Logo
×

Follow Us

মুক্তবচন

নদী ধ্বংস ও দূষণ বন্ধে দৃষ্টান্তস্থাপন জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩:২৫

নদী ধ্বংস ও দূষণ বন্ধে দৃষ্টান্তস্থাপন জরুরি

প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর চারদিকে তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ মাটি। ছোটবেলায় শেখা পাঠ্যপুস্তকের এ কথা সকলের জানা। একটি বিষয় পরিষ্কার যে আমরা স্কুলগুলোতে খুবই সত্যি এবং ভালো ভালো কথা পড়ি। বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে সেগুলো যদি মনে রাখি এবং সে অনুযায়ী কাজ করি তাহলে বহু সমস্যার সমাধান করা যায়।

মানুষ এবং পরিবেশ সুরক্ষায় পানির গুরুত্ব বোঝাতে উপরোক্ত বাক্যটি কিংবদন্তির খ্যাতি পেয়েছে। কার্যক্ষেত্রে এর প্রয়োগ পৃথিবী ও পরিবেশ রক্ষার জন্য যে কত বেশি জরুরি খানিকক্ষণ চিন্তা করলে যে কেউ তা অনুধাবন করতে পারবেন। 

এই তিন ভাগ পানির অনেকাংশ ধরে আছে নদী। এতে যেমন আছে খাবার, যাতায়াত, ভ্রমণ ও বিনোদনের ব্যবস্থা তেমনি রয়েছে পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয় উপাদান। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নদী প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মানুষ বিভিন্নভাবে নদী দূষিত ও ধ্বংস করছে। যেমন নদীর বালু উত্তোলন, নদীতে শিল্পকারখানারসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলা, নদীর পাড় দখল করে স্থাপনা তৈরি ইত্যাদি। এগুলো নদীর স্বাভাবিক গতিপথ নষ্ট করছে, বর্জ্যে নদী ভরাট হচ্ছে এবং নদীতে নির্মল বায়ু নেই, নদীগর্ভের জলজ প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে।

এগুলো ঠিক নয় জেনেও মানুষ, এমনকি রাষ্ট্র এ সব কাজের সঙ্গে যুক্ত। নদীর বালু তুলে বিক্রি করছে। সরকার বর্জ্য ফেলার জায়গা তৈরি করতে পারেনি বলে তা নদীতে ফেলছে। অবৈধ দখলদাররা স্থানীয় প্রশাসনের প্রশ্রয়ে নানাভাবে নদী তীরে স্থাপনা তুলে দূষণ ছড়াচ্ছে। এসব বিষয়ে সরকারের নজরদারি নেই বলে মানুষ নিশ্চিন্তে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও এসবের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সংগঠন কাজ করছে। তারা সভা-সেমিনার, প্রতিবাদ-বৈঠক করছে। আইন রয়েছে কিন্তু তা প্রয়োগ হচ্ছে না। এর কারণ কী? কীভাবে নদী বাঁচানো যায়? কীভাবে নদীর দূষণ বন্ধ করা যায়? অনেকে অনেক পরামর্শ ও সুপারিশ দিচ্ছেন কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

বুড়িগঙ্গাসহ দেশের অন্য কোনো নদীতে বর্জ্য ফেলা যাবে না। যতই প্রভাবশালী হোক না কেন নদীর বালু তোলা যাবে না। নদী তীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। সিটি করপোরেশনের বর্জ্য এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নদীতে করা যাবে না। নাব্যতার জন্য যখন তখন নদী ড্রেজিং করা যাবে না। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। উল্লেখিত বিষয়গুলো মানা না হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে। মংস্য অধিদপ্তর ছোট নদীগুলোকে টুকরো টুকরো ভাগ করে সেখানে মাছ চাষ করছে। এতে নদী মরে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। অনেকে নদীর জমি দখল করে ভূমি অফিস থেকে নিজের নামে কাগজপত্র বানিয়ে নিচ্ছেন। এই জঘন্য কাজও বন্ধ করতে হবে।

অনেক নদীতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিং করা প্রয়োজন। চাঁদপুরে ড্রেজার  দিয়ে বালু তোলার ফলে ইলিশের খাবার কমে যাচ্ছে এবং ইলিশ ছোট হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদী সুরক্ষার জন্য কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা সততার সঙ্গে বেশ কিছু ইতিবাচক কাজ করেছেন। এজন্য তাদের কয়েকজনকে ওএসডি এবং বদলি করা হয়েছে। এতে সরকারি কর্মকর্তাদের ভালো কাজ করার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে, যা ঠিক নয় এবং এটি বন্ধ করতে হবে। নদী দখল ও দূষণ যে এক ধরনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ এটা প্রচার করতে হবে এবং এগুলো বন্ধ করতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫