ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল, ‘দশকের পর দশক ধরে কিছুই ঘটে না, আবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দশকের ঘটনা ঘটে যায়।’ ঠিক এটাই ঘটেছে আমাদের কয়েক সপ্তাহের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। প্রথম পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আকারে চলমান থাকলেও মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে স্বৈরাচার উৎখাতের তীব্র আন্দোলনে রূপ নেয় এবং শেখ হাসিনার পতন ঘটে।
গত ১৫ বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন বলতে গেলে একটা স্থবির অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। স্থবির বলতে রাষ্ট্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন অংশ বা বিভাগে জনগণের অংশগ্রহণ প্রায় ছিল না বললেই চলে। কারণ একটা রাষ্ট্রকে সচল রাখার জন্যে জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে সেটা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল। এর প্রধান কারণ শুধু এক ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত কোনো রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণের কোনো স্বাধীনতা থাকে না। সেই স্বাধীনতা চলাফেরা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভোট দেওয়ার অধিকার, কথা বলা বা লেখার অধিকার, বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায় ইত্যাদি যেকোনো ক্ষেত্রেই বাধাপ্রাপ্ত হতে বাধ্য। তার ওপর শেখ হাসিনার মতো বিরল স্বৈরশাসকের অধীনে স্বাধীন থাকা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। নিজ দল ও আত্মীয়স্বজনের বাইরে রাষ্ট্রের যেকোনো ক্ষেত্রে কারোর কোনো বিষয়ে প্রবেশাধিকার ছিল না। গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া সবাই যেন নিজ দেশে পরবাসী। ফলে দীর্ঘ অনাবৃষ্টি বা খরার মতো পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল ইত্যাদির মোড়কে জনগণকে নির্বীর্য করে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ সময়ের এসব নির্বীর্যকরণ জনগণকে বুঝতে দেওয়া হয়নি। ভাবখানা এমন- রাষ্ট্র যেন স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছে। উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। ঠিক যেভাবে গ্যাব্রিয়াল গার্সিয়া মার্কেজের কল্পিত মাকোন্দোতে কিছুই ঘটেনি এবং ঘটবে না- এর ঘটনার মতো।
মার্কেজের কল্পিত মাকোন্দো গ্রামে কী ঘটেছিল? যখন কলা কম্পানির শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিদাওয়ার জন্যে আন্দোলনের মাধ্যমে মহা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল? বলাই বাহুল্য, দাবিগুলো ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি। শ্রমিকদের বাসস্থানে স্যানিটারি সুবিধার অভাব, চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা না থাকা, শোচনীয় কাজের পরিবেশ ইত্যাদি। সব থেকে দুর্বিষহ ছিল শ্রমিকদের টাকা নয়, রসিদের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা, যে রসিদের মাধ্যমে কম্পানির কমিসারিতে শুধু ভার্জিনিয়ার হ্যাম কেনা যায়। এ ধরনের আরো অনেক অভিযোগ। শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দিয়ে যখন সবাই মাকোন্দোর রেলস্টেশনে একত্রিত হলো, ঠিক তখন সরকারি আদেশে সবার ওপর গুলিবর্ষণ করা হলো। উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র হোসে আর্কাদিও সেগান্দো সেই গুলিবর্ষণ থেকে রক্ষা পায়। তাকে মৃত ভেবে ট্রেনে করে প্রায় তিন হাজার লাশের সঙ্গে তাকেও তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সে বেঁচে যায় এবং ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে নিজেকে রক্ষা করে। বিধ্বস্ত আর্কাদিও সেগান্দো গ্রামের এক মহিলার বাড়িতে অল্প সময়ের জন্যে আশ্রয় নিয়ে সেই মহিলাকে যখন বলে, স্টেশনে যত লোক ছিল (তিন হাজার) সবাইকে মেরে ফেলা হয়েছে, সেই মহিলা অবিশ্বাস আর করুণার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলেন, এখানে কোনো লোক মারা যায়নি। কেউ মারা যায়নি এখানে। আর্কাদিও সেগান্দোর কর্নেল ভাইয়ের সময় থেকে মাকোন্দোতে কিছুই ঘটেনি। এমনকি আর্কাদিও সেগান্দো যখন তার বাড়িতে গিয়ে তার আরেক ভাই অরেলিয়ানো সেগান্দোকে এই গণহত্যার কথা বলে, তখন তার ভাইও এই হত্যার ঘটনা বিশ্বাস করে না। কারণ সে আগের রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ঘোষণার মধ্যে শুনেছে, শ্রমিকরা স্টেশন ত্যাগ করে শান্তভাবে দলে দলে বাড়ি ফিরে গেছেন। এত বড় হত্যাকাণ্ডের পরও যখন সন্দেহভাজন মানুষের সামরিক আইনের অধীনে নিয়োজিত সরকারি লোকেরা রাতের অন্ধকারে গুম করতেন এবং গুমের আত্মীয়স্বজনরা পরদিন সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার দিতে যেত, তখনো অফিসাররা বারবার তাদের বলতেন, ‘তোমরা নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছিলে। মাকোন্দোতে কিছুই ঘটেনি, কখনোই কিছু ঘটেনি, কখনোই কিছু ঘটবে না।’
মার্কেজের বিখ্যাত উপন্যাস ‘নিঃসঙ্গতার একশত বছর’ থেকে দীর্ঘ এই বিবরণটা দিলাম এই কারণে যে ছোট এই বিবরণের মধ্যে বাংলাদেশে গত ১৫ বছরের বিডিআর হত্যাযজ্ঞ থেকে শুরু করে হেফাজত ইসলামের হত্যাযজ্ঞ, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ইত্যাদি মিলিয়ে দেখলে সব একসঙ্গে এই বিবরণের মধ্যে পেয়ে যাই। ঠিক মাকোন্দো গ্রামের মতোই ছিল বাংলাদেশ নামের বিশাল এক গ্রাম। শুধু হত্যাযজ্ঞই নয়, হরিলুটের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক শূন্য করে দেওয়া, শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসন, ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করা, রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ঘুষ, দুর্নীতি, আয়নাঘর দিয়ে পূর্ণ করা- এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা হয়নি। নির্বাচনের কথা বাদই দিয়ে রাখলাম। কারণ একজন স্বৈরাচার কখনো নির্বাচনের ধার ধারে না। তার লক্ষ্যই থাকে ধ্বংসযজ্ঞের দিকে। তার ওপর সেই স্বৈরাচার যদি সাইকোপ্যাথের মতো রোগী হয়, তাহলে তো কথাই নেই। পালিয়ে যাওয়ার পরও এই স্বৈরাচারীর কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি। উল্টো নতুন বাংলাদেশকে ভারতের সহায়তায় অস্থিতিশীল করার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছেন। এমনকি তার দলের কাউকেই এ পর্যন্ত তাদের এসব হীন কর্মকাণ্ডের জন্যে সামান্য দুঃখবোধ করতে আমরা এই পর্যন্ত দেখিনি। এটা যেন মার্কেজের মাকোন্দো গ্রামের চেয়েও আশ্চর্য এক গ্রাম। যেখানে সবাইকে দেখানো হয়, এখানে কিছুই ঘটেনি বা ঘটে না। তবে জনগণ নামের যে বর্গটা রাষ্ট্রের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে অস্তিত্বমান, তারা কিন্তু সব ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রত্যক্ষ করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন মার্কেজ। এই কারণে আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশ আর আগের অবস্থায় নেই। জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের সবাইকে পরিবর্তিত করে দিয়েছে। যদিও পরিবর্তিত রূপ এখনো পরিপক্বতা পায়নি। কারণ সম্পূর্ণ নতুন একটা রাষ্ট্রে রাতারাতি কোনো পরিবর্তন ঘটে না। কারণ স্বৈরাচারের উপস্থিতি না থাকলেও তার দোসরদের উপস্থিতি এবং তাদের দীর্ঘদিনের কু-অভ্যাসগুলো এত সহজে পরিবর্তন করা যাবে না। তার জন্যে দীর্ঘ সংগ্রাম এবং সময়ের প্রয়োজন। তবে যুগান্তকারী এই অভ্যুত্থান আমাদের চিন্তা জগতে নতুন অনেক বোধের উন্মোচন ঘটিয়েছে। যে বোধ আমাদের পরিবর্তিত এক নতুন বাংলাদেশের দিকে ক্রমেই পরিচালিত করবে।
পরিবর্তিত এসব নতুন বোধগুলো উন্মোচন করাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য। একটা রাষ্ট্র মানে শুধু ভালো রাস্তা-ঘাট, বিশাল বিশাল সেতু, বড় বড় দালান, মেট্রো রেল ইত্যাদি নয়। অন্তর্জ্ঞান রেখে শুধু বাইরের চাকচিক্য দিয়ে একটা রাষ্ট্রকে কখনোই চেনা যায় না। জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের ভেতরে সেই জ্ঞানের উন্মেষ ঘটিয়েছে। এই কারণেই ‘রাষ্ট্রসংস্কার’ শব্দটা বারবার উচ্চারিত হচ্ছে, যে শব্দ আগের কোনো অভ্যুত্থানে উচ্চারিত হয়নি। রাষ্ট্রসংস্কার নামে নতুন এই বর্গ আমাদের বর্তমান সমাজে এ কারণেই উঠে এসেছে, একাত্তরের পরে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আবির্ভূত হওয়ার পর রাষ্ট্র গঠনের আগেই বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালিত করা হয়েছে। যেহেতু এই দীর্ঘ সময়েও আমাদের রাষ্ট্র গঠিত হয়নি এবং ভঙ্গুর যে রাষ্ট্রব্যবস্থা দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে তাই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনটা উঠে এসেছে। রাষ্ট্র মেরামতের প্রথম যে প্রশ্নটা উঠে আসে সেটা হলো, একটি রাষ্ট্র কীভাবে গঠিত হয়? অর্থাৎ রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের স্বাধীন ব্যক্তি বা নাগরিক হিসেবে কীভাবে নিজেদের গঠন করা যায়? এই প্রসঙ্গে কবি ও লেখক ফরহাদ মজহার তার ‘গণ-অভ্যুত্থান ও গঠন’ বইটিতে চমৎকার লিখেছেন, “এই গঠন মানে কোনো বিল্ডিং বানানো না, নিজেদের রাজনৈতিকভাবে গঠন করবার মধ্য দিয়ে আমরা ‘রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের চিনতে এবং বুঝতে পারি। এই চেনা ও বোঝাবুঝির ব্যাপারটা ধরা পড়ে যখন আমরা নিজেদের চিনতে ও বুঝতে পারি। এই চেনা ও বোঝাবুঝির ব্যাপারটা ধরা পড়ে যখন আমরা নিজেদের ‘আমরা’ বলি, তখন কাদের সেই ‘আমরা’র অন্তর্ভুক্তি করি আর কাদের বাদ রাখি তার দ্বারা আমরা আমাদের রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য প্রকাশ করিÑশিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ‘আমরা’র উপলব্ধি স্পষ্ট ও দৃঢ় করে। কোন কল্পনা ও আদর্শের ভিত্তিতে আমরা নিজেদের একই সমাজের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করি সে ব্যাপারে মোটামুটি ধারণ থাকা জরুরি।” অর্থাৎ রাষ্ট্র কোনো একক ব্যক্তির সিদ্ধান্তে গড়া ভূখণ্ড নয়, সবাই মিলেমিশে ‘আমরা’ হয়ে থাকার ভূখণ্ড। তাহলে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে নিজেদের রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি কাজ। প্রশ্ন ওঠে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হয়ে গড়ে ওঠার অর্থ কী? ফরহাদ মজহারের কাছ থেকে ধার করে আমরা বলতে পারি, রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হয়ে গড়ে ওঠার অর্থ- রাষ্ট্রে বিদ্যমান প্রাকৃতিক (মানুষের সহজাত নীতি-নৈতিকতা, ঐতিহ্য, ধর্ম ইত্যাদি) ও মানুষের তৈরি আইন ইত্যাদির বিরোধগুলোকে শনাক্ত করতে পারা এবং সামাজিক, রাজনৈতিক তর্কে নিয়ে আসা। একই বইয়ে মজহার লিখেছেন, “রাষ্ট্র স্রেফ মানুষের তৈরি ‘সর্বোচ্চ’ আইন, এটা ভুল ধারণা। বাংলাদেশে আমাদের শক্তিশালী রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে উঠতে হলে আইন ও নৈতিকতার সম্পর্ক ও বিরোধ সম্পর্কে যেমন হুঁশিয়ার থাকতে হবে, একইভাবে আইনের বাইরে মানুষের সহজাত স্বভাব ও দিব্য সম্ভাবনার গুরুত্বকেও আমলে নিতে হবে। মানুষ জন্তু-জানোয়ার নয় যে তাকে আইনের খাঁচায় বন্দি রাখা যায়।” অতীতে আমরা দেখেছি, দুর্বল সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে একটা আইনি ধারণায় পর্যবসিত করে কীভাবে ভুয়া নির্বাচন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অঘটন ঘটানো হয়েছে। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাষ্ট্র গঠনের শুরুতেই আমরা জটিল কিছু দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হই এবং এসব দ্বন্দ্বের সমাধান সহজ কাজ নয়। শুধু সেটাই না, রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি আমরা হই যেমন- জনগণ কারা? কিভাবে তারা তাদের অভিপ্রায় বা ইচ্ছাগুলো ব্যক্ত করতে পারে? গণতন্ত্র কী? সংবিধান এবং রাষ্ট্র কি একই কথা? সার্বভৌমত্ব ও জনগণের সার্বভৌমত্ব বলতে আমরা কী বুঝি? জাতিবাদ ও জাতিবোধের মধ্যে পার্থক্য কী? এ ধরনের আরো অনেক প্রশ্নের উত্তরের মধ্য দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশকে যেতে হবে।
আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্র গঠনের দিকে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে। এই গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবার সময় অনেক ভুল-ত্রুটি দেখা দিবে। সেগুলো সংশোধনের পথ ধরেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। স্বৈরশাসনের যে বিশাল চাপ বাংলাদেশের নাগরিক এতদিন অতিক্রম করেছে, এই স্বৈরশাসন যাতে ভবিষ্যতে আর মাথা চাড়া দিয়ে না উঠতে পারে, সেদিকে আমাদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। স্বৈরশাসন শুধু অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয় না, মানুষের মনোজগৎকেও পঙ্গু করে দেয়। মানুষ স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মানুষের স্বাধীন চিন্তা অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে। স্বাধীন চিন্তা মানে স্বতঃস্ফূর্ত চিন্তা। মানুষের চিন্তাকে বন্দি করে ফেলার অর্থ তার অস্তিত্বকে মুছে ফেলা। অস্তিত্বহীন হয়ে বেঁচে থাকার অর্থ জীবন থেকেও মৃত হয়ে থাকা। গত ১৫ বছর আমরা এভাবেই মৃত ছিলাম। জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের মৃত্যু থেকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে। জেগে থাকাটাই জীবন না। কার্যকরভাবে বেঁচে থাকাটাই জীবন।
জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশে তাই আমরা দেখতে পাই, শত বিভেদ সত্ত্বেও রাষ্ট্রের যেকোনো অসুবিধার সময় দল-মত নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হয়ে যায়। আমরা তাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে দেখতে পাচ্ছি বিগত সরকারপ্রধান, তার দোসররা নিজেদের উদ্যোগে এবং ভারতের সাহায্যে বহুবার রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার চেষ্টা করেও সফল হতে পারছে না। জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের জায়গা এখানেই। খুব ধীরগতিতে হলেও বাংলাদেশ একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছে ও যাবে। ভবিষ্যতে পরিবর্তিত বাংলাদেশকে একটি নতুন বাংলাদেশ হিসেবে আমরা দেখতে পারব। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিল, আমাদের আর বিদেশমুখী হতে হবে না, বরং বিদেশিরাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে আসবে। ঠিক লেনিনের কথার মতো, গত ১৫ বছর যেমন বাংলাদেশে কিছুই ঘটেনি, ৩৬ দিনের এই আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি নতুন অবয়বে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে। লেখক : শিক্ষক
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh