Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

‘উন্নয়ন পরিকল্পনায় নেই বাস্তবতা, শুধুই কাগুজে মহাপরিকল্পনা’

Icon

মাহফুজ উল্লাহ হিমু

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ১৫:১০

‘উন্নয়ন পরিকল্পনায় নেই বাস্তবতা, শুধুই কাগুজে মহাপরিকল্পনা’

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং প্রকল্পনির্ভর নগর ব্যবস্থাপনার ফলে ক্রমেই বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে ঢাকা। রাজধানীর সামগ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নে বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকলেও নেই কার্যকর সমন্বয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। রাজউকের মহাপরিকল্পনা বা ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নে যেমন রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি আছে, তেমনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নেই শহর পরিকল্পনাবিদদের অংশগ্রহণ। এই বাস্তবতায় ঢাকা শহরের নগরায়ণ ও পরিকল্পনাগত দুর্বলতা নিয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশকাল নিউজের প্রতিবেদক মাহফুজ উল্লাহ হিমু।

এই মুহূর্তে ঢাকায় সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার পরিকল্পনায় কী থাকা উচিত, যেটি তারা নজরে নিচ্ছে না?
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক ধরনের কমিশন গঠন করেছে। শহরের বাসযোগ্যতা ঠিকমতো চলছে কি না, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার, যা মানুষকে স্পর্শ করে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের এই পরিকল্পনা ও পরিবেশের বিষয়ে সেই অর্থে বড় কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ও ট্রাফিক যানজট একটি বড় বিষয়। এই বিষয়গুলো সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল না। বরং যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার অভাবে পরিবেশ ও ট্রাফিকের মতো কোনো খাতে উন্নতি হয়নি। সরকারের অগ্রাধিকারে কেন মানুষকে স্পর্শ করার মতো বিষয়গুলো নেই তা আমরা বুঝতে পারছি না।  

আমরা বারবার বলে আসছি, মানুষ পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তন শুধু নির্বাচনব্যবস্থা না। সেখানে অবশ্যই যে এলাকায় বসবাস করছে সে এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়কে ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারছে কি না এবং মোটাদাগে দূষণ কমছে কি না তা দেখতে চায়। কিন্তু এসব বিষয়ে সরকারের সাফল্য নেই বরং অনেক ক্ষেত্রে আপসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সরকার ব্যবসায়ীদের ইন্ধনে ড্যাপ বদলাতে চায়, যা শহরকে আরো বসবাস অযোগ্য করে তুলবে।

ঢাকার যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আপনার কী মতামত?
যানজটের জন্য দুটি বিষয়কে আলাদা করব। একটি হলো নিয়মিত যানজট এবং অপরটি সড়ক অবরোধের জন্য হঠাৎ তৈরি হওয়া যানজট। আমাদের নিয়মিত চলাফেরার জন্য অবরোধ একটি বিপজ্জনক ঘটনা। রাস্তা অবরোধ দাবিদাওয়া আদায়ের বড় একটি উপায় এবং তা করলে দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হচ্ছে। সরকার প্রথম দিক থেকেই এমন একটা বার্তা দিয়েছে। ফলে এটা সরকারের একটি ব্যর্থতা বলব। দাবির ক্ষেত্রে গুরুত্ব না, বরং কতক্ষণ রাস্তা অবরোধ করে বসে থাকতে পারছে, তার ওপর নির্ভর করে সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এটা পরবর্তী সময়ে রাস্তা অবরোধে অনেককে উৎসাহিত করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার সব দাবিদওয়া পূরণ করবে না। দাবিদাওয়া নিয়মিত সরকারের জন্য রেখে দেবে। মৌলিক কিছু সংস্কারের বিষয়ে তারা উদ্যোগ নিতে পারত। এ বিষয়ে শুরু থেকেই তাদের অবস্থান ভুল ছিল।
রাজধানীর নিয়মিত যানজটের বিষয়ে আগের সরকার মনোযোগ দেয়নি। তারা বড় বড় মেগা প্রজেক্টে নজর দিয়েছে। বর্তমান সরকারের শুরুতে সড়কে ট্রাফিক পুলিশ ছিল না। তখন স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পালন করেছে। তারা একটি বড় ফোর্স ছিল। কিন্তু অনুপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় ঢাকার ট্রাফিক কখনো নিয়ন্ত্রণে আসবে না। আগের সরকার যেভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করত এখনো সেভাবেই চলছে। এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা দৃষ্টান্তমূলক। বরং সড়কগুলো আরো উন্মুক্ত হয়েছে। সব সড়কে সব ধরনের গাড়ি চলছে। সড়ক ব্যবস্থাপনা সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় না থাকায় ঢাকার সড়কে প্রচুর অটোরিকশা নেমে গেছে।

ঢাকায় নগর পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে সরকারের কোন পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত?
ঢাকার ট্রাফিক ও নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে সবচেয়ে জরুরি হলো ভালো ও উন্নতমানের বাস নামানো। সরকার যদি শুরুতেই এ লক্ষ্যে কাজ করত তাহলে এতদিনে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নয়ন হতো। এই ৯ মাসে ঢাকায় অন্তত দুই হাজার বাস নেমে যেত। কিন্তু বাস সার্ভিসের মানোন্নয়নে সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। যদিও এটা চাইলেই সম্ভব। মেট্রোরেল বানানো যতটা কঠিন, নতুন বাস আনা ততোটাই সহজ।
সরকারের উচিত বাস ও ট্রানজিট সার্ভিস নিজেরা আনার ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে প্রাইভেট এন্টারপ্রেনারদের ইনসেনটিভ দিয়ে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে আনতে পারলে এ খাতে বড় একটা পরিবর্তন হতো। কিন্তু সরকার সেদিকে হাঁটেনি।

ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং মাইক্রো-মোবিলিটির ভবিষ্যৎ আপনি কীভাবে দেখেন? সরকার কি যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে?
অটোরিকশা ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচে বা শহরের প্রান্তে চলত। কিন্তু গত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হঠাৎ করে অটোরিকশাচালকদের দাবির মুখে রাজধানীতে চলার অনুমতি দিয়েছিলেন। এটা বড়সড় একটা ভুল ছিল। এর পেছনে রাজনৈতিক কারণও থাকতে পারে।
একটা মেগা শহরে অটো চলবে কী চলবে না, তার নিরাপত্তা-ব্যবস্থা কী- এটি আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। আদালত হয়তো পরামর্শ দিতে পাওে, কিন্তু সিদ্ধান্ত আসতে হবে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন বিভাগ থেকে। অথচ এগুলো না করে আদালত রায় দিল, ঢাকার কোনো সড়কে অটোরিকশা চলতে পারবে না। আবার কয়েক দিন পর বলল, সব সড়কে অটো চলতে পারবে। পৃথিবীর কোথাও আদালতের আদেশে মেগা সিটিতে পরিবহন ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয় না। এখন রাজধানীতে এত অটো ঢুকে গেছে যে ধাপে ধাপে উঠাতেও সরকারের অনেক ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে।
বর্তমানের অটো নৈরাজ্য কেন সারানো যাচ্ছে না? এর কারণ সরকারের পক্ষ থেকে এ সমস্যা সমাধানে কোনো বৈজ্ঞানিক বা পরিকল্পিত বিশ্লেষণ ছিল না। এটি এক ধরনের আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত ছিল। অটোর বিষয়টি আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে কোন এলাকায় চলবে, কোন অটো চলতে পারবে না, কোনটা পারবে, সেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করতে হবে, যা আমাদের সব বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। যেখানে মান ও নিরাপত্তার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট হবে।

নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য আপনার পরামর্শ কী?
আমাদের গণপরিবহনে জোর দিতে হবে। গণপরিবহন বলতে শুধু বাস নয়, প্যারাট্রানজিট ব্যবস্থায় উন্নত করতে হবে। এর মধ্যে মিনিবাস ও ছোট পরিবহন রয়েছে। আমাদের ফুটপাতগুলোকে সচল ও পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অটো কোথায় চলবে তার কমিউনিটি বেইসড পরিকল্পনা দরকার। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করতে হবে। যত ছোট পরিবহন থাকবে, সড়ক তত অকেজো হয়ে যাবে। আমাদের সড়কে এটিই ঘটেছে।
আমাদের কোনো লেন-ব্যবস্থা নেই। অথচ এটি জরুরি বিষয়। এগুলো ধাপে ধাপে করতে হবে। কিন্তু সড়কে যদি শৃঙ্খলা আনতে না পারি তাহলে বড় বড় ফ্লাইওভার-এক্সপ্রেস ওয়ের মতো মেগা প্রকল্পে কোনো লাভ হবে না। কোন প্রকল্প প্রয়োজনীয় কোনটা অপ্রয়োজনীয়, সে বিষয়ে এখনই সরকারকে ভাবতে হবে। আগের সরকার করেছে বলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বরং যেটা প্রয়োজনীয়, সেটা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

জলাবদ্ধতা, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন এবং দাবদাহ মোকাবেলায় সরকার কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে?
এ সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন সঠিক পরিকল্পনায় না করা এবং পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখার ফল। এটা চাইলেই সমাধান করার মতো বিষয় নয়। পানি নিষ্কাশনের চ্যানেলগুলো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে, খাল-নালাগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ নেই। পানি ধারণের সক্ষমতাও কমে গেছে। তবে সরকার কাজটা শুরু করতে পারে। খাল ও নদী-নালার মতো আমাদের প্রাকৃতিক চ্যানেলগুলোকে বাঁচানো, আন্তঃসংযোগ তৈরি করার উদ্যোগ নিতে পারে। ড্রেনগুলো সচল করতে হবে এবং প্লাস্টিক আবর্জনায় বন্ধ ছোট-বড় নালার বর্জ্যগুলো পরিষ্কার করাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক ও ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। সরকার এরই মধ্যে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তবে কমিউনিটি এনগেজমেন্টের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে।
আমাদের শহর কংক্রিটের নগরে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন আগে এয়ার পিউরিফায়ার দিয়ে দূষণ ও দাবদাহ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা সম্ভব নয়। এ জন্য সবুজায়ন ও জলাশয় রয়েছে তা রক্ষা করতে হবে। ঢাকা শহরে প্রচুর বৃক্ষায়ণ ছাড়া তাপ কমানোর সুযোগ নেই। এ ছাড়া কংক্রিটের জঞ্জাল কমাতে হবে। বিশাল বিশাল ভবন যেগুলো হয়ে গেছে সেগুলো তো ভাঙা সম্ভব নয়, কিন্তু নতুন করে যেন এই জগাখিচুড়ি না বাড়ে, সেদিকে নজর দিতে হবে। কিন্তু হচ্ছে উল্টো। ড্যাপের সংশোধনের মাধ্যমে আরো ভবন নির্মাণের চেষ্টা হচ্ছে। অথচ এখন আমাদের ভবন নির্মাণ কমিয়ে সবুজায়ন বাড়ানো উচিত। তাহলেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

বর্তমানে ঢাকায় বিভিন্ন নির্মাণে পরিবেশগত প্রভাব কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? ঢাকায় সবুজ এলাকার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কী ধরনের পরিকল্পনা থাকতে পারে?
আমাদের অল্প বিস্তর যে ফাঁকা স্থান রয়েছে, সেখানে অধিক পরিমাণ গাছ রোপণ করতে হবে। সেটা ব্যক্তিগত পর্যায় অথবা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে হোক। বিশ্বের অনেক শহরে যেখানে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই, সেখানে কংক্রিটের টাইলস সরিয়ে অন্তত দু-একটি গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়।
ঢাকার মূল শহরে হয়তো ফাঁকা জায়গা নেই, কিন্তু আশপাশে তো রয়েছে, সেখানে সম্ভব। ঢাকা এলাকার মাটি উর্বর, তাই কিছু জায়গায় আচ্ছাদন সরিয়ে গাছ লাগাতে হবে। যেখানে একদম সম্ভব না, সেখানে বড় বড় টবে কিছু গাছ লাগানো যাবে। কিন্তু বৃক্ষায়নের বাইরে কোনো উপায় নেই। আর যতটা ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানে নতুন করে ভবন তৈরি না করে সবুজায়নের ব্যবস্থা করা উচিত।  

গত সরকারের সময়ে ড্যাপ হলেও বর্তমান সরকারের আমলে রিহ্যাব সংশোধনের জোর দাবি জানাচ্ছে। এই উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন? ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সরকার কতটা জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে মনে করেন?
এটি একটি অদ্ভুত বাস্তবতা। সরকার পরিবর্তনের পর, শহরের বাসযোগ্যতা বাড়ানোর আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু রিহ্যাব বা আবাসন ব্যবসায়ীরা ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) বাড়ানোর দাবি নিয়ে এলো। আরো বিস্ময়করভাবে সরকার ও রাজউক এটাকে আমলে নিয়েছে। তারা পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ আমলে না নিয়ে ঢাকার বাসযোগ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলে ড্যাপ সংশোধনের উদ্যোগ নিল। অথচ আলোচনায় থাকা উচিত ছিল বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য কীভাবে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কিন্তু  অন্তর্বর্তী সরকার অপ্রত্যাশিতভাবে উন্নয়নের প্রি-লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে আমরা বারবার আপত্তি জানিয়েছি। আগের সরকারের আমলে ড্যাপ করার পর ২০২৩ সালে ব্যবসায়ীরা একদফা ফার বাড়িয়ে নিয়েছে। বর্তমানে মন্ত্রণালয় অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে ড্যাপ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
এসব উদ্যোগের কোনোটাই ঢাকাকে বাসযোগ্য করবে না। বরং ফ্লোরের রেসিও বাড়িয়ে সরু রাস্তার পাশে আরো বহুতল ভবন তৈরি করবে। এটি শুধু ঢাকার তাপ বাড়াবে না। আমাদের এখানে কোনো অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা তৈরি করবে। এই পুরো বিষয়টি ঢাকার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সরকারের যে অংশটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, আমরা আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত তাদের নিবৃত্ত করবে। যদি ড্যাপের কোনো সংস্কার করতেই হয় তাহলে জনকল্যাণকে বিবেচনা করতে হবে।

ড্যাপ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজউক ও রিহ্যাবের দ্বন্দ্বকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রাজউক ও রিহ্যাবে দ্বন্দ্ব ঠিক বলব না। রিহ্যাব রাজউক ও মন্ত্রণালয়কে চাপ দিয়ে ড্যাপের ফার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এতে রাজউকের কোনো কোনো কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। তারা রিহ্যাবের অনেককে বলে, ড্যাপ সংশোধন হয়ে যাবে, এখন ভবনের প্ল্যান পাস করাবেন না। রাজউকের কারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের এখানে কী স্বার্থ রয়েছে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের কী সম্পর্ক তা খতিয়ে দেখতে হবে।
পৃথিবীর কোথাও ব্যবসায়ীরা নীতি নির্ধারণে থাকতে পারেন না। অথচ ড্যাপ সংশোধন কমিটিতে তাদের যুক্ত করা হয়েছে। এটি সুস্পষ্ট স্বার্থের দ্বন্দ্ব। এ অবস্থায় যে নীতি গ্রহণ করা হবে তা অবৈধ ও অনৈতিক হয়ে যায়। রাজউক ও মন্ত্রণালয়ের উচিত পুরো বিষয়টি নগরের বাসযোগ্যতার মাপকাঠিতে দেখা, রিহ্যাবের দাবি দেখার কোনো সুযোগ নেই। তাদের মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু সেই মতামতকেই প্রাধান্য দেবে, এটা করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আশা করি, সরকার ও মন্ত্রণালয় সামগ্রিক জনস্বার্থের দিকে দেখবে।

বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকেই পরিবেশ নিয়ে অতীতে সোচ্চার ছিলেন। বর্তমানে তাদের ভূমিকা কেমন দেখছেন?
আমাদের এই সরকারে পরিবেশ নিয়ে কাজ করেছেন এমন ব্যক্তিরা আছেন। তাদের নিয়ে মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশার কিছু কিছু বিষয়ে তারা কাজ করতে পেরেছেন। তবে অনেক বিষয়েই জনমনে হতাশা রয়েছে। জনগণ আশা করেছিল, পরিবেশ নিয়ে এই সরকার বেশি সংবেদনশীল হবে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে পরিবেশ জনস্বার্থের বিষয়ে। সেখানে তারা যদি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রভাব মুক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন, তাহলে তারা সফল হিসেবে বিবেচিত হবেন। সরকারের দায়িত্ব যারা অবৈধভাবে ব্যবসা করছে ও প্রভাব বিস্তার করছে তাদের চিহ্নিত করা। একই সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। সরকারের টুকটাক সফলতা আছে, কিন্তু বড় পরিসরে তারা ব্যর্থ হয়েছে। অনেকেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আপস করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ তাদের যে বড় ম্যান্ডেট দিয়েছে সেটা কাজে লাগিয়ে পরিবেশের বিষয়ে তাদের জিরো টলারেন্স দেখানো উচিত।

আপনি সরকারে থাকলে এই মুহূর্তে শহরের জন্য কোন কোন সিদ্ধান্ত নিতেন?
শহরের পরিবর্তন করতে হলে অনেক বিপ্লবের প্রয়োজন, বিষয়টি এমন না। বাংলাদেশের মানুষের জন্য সহজ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন : যানজটের জন্য সহজবোধ্য পাবলিক বাস সার্ভিস উন্নত করা। কমিউনিটির সমস্যার জন্য কমিউনিটিকে এনগেইজড করা। তারা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারত। ঢাকায় এত বড় অভ্যুত্থানের পরও খেলার মাঠগুলো এলাকার বাচ্চাদের জন্য উন্মুক্ত হয়নি। এসব মাঠ আগে ক্লাব সিন্ডিকেটের দখলে ছিল, এখন নতুন ক্লাব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এখনো জলাভূমি দখল হচ্ছে। এসব বিষয়ে তদারকি নেই।
পান্থকুঞ্জ নিয়ে পাঁচ মাস ধরে আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু এটা নিয়ে সরকার কারো সঙ্গে আলোচনা করেনি। সরকারের উচিত হবে, যেখানে টাকা-পয়সা কম লাগবে সেসব প্রকল্প নেওয়া এবং সঠিক কমিউনিটিকে এনগেইজড করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ড্যাপের মতো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়া। এগুলো বড় কাজ না, তরুণদের সম্পৃক্ত করতে পারলে অনেক কিছুই সম্ভব। মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে, এটা জনগণের পক্ষের সরকার এবং তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করবে না। সেটা করা গেলে দৃশ্যমান পরিবর্তন সম্ভব।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫