
বামুনি-কাঠশালিক। ছবি: কাজী সানজীদ
ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে সাতশর ওপর পাখি প্রজাতি উপস্থিত। আমাদের আবাসিক কমন পাখি তো আছেই তার ওপর; অনেক ভারতীয় প্রজাতির বিস্তৃতির সীমানা আমাদের দেশের সামান্য পশ্চিমে শেষ হয়েছে। তাই সেদেশের কিছু পাখি স্বল্প সংখ্যায় বিচ্ছিন্নভাবে এদেশের পশ্চিমাঞ্চলে উপস্থিত আছে। যেমন বামুনি-কাঠশালিক, যা প্রধানত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখতে পাওয়া যায়। পাখিটির ইংরেজি নাম Brahminy Starling.
একইভাবে, অনেক উত্তরপূর্ব ভারতীয় অঞ্চলের এবং দক্ষিণপূর্ব এশীয় পাখির বিস্তৃতি বাংলাদেশের উত্তরপূর্বে এসে শেষ হয়েছে। সে কারণে ঐ অঞ্চলের কিছু পাখি বিচ্ছিন্নভাবে এদেশের পূর্বাঞ্চলে উপস্থিত আছে। যেমন ধলাতলা-শালিক। একমাত্র সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলে এর দর্শন পাওয়ার তথ্য আছে। সেই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে অনিন্দ্য সুন্দর পাখিটিকে সম্প্রতি শেরপুরে দেখা সম্ভব হয়েছে। এই জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলায় বেশ দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করলাম একটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের পাইলনের ওপর কয়েক জোড়া ধলাতলা-শালিক বসবাস করছে এবং সম্ভবত ধাতব পাইপের ফোকরে বাসা বেঁধেছে। আমাদের দেশে শালিক বা স্টার্লিং পরিবারের বেশ কয়েকটি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। তবে, ধলাতলা-শালিক খুব বিরল।
কারও কারও মতে, এই পাখি এদেশে আগে থেকেই ছিল, ঝুঁটি-শালিকের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকার কারণে শনাক্ত হয়নি। দাবিটির যুক্তি দুর্বল। কেননা দুটি প্রজাতির মধ্যে পার্থক্য বেশ পরিষ্কার। ধলাতলা-শালিকের রঙ কালো এবং ঝুঁটিটি অনেক বড়। এটির ইংরেজি নাম Great Myna. বর্তমানে শেরপুরে এদের অবস্থান জানার পর অনেক পাখিপ্রেমী এদের দেখেছেন এবং বিশেষজ্ঞরা এদের জীবনযাপন খেয়াল করছেন।
রোনাল্ড হালদার রচিত ২০১০ সালে প্রকাশিত আ ফটোগ্রাফিক গাইড টু বার্ডস অব বাংলাদেশ বইটিতে পাখিটির ছবি ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আছে। বলা হয়েছে পাখিটি ভবঘুরে, সারা দেশে বিরল এবং শুধু দেশের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলে দেখা গেছে। বাংলা নাম উল্লেখ আছে বড় ঝুঁটি-শালিক। এখানে উল্লেখযোগ্য, রোনাল্ড হালদার দুই দশক ধরে দেশের সর্বত্র বিরামহীনভাবে ঘুরে পাখিসম্পদের ওপর ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন। সে দলে আরও ছিলেন ইনাম আল হক এবং পল থমসন। দেশে বিভিন্ন পাখি প্রজাতির উপস্থিতি, তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণে তাদের অবদান অপরিসীম।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব প্রকাশিত ফিল্ডগাইডেও এই পাখি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, বাংলা নাম উল্লেখ আছে ধলাতলা-শালিক। সর্বশেষ রিচার্ড গ্রিমেট, টিম ইন্সকিপ ও পল থমসন রচিত এবং যুক্তরাজ্য থেকে ২০২১ সালে প্রকাশিত বার্ডস অব বাংলাদেশ বইটিতেও পাখিটি স্থান পেয়েছে। প্রতিটিতেই বলা হয়েছে পাখিটি বিরল।
উপসংহার : এদেশে মনুষ্য জনসংখ্যা নজিরবিহীন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বনাঞ্চল ধ্বংস প্রক্রিয়াও চলমান রেখেছে। ফলে পাখিদের ভবিষ্যৎ সঙ্কটাপন্ন। অনেক পাখি এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কাজেই প্রজাতির সংখ্যা ব্যাপক হলেও তা অচিরেই নিম্নগামী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।