চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলীর স্বাস্থ্যশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে গবেষণাসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি তিনি ডায়াবেটিস সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা, প্রতিকার, সচেতনতা ও চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেছেন একটি দৈনিক পত্রিকায়। 

ডায়াবেটিস বর্তমানে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ৫৩ কোটি ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে এবং ২০৪৫ সালে সেটি হবে ৭৮ কোটি। এর আগে ধারণা করা হয়েছিল ২০৪০ সালে বিশ্বে ৬৪ কোটি ডায়াবেটিস রোগী হবে; কিন্তু দেখা যাচ্ছে ২০৩০ সালেই ৬৪ কোটি হয়ে যাবে।  

ভয়াবহ এ পরিসংখ্যান। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর প্রত্যেক চারজনের মধ্যে তিনজনই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ দিক দিয়ে বাংলাদেশও ঝুঁকিতে রয়েছে।  

ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা অন্যান্য রোগকে আমন্ত্রণ জানায়। বলা যায়, এটি অনেক রোগের সমাহার। এ রোগ যেমন ভয়ঙ্কর তেমনি অনেক বেশি জটিলতা সৃষ্টি করে। এ রোগ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় চার গুণ। কোভিডের সময় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যাদের কোভিড হয়েছিল তাদের মধে বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়েছে।

ডায়াবেটিস হলে সারাজীবন ডায়েট, ড্রাগ ও ডিসিপ্লিন মেনে চলতে হয়। এ তিনটি ঠিকভাবে পালন করতে পারলে ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো কম হয়। আমাদের দেশের মানুষ এমনিতেই ঠিকভাবে চিকিৎসাখরচ চালাতে পারেন না, সেখানে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিয়মিত করা তাদের জন্য অনেক কঠিন।

ডায়াবেটিসের নিয়মিত চিকিৎসাও অনেকটা ব্যয়বহুল। ডায়াবেটিস হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের মতো বড় রোগগুলোর প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে এর প্রভাব ধীরে ধীরে কিডনি, চোখের সমস্যা, চামড়া ও স্নায়ুর ওপর পড়ে। 

অপরিকল্পিত নগরায়ণ হওয়ায় আমাদের কায়িক শ্রম, ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির জায়গা কমে গেছে। এমনকি গ্রামেও আধুনিক জীবনযাপনের ছোঁয়া লাগায় সেখানেও কায়িক শ্রম কমে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন ২০-২৫ বছর বয়সের অনেকের ডায়াবেটিস দেখা দিচ্ছে। পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যে ওজনাধিক্য বাড়ছে। ফলে মানুষ সহজে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডা. লিয়াকত আলী বলেন, এটি জিনগত নয়, এর জন্য জীবনাচরণ দায়ী। 

শুধু ডায়াবেটিস নয়, অন্যান্য রোগ সম্পর্কেও জনগণকে সচেতন হতে হবে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমন্বিত উদ্যোগে চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্রটিগুলো দূর করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের নানা ধরনের পদক্ষেপ থাকলেও সেখানে বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত লোকের অভাবে মানুষ সেবা পাচ্ছে না।

এ সমস্যা দূর করতে হবে। শুধু হাসপাতাল তৈরি ও বেড বাড়ালে চলবে না, সরকারকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মনোযোগ দিতে হবে বলে ডা. আলী মত প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া জীবনাচার, সঠিক খাদ্যাভাস ও কায়িক শ্রমের মতো বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এমনকি পাঠ্যপুস্তকে এ ধরনের রোগগুলো সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি, রোগের ভয়াবহতা এবং প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়ে মানসম্মত পাঠ থাকা প্রয়োজন।

তা হলে শিশুকাল থেকে এ ধরনের সর্বগ্রাসী রোগগুলো সম্পর্কে মানুষ সচেতন হতে পারবে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে সব কিছুর উন্নয়ন হলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো কেন পিছিয়ে থাকবে? তাই সরকারকে এ বিষয়ে গভীর মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন এবং দ্রুত দরকারি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।