
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবিশ্বাস ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ইতিহাসে জুলাই অভ্যুত্থান একটি নতুন অধ্যায়। জুলাই আমাদের শিক্ষা দিয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার। বিশ্বাস জুগিয়েছে মানুষের- ঐক্য পারে না এমন কিছু নেই। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরপরই স্পষ্ট হয়েছে, স্বপ্ন আর বাস্তবতার ফারাক অনেক। প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে গিয়ে নতুন শাসকগোষ্ঠীকে বারবার বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে। পুরোনো রাজনৈতিক বলয়ের প্রভাব, আমলাতান্ত্রিক জড়তা এবং অর্থনৈতিক সংকট নতুন সরকারের পথ কঠিন করে তুলছে।
আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল স্বৈরাচারমুক্ত এমন এক গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করব, যেখানে বাংলাদেশ নির্বিঘ্নে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। দীর্ঘ অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্যের শিকার মানুষ চেয়েছে, যেন এই পরিবর্তন তাদের জীবনের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, প্রত্যাশিত পরিবর্তন আসেনি। অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের ঐক্যে অনেক ক্ষেত্রে ফাটল ধরেছে। রাষ্ট্রের যেসব বিষয়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে এখনো পূর্ণ ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। সেই সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতের প্রতিটি ঘটনার ন্যায়বিচার হওয়া জরুরি।
আমরা মনে করি, এ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হওয়া এবং এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা প্রয়োজন। দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে, সর্বোপরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আবু সাঈদসহ জুলাই অভ্যুত্থানের সব হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা আশা করতে চাই, সংস্কারপ্রক্রিয়া শেষে প্রতিশ্রুত সময় ফেব্রুয়ারিতেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সাধারণ রাজনৈতিক রদবদল নয়। এটা এক ধরনের সতর্কবার্তাও বটে যে জনগণের ধৈর্যের সীমা একদিন ফুরিয়ে যায়। তাই এখন সময় এসেছে, এই পরিবর্তনকে সত্যিকারের জনগণের কল্যাণে পরিণত করার।