Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইন ও বাস্তবতা

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১৫:০৪

পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইন ও বাস্তবতা

জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষ দ্বারা নদী-নালা ও বন ধ্বংস, বায়ু ও পানি দূষণ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। বিশ্বজুড়েই পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, তবে বাংলাদেশে তা বাস্তব সমস্যায় রূপ নিয়েছে। শহর থেকে গ্রাম, উপকূল থেকে পাহাড়-সব জায়গায়ই পরিবেশের ওপর চাপ বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়েছে। নগরায়ণের চাপে কমে যাচ্ছে বনাঞ্চল, নদী হারাচ্ছে গতিপথ, খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে বর্জ্য। স্বাস্থ্যঝুঁকি, কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব, প্রাণিসম্পদের ক্ষতি, জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি-এসবের পেছনে মূলত দায়ী পরিবেশদূষণ এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে উদাসীনতা। অথচ দেশে পরিবেশ রক্ষায় বেশ কিছু আইন রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী, পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া শিল্প-কারখানা পরিচালনা করা নিষিদ্ধ। পরিবেশদূষণ করলে রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান, উপরন্তু জরিমানা ও জেল দুই-ই হতে পারে। এ ছাড়া বন আইন-১৯২৭ বনাঞ্চল রক্ষায়, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আর ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১৮ পানি অপচয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা।

নদী রক্ষার ক্ষেত্রেও উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী, নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক এলাকায় নদী রক্ষা কমিশন কাজও করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ সংস্থাগুলো কখনো কখনো অভিযান চালায়। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশের অনেক শিল্প-কারখানা এখনো কোনো ধরনের পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। অনেকে নিয়ম না মেনে বর্জ্য ফেলে দিচ্ছে খালে, নদীতে বা খোলা জায়গায়। ঢাকার চারপাশে, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে অনেক কারখানাই নিয়ম ভেঙে পরিবেশদূষণ করে চলেছে অবিরত। 

বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকা একাধিকবার বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে। সিসা, সালফার, ধুলা ও গাড়ির কালো ধোঁয়ার মিশ্রণে শহরের বাতাস প্রায়ই ভারী হয়ে যায়। এসব সমস্যার পেছনে মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতার ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব, স্থানীয়ভাবে তদারকির ঘাটতি। অনেক অপরাধী আইনের ফাঁকফোকরে পার পেয়ে যায়। বছর শেষে দেখা যায়, অল্প কিছু কারখানার বিরুদ্ধে জরিমানা আদায় হলেও বেশির ভাগ অপরাধী রয়ে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

পরিবেশ রক্ষায় কেবল আইন করলেই হবে না, দরকার বাস্তব প্রয়োগ। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করা, পরিবেশ আদালতকে কার্যকর করা এবং অপরাধীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। পরিবেশ আদালতের কার্যক্রম অনেক জেলায় কার্যত অকার্যকর। বিচার বিলম্বিত হয়, মামলার তদন্তে গাফিলতি দেখা যায়। ফলে পরিবেশবিরোধী অপরাধীরাও আইনকে ভয় পায় না। জনগণের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। স্কুল-কলেজে পরিবেশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, গণমাধ্যমে পরিবেশবিষয়ক প্রচারণা বাড়ানো এবং পরিবেশবান্ধব দেশীয় প্রযুক্তিকে উৎসাহ দেওয়া উচিত।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশবিষয়ক ক্লাব ও কর্মসূচি চালু করা গেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়বে। শহর ও গ্রামে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে তরুণ সমাজ। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পরিবেশ ক্লাব গড়ে তুলে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এতে তৃণমূল পর্যায়েও পরিবেশ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে। স্থানীয় সরকার, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ উদ্যোগ ছাড়া টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা নয়, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিবেশবিষয়ক তদারকি ইউনিট গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই কঠোর সিদ্ধান্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো পরিবেশের এই অবনতি একসময় আমাদের অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে। আর তখন আর শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫