Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

ভয়াবহ খরার গ্রাসে পড়বে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:০৩

ভয়াবহ খরার গ্রাসে পড়বে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা

প্রতীকী ছবি

ভারতে খরা আরো ভয়াবহ হতে পারে। খরার গ্রাসে পড়তে পারে দেশটির আরো অনেক এলাকা। এমনকি ভারতের যে এলাকাগুলো এতদিন ‘খরাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত হয়নি, সেই সব অঞ্চলেও খরা দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’র এক যৌথ পর্যবেক্ষণে এই অশনি সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। গত চার বছর ধরে গবেষণাটি চালানো হয়েছে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়। তার প্রথম পর্বটি সবে শেষ হয়েছে। 

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘নেচার’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, গরমকালে দক্ষিণ এশিয়ার বায়ুমণ্ডলে যে বিপুল পরিমাণে অ্যারোসল কণা জমা হয় তার পরিমাণ উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গেছে। ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসলের স্তর গত চার বছরে এতটাই পুরু হয়ে গিয়েছে যে, তা বায়ুমণ্ডলের একেবারে নিচের স্তর ট্রপোস্ফিয়ার থেকে পৌঁছে গেছে তার উপরের স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারেও। যেহেতু বিষাক্ত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর নির্গমন থেকেই অ্যারোসলের জন্ম হয়, তাই অ্যারোসলের মাধ্যমে দূষণ কণা প্রচুর পরিমাণে পৌঁছে যাচ্ছে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারেও।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে যে মেঘগুলোতে বরফ কণা মিশে থাকে, ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা খুব কম হয় বলে, সেখানেও ঢুকে পড়েছে অ্যারোসল কণা। আর তাদের পরিমাণ, ঘনত্ব ও আকার উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।

প্রশান্ত মহাসাগরে ‘এল নিনো’র কারণে গত বছরেই ভয়াবহ খরার কবলে পড়েছিল পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা। নাসা ও ইসরোর যৌথ গবেষণার ইঙ্গিত, বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসলের স্তর অত্যন্ত পুরু হয়ে যাওয়ায় ভারতে এবার সেই খরা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে চলেছে।

গবেষণার অন্যতম গবেষক তিরুপতির ‘ন্যাশনাল অ্যাটমস্ফেরিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির’ (এনএআরএল) আবহাওয়া বিজ্ঞানী মুরলী বেঙ্কট রত্নম ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’কে বলেছেন, ‘গবেষণার একটি ধাপ সবে শেষ হয়েছে। আমরা কাজ করেছি ‘এশিয়ান ট্রপোপোজ অ্যারোসল লেয়ার’ বা ‘অ্যাটাল’ নিয়ে। বেলুনের মাধ্যমে কয়েকটি সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিকে ট্রপোস্ফিয়ার ছাড়িয়ে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার পর্যন্ত পাঠিয়ে। বেলুনের মাধ্যমে এই পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে এই পদ্ধতিকে ‘ব্যাটাল’ও বলা হয়।’

গবেষণা জানিয়েছে, গাছপালা পোড়ানো ও কলকারখানা থেকে বেরিয়ে আসা বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ায় ওই অ্যারোসল্‌স কণাদের জন্ম হয়। জীবাশ্ম জ্বালানির অতি ব্যবহারে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলে উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গেছে অ্যারোসল কণার পরিমাণ। তার ফলে অ্যারোসলের স্তর ভীষণ পুরু হয়ে গেছে। ট্রপোস্ফিয়ার ছাপিয়ে তা পৌঁছে গেছে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে।

পুণের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিয়োরোলজি’র (আইআইটিএম) মেঘ বিশেষজ্ঞ আর কৃষ্ণণ আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃষ্টির জন্য মেঘ বানানোর প্রক্রিয়ায় অ্যারোসল কণাদের যথেষ্টই ভূমিকা রয়েছে। প্রতি বছরই গরমকালে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে জমা হয় জলীয় বাষ্প ও অ্যারোসল কণা। কিন্তু অ্যারোসল কণাদের উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়া পরিমাণ যদি বায়ুমণ্ডলের অনেকটা উপরের স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারেও পৌঁছে যায়, তা হলে বিপদ কিছুটা বেড়ে যায়। যেহেতু মূলত দূষণ কণা থেকেই জন্ম অ্যারোসল কণাদের, তাই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অ্যারোসল কণাদের পরিমাণ বেড়ে গেলে, তুলনায় হালকা জলীয় বাষ্পের চেয়ে মেঘ তৈরি করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে শুরু করে অ্যারোসল কণারাই। তারাই অনেক সময় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে জলভরা মেঘগুলোকে জমাট বাঁধতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তারই জলভরা মেঘগুলোর কেন্দ্রকে (নিউক্লিয়াস) গড়ে তোলে।’

অন্যতম গবেষক বেঙ্কট রত্নম জানিয়েছেন, এর আগে একটি গবেষণাতেই দেখা গিয়েছিল, তিব্বতের মালভূমির ১০ থেকে ১২ মাইল উপরের বায়ুমণ্ডলের স্তরেও ঢুকে পড়েছে অ্যারোসল কণা। আমাদের ‘অ্যাটাল’ প্রকল্পে গবেষণার পরিসীমা আরো বাড়ানো হয়েছিল। দেখা হয়েছিল পশ্চিম চিন থেকে ভূমধ্যসাগরের উপরের বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরও। মাপা হয়েছে ওই বিস্তীর্ণ এলাকার বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে অ্যারোসল কণাদের পরিমাণ, ঘনত্ব, আকার, জলীয় বাস্পের পরিমাণ ও ওজোন গ্যাসের পরিমাণ ও ঘনত্বও।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫