসের ব্যবধানে আবারো দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১৪ টাকা। অন্যান্য জ্বালানি তেলের দামও বেড়েছে। ৬ আগস্ট থেকে এই দাম কার্যকর হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশ্ববাজারের সাথে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করতে ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, পেট্রোল ১৩০ টাকা এবং অকটেন ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অথচ পত্রপত্রিকায় আজকে আরো একটি খবর গুরুত্বের সাথে প্রকাশ হয়েছে। আর সেটা হলো জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ব বাজারে সবচেয়ে কমেছে গত সপ্তাহ থেকে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর তেলের মূল্য ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দর গত সপ্তাহ থেকে প্রতি ব্যারেলের মূল্য নেমে হয়েছে ৮৯ ডলারে। শিল্প কার্যক্রম কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা কমেছে। লিবিয়া থেকেও সরবরাহ বেড়েছে। যে কারণে তেলের মূল্যও কমেছে। ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য যখন কমে আসছিল সেই সময়ে আমাদের দেশে এই মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় আমরা বিস্মিত।
সর্বশেষ দেশে ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সেই সময় এই দুই জ্বালানির দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। ৮ মাসের ব্যবধানে আবার বাড়ানো হলো তেলের দাম। তবে ওই সময় পেট্রল আর অকটেনের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল। এবার সব ধরনের জ্বালানি তেলেরই দাম বাড়ানো হলো।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। পাশাপাশি এই দামবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দেবে বলেও মনে করছে তারা। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই পরিবহনখাতে এর প্রভাব দেখা গেছে। দেশের অধিকাংশ গণপরিবহন বিশেষ করে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও নৌযান ডিজেল চালিত। সুতরাং ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পুনরায় সকল প্রকার গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। যার প্রভাব ইতোমধ্যেই সড়কে বা মহাসড়কে পড়তে শুরু করেছে। রাস্তায় গণপরিবহন একেবারে কম। শত শত মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গণপরিবহন পাচ্ছে না।
জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক খাতেও। এই মুহূর্তে কারখানায় গ্যাস সংকট, সরকার নির্দেশিত লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ থাকে না ৫-৬ ঘণ্টা। এ কারণে দিনে ৬ ঘণ্টার জন্য জেনারেটর ব্যবহার করতে হয়। জেনারেটরের ব্যবহার বাড়ায় বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পোশাক খাতের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ।
করোনাকালে বহু মানুষ চাকরি হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেকেই পেশা বদল করেছে। তাদের কেউ কেউ আবার কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এখন ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি দেশের বিকাশমান কৃষিখাতকেও বড় ধরনের সংকটের মধ্যে ফেলে দেবে।
সবমিলিয়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি বিদ্যমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মাত্রাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাবে, পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যাতায়াতের জন্য মানুষকে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হবে। ফলে সীমিত আয়ের মানুষের জীবন যাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
দেশকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রাখতে ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সহনীয় করতে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সাথে বিদ্যমান সংকট বিকল্প পথে নিরসনের কথা ভাবতে হবে।
লেখক: সহকারি সম্পাদক, সাম্প্রতিক দেশকাল