শেখ হাসিনাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞপ্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১৪:৫৬

শেখ হাসিনা।
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি দুটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৪ জুন হাজির না হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১০ এর ‘এ’ ধারা অনুযায়ী তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ সম্পন্ন হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও আসামিরা গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক অথবা আত্মগোপনে রয়েছেন।
গতকাল সোমবার জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় করা মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অবিলম্বে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৪ জুন দিন ধার্য করা হয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
পরে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামাল কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সোমবার দিন ধার্য ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আদালতে রিপোর্ট দিয়ে বলেছে যে, আসামিদের বাসায় একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেও তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেহেতু তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি সেহেতু ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী তাদের আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাজির হতে দেশের বহুল প্রচারিত দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তারা যেন হাাজির হন এবং ২৪ জুন পরবর্তী ধার্য তারিখে হাজির হয়ে আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় তারা যেন মুখোমুখি হন।”
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, “পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও আসামিরা যদি আদালতে উপস্থিত না হন, তাহলে আদালত তাদের অনুপস্থিতিতে আইন অনুযায়ী কার্যধারা গ্রহণ করবে। এবং তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ পরিচালিত হবে।”
এর আগে ১ জুন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামাল কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এই দুজন ছাড়াও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের পর তা গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া আব্দুল্লাহ আল মামুনকে এই মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। পাশাপাশি পরবর্তী আদেশের জন্য ১৬ জুন দিন ধার্য করা হয়।
ওইদিন টেলিভিশনে বিচারকাজটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ মামলায় আব্দুল্লাহ আল মামুন কারাগারে থাকলেও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন।
সেদিন ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ১৩৫ পৃষ্ঠার লিখিত আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। আদালতে ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার সাক্ষ্য প্রমাণ, দলিল, ডকুমেন্টারি ও এভিডেন্স দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর। এই তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আমলে নেওয়ার আবেদন করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর বরাবর আবেদন করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রথমে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়।
এর মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলো।
এ ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা হয়েছে।