Logo
×

Follow Us

মুক্তবচন

বিজয় দিবসের গৌরবান্বিত মহিমা

Icon

অসীম সাহা

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৩৮

বিজয় দিবসের গৌরবান্বিত মহিমা

অসীম সাহা। ফাইল ছবি

আজ ১৬ই ডিসেম্বর, আমাদের বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

পরাজিত পাকিস্তানি ৯৬ হাজার সৈন্য তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে অস্ত্র সমর্পণে বাধ্য হয়। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শ বুকে ধারণ করে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি অর্জন করে লাল-সবুজের পতাকার গৌরবান্বিত মহিমা।

তাই ১৬ই ডিসেম্বর শুধু একটিমাত্র দিন নয়, পরাধীনতার নাগপাশ থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার অভিপ্রায় নিয়ে জাতির পিতার যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সাল থেকে, তারই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে ১৯৫২, ১৯৫৬, ১৯৬২, ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং অবশেষে ১৯৭১-এ তার পরিপূর্ণতায় পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিন।

১৯৪৭ সালে যে প্রত্যাশা নিয়ে ভারতের বিভক্তির মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছিল পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্র, সেটি বাঙালি জাতির প্রত্যাশা পূরণ করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতারণার শিকারও হয়েছিল। এক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ড নিয়ে একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় শুধু অবাস্তব ছিল না, ছিল অদ্ভুতও।

তা ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর সমর্থনে যে রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছিল, স্বাধীনতা পাওয়ার পর পর তারা সেই বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে মেনে নিতে বাধ্য করতে চাইছিল, তারা সংখ্যালঘিষ্ঠ উর্দুভাষী মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও, তাদের নেতৃত্ব মেনে নিতে হবে এবং উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এই অন্যায্য দাবিও করতে শুরু করে।

১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কার্জন হলের এক সভায় যখন ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ বলে ঘোষণা দেন, তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙালি ছাত্ররা ‘না না’ বলে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে জানিয়ে দেয়, বাঙালিরা এই জবরদস্তি ও অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। সেই থেকে শুরু।

বাঙালিরা বুঝে যায়, যে স্বপ্ন নিয়ে বাঙালিরা উর্দুভাষী পাকিস্তানিদের সঙ্গে নিয়ে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেটি ছিল আসলে একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র এবং বাঙালিদের অবদমিত করে শোষণের জাঁতাকালে পিষ্ট করার ষড়যন্ত্রের ফল। হয়েছিলও তাই। যতদিন পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানিদের করতলগত ছিল, তারা বাঙালিদের অধিকার মেনে তো নেয়ইনি, বরং পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করতে করতে তাদের ক্রমাগত নিঃস্ব করে দিচ্ছিল।

পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান শুরুতেই সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই শুরু করেছিলেন বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। সেই সংগ্রাম করতে গিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে তাকে বারবার লাঞ্ছিত হতে হয়েছে, জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। যৌবনের প্রদীপ্ত সময়গুলো কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে।

কিন্তু শত জেল-জুলুম অত্যাচারেও নিজের অবস্থান থেকে তিনি একচুলও সরে যাননি। বরং যখনই সুযোগ পেয়েছেন, তখনই সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে গিয়ে তাদের সংগঠিত করেছেন। তিনি নানামুখী সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, এমনকি পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্তির মাধ্যমে একটি স্বাধীন বাঙালি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়ার অভিলাষ বুকে লালন করে তাকে বাস্তবায়ন করার সকল প্রয়াস গ্রহণ করেছেন। তার নেতৃত্বে সুদীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়েই আমরা অর্জন করেছি বাংলাদেশ।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের পরাভ‚ত করে এই রাষ্ট্রের জন্মের দরজা উন্মুক্ত হয়েছে, যার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তাই ঐতিহাসিক। যত দিন বাঙালি থাকবে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র থাকবে, তত দিন বিজয় দিবসের মহিমা ম্লান হবে না। বরং দিনে দিনে তা আগামী প্রজন্মকে সেই উন্মুক্ত দরজা দিয়ে প্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস ও তার স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানার সুযোগ করে দেবে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সেখানেই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫