অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের নিন্দিত সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) এবং এ আইনে চলমান মামলাগুলোও বাতিল হচ্ছে। গত ৭ নভেম্বর, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এর ১০টি ধারায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে এই আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহার হয়েছে। একটি স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পরিসরে যা ছিল সাধারণ, স্বভাবসিদ্ধ প্রতিক্রিয়া- এই আইনের কারণে তা হয়ে উঠেছিল নিষিদ্ধ ও অবৈধ। ফলে এই আইন বিরোধী দল ও মত দমনের বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। রাজনৈতিক কার্টুন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রসিকতার ছলে কোনো ভিন্নমত প্রকাশ করা হলেই নেমে আসত জেল-জরিমানা। বহু মানুষকে এই কারণে বছরের পর বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। জুটেছে তীব্র শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে, যার বেশির ভাগ মামলা হয়েছে সরকার, নানা পদধারী বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনামূলক পোস্টের জন্য। এভাবেই গত দেড় দশকে প্রথমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পরে সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে মত প্রকাশ এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিগত সরকার বিতর্কিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন’ বদলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস করে। নানা মহলের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে তা পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন পাস করা হলেও আইনের ধারাগুলোয় খুব একটা পরিবর্তন আনা হয়নি।
আমরা আশা করি, এই আইন বাতিলের মাধ্যমে মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশের বাধা দূর হবে এবং তথ্যের অবাধপ্রবাহ নিশ্চিত হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh