
আজকের বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা ইত্যাদির ছোঁয়ায় আমাদের প্রতিদিনের জীবন পাল্টে যাচ্ছে। অনেকে এখন মনে করেন, ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য প্রযুক্তি, কোডিং, ইঞ্জিনিয়ারিং-এসব শেখাই যথেষ্ট। এর মাঝে দর্শনের প্রয়োজনীয়তা নেই। তাদের মতে, কেন দর্শন পড়তে হবে? কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, প্রযুক্তির বিকাশ যতই দ্রুত হোক না কেন, মানুষের নৈতিকতা, চিন্তাশক্তি ও মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব কখনোই কমবে না। বরং প্রযুক্তির এই প্রবল স্রোতে টিকে থাকতে হলে মানুষকে আরো বেশি করে ভাবতে শিখতে হবে, আর সেই শিক্ষাই দেয় দর্শন। দর্শন আমাদের শেখায় কীভাবে প্রশ্ন করতে হয়, যুক্তির মাধ্যমে উত্তর খুঁজতে হয় এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। চিন্তাশক্তির বিকাশ ও নৈতিকতা দর্শন শিক্ষার প্রধান শক্তি হলো বিশ্লেষণধর্মী ও যৌক্তিক চিন্তাশক্তি গড়ে তোলা। প্রযুক্তি আমাদের অগণিত তথ্য সরবরাহ করে, কিন্তু কোন তথ্যটি গ্রহণযোগ্য, কোন সিদ্ধান্তটি ন্যায্য তা নির্ধারণ করতে বিশ্লেষণী চিন্তার প্রয়োজন। এআই যখন একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখন মানুষের দায়িত্ব সেই সিদ্ধান্তের পেছনের নৈতিক ও মানবিক প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করা। দর্শন শিক্ষার্থীরা যুক্তি, প্রমাণ ও ন্যায়বোধের ওপর ভিত্তি করে চিন্তা করতে শেখে, যা প্রযুক্তিনির্ভর সমাজেও অপরিহার্য। শুধু তা-ই নয়, দর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শেখে কীভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সমস্যাকে বিশ্লেষণ করতে হয়। এই গুণটি শুধু অ্যাকাডেমিক বা চিন্তাশীল আলোচনায় নয়, বরং নিত্যদিনের জীবনেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রযুক্তির দুনিয়ায় আজ বড় প্রশ্ন হলো, ‘কী করা সম্ভব’ নয়, বরং ‘কী করা উচিত’। ডাটা সংগ্রহ সম্ভব, কিন্তু তা কি ন্যায়সংগত? এআই দিয়ে অস্ত্র তৈরি সম্ভব, কিন্তু তা কি মানবতার স্বার্থে? এ ধরনের মৌলিক নৈতিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দর্শন প্রয়োজন। দর্শনপাঠ শিক্ষার্থীদের নৈতিক দ্বন্দ্ব বুঝতে সাহায্য করে এবং তারা বুঝতে শেখে কীভাবে মানবতার সর্বোচ্চ মঙ্গলের দিকটি বিবেচনায় রাখতে হয়। একটি সমাজ যদি শুধুই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে ওঠে, কিন্তু নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত হয়, তবে তা দীর্ঘ মেয়াদে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমা, উদ্দেশ্য ও দায়বদ্ধতা নির্ধারণে দর্শন অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব ও জিজ্ঞাসার গুরুত্ব ভবিষ্যতের নেতাদের শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার জানলেই চলবে না, তাদের প্রয়োজন হবে নৈতিক নেতৃত্বের গুণাবলির। আজকের বিশ্বব্যাপী সমস্যা হলো পরিবেশ বিপর্যয়, সামাজিক বৈষম্য, যুদ্ধ, প্রযুক্তি-নির্ভরতার নেশা। এসব মোকাবিলায় দায়িত্বশীল ও মানবিক নেতৃত্ব জরুরি। দর্শন মানুষকে নেতৃত্বে মানবিকতার ভিত্তি তৈরির শিক্ষা দেয়। একজন প্রকৃত নেতা হতে হলে তার মধ্যে থাকতে হবে সহানুভূতি, ন্যায়বোধ এবং দূরদর্শিতা। দর্শন এই গুণগুলোর বিকাশে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জটিল বিশ্বে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয়। দর্শন মানুষকে শেখায় প্রশ্ন করতে। প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে তা বিজ্ঞান শেখায়, কিন্তু দর্শন শেখায় ‘কেন’ কাজ করতে হবে। এই ‘কেন’ প্রশ্নই মানুষের নতুন আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা। প্রযুক্তি আমাদের সামনে হাজারো পথ খুলে দিয়েছে, কিন্তু কোন পথে এগোলে মানবসমাজের মঙ্গল হবে, তা নির্ধারণের জন্য গভীর চিন্তা ও দর্শন অপরিহার্য। এই জিজ্ঞাসার মনোভাবই আমাদের চিন্তাকে সৃজনশীল করে তোলে এবং নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনের পথ খুলে দেয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে মানবিকতা এআই অনেক কিছু অনুকরণ করতে পারে, কিন্তু মানবিকতা, সহানুভূতি, নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ-এসব এখনো মানুষের বৈশিষ্ট্য। দর্শন এই মানবিক গুণাবলির চর্চা ও বিকাশ ঘটায়। ভবিষ্যতের জগতে, যেখানে মেশিন হয়তো মানুষের মতো আচরণ করবে, তখন মানুষের আসল শক্তি হবে তার মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও চিন্তাশক্তি, যা দর্শনের শিক্ষা থেকে জন্ম নেয়। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, প্রযুক্তি মানুষ সৃষ্টি করেছে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারও মানুষের হাতে। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ বজায় রাখতে হলে দর্শনমনস্কতা অপরিহার্য। সুতরাং প্রযুক্তির এই রঙিন, দ্রুতগামী জগতে দর্শন শিক্ষার গুরুত্ব আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরো বেড়েছে। প্রযুক্তি আমাদের যাত্রার গতি নির্ধারণ করতে পারে, কিন্তু কোন পথে যাব, কেন যাব এবং কার মঙ্গলের জন্য যাব-এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পেতে দর্শন অপরিহার্য। আজকের ছাত্রছাত্রীদের তাই শুধু প্রযুক্তিবিদ হওয়া নয়, বরং বিবেকবান চিন্তাবিদ ও মানবিক নেতা হয়ে ওঠা জরুরি। আর সেই যাত্রার শুরু হয় দর্শনের পাঠ থেকে।
আজকের বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা ইত্যাদির ছোঁয়ায় আমাদের প্রতিদিনের জীবন পাল্টে যাচ্ছে। অনেকে এখন মনে করেন, ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য প্রযুক্তি, কোডিং, ইঞ্জিনিয়ারিং-এসব শেখাই যথেষ্ট। এর মাঝে দর্শনের প্রয়োজনীয়তা নেই। তাদের মতে, কেন দর্শন পড়তে হবে? কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, প্রযুক্তির বিকাশ যতই দ্রুত হোক না কেন, মানুষের নৈতিকতা, চিন্তাশক্তি ও মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব কখনোই কমবে না। বরং প্রযুক্তির এই প্রবল স্রোতে টিকে থাকতে হলে মানুষকে আরো বেশি করে ভাবতে শিখতে হবে, আর সেই শিক্ষাই দেয় দর্শন। দর্শন আমাদের শেখায় কীভাবে প্রশ্ন করতে হয়, যুক্তির মাধ্যমে উত্তর খুঁজতে হয় এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
চিন্তাশক্তির বিকাশ ও নৈতিকতা দর্শন শিক্ষার প্রধান শক্তি হলো বিশ্লেষণধর্মী ও যৌক্তিক চিন্তাশক্তি গড়ে তোলা। প্রযুক্তি আমাদের অগণিত তথ্য সরবরাহ করে, কিন্তু কোন তথ্যটি গ্রহণযোগ্য, কোন সিদ্ধান্তটি ন্যায্য তা নির্ধারণ করতে বিশ্লেষণী চিন্তার প্রয়োজন। এআই যখন একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখন মানুষের দায়িত্ব সেই সিদ্ধান্তের পেছনের নৈতিক ও মানবিক প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করা। দর্শন শিক্ষার্থীরা যুক্তি, প্রমাণ ও ন্যায়বোধের ওপর ভিত্তি করে চিন্তা করতে শেখে, যা প্রযুক্তিনির্ভর সমাজেও অপরিহার্য। শুধু তা-ই নয়, দর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শেখে কীভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সমস্যাকে বিশ্লেষণ করতে হয়। এই গুণটি শুধু অ্যাকাডেমিক বা চিন্তাশীল আলোচনায় নয়, বরং নিত্যদিনের জীবনেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
প্রযুক্তির দুনিয়ায় আজ বড় প্রশ্ন হলো, ‘কী করা সম্ভব’ নয়, বরং ‘কী করা উচিত’। ডাটা সংগ্রহ সম্ভব, কিন্তু তা কি ন্যায়সংগত? এআই দিয়ে অস্ত্র তৈরি সম্ভব, কিন্তু তা কি মানবতার স্বার্থে? এ ধরনের মৌলিক নৈতিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দর্শন প্রয়োজন। দর্শনপাঠ শিক্ষার্থীদের নৈতিক দ্বন্দ্ব বুঝতে সাহায্য করে এবং তারা বুঝতে শেখে কীভাবে মানবতার সর্বোচ্চ মঙ্গলের দিকটি বিবেচনায় রাখতে হয়। একটি সমাজ যদি শুধুই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে ওঠে, কিন্তু নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত হয়, তবে তা দীর্ঘ মেয়াদে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমা, উদ্দেশ্য ও দায়বদ্ধতা নির্ধারণে দর্শন অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
ভবিষ্যতের নেতৃত্ব ও জিজ্ঞাসার গুরুত্ব ভবিষ্যতের নেতাদের শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার জানলেই চলবে না, তাদের প্রয়োজন হবে নৈতিক নেতৃত্বের গুণাবলির। আজকের বিশ্বব্যাপী সমস্যা হলো পরিবেশ বিপর্যয়, সামাজিক বৈষম্য, যুদ্ধ, প্রযুক্তি-নির্ভরতার নেশা। এসব মোকাবিলায় দায়িত্বশীল ও মানবিক নেতৃত্ব জরুরি। দর্শন মানুষকে
নেতৃত্বে মানবিকতার ভিত্তি তৈরির শিক্ষা দেয়। একজন প্রকৃত নেতা হতে হলে তার মধ্যে থাকতে হবে সহানুভূতি, ন্যায়বোধ এবং দূরদর্শিতা। দর্শন এই গুণগুলোর বিকাশে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের জটিল বিশ্বে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয়।
দর্শন মানুষকে শেখায় প্রশ্ন করতে। প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে তা বিজ্ঞান শেখায়, কিন্তু দর্শন শেখায় ‘কেন’ কাজ করতে হবে। এই ‘কেন’ প্রশ্নই মানুষের নতুন আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা। প্রযুক্তি আমাদের সামনে হাজারো পথ খুলে দিয়েছে, কিন্তু কোন পথে এগোলে মানবসমাজের মঙ্গল হবে, তা নির্ধারণের জন্য গভীর চিন্তা ও দর্শন অপরিহার্য। এই জিজ্ঞাসার মনোভাবই আমাদের চিন্তাকে সৃজনশীল করে তোলে এবং নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনের পথ খুলে দেয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে মানবিকতা এআই অনেক কিছু অনুকরণ করতে পারে, কিন্তু মানবিকতা, সহানুভূতি, নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ-এসব এখনো মানুষের বৈশিষ্ট্য। দর্শন এই মানবিক গুণাবলির চর্চা ও বিকাশ ঘটায়। ভবিষ্যতের জগতে, যেখানে মেশিন হয়তো মানুষের মতো আচরণ করবে, তখন মানুষের আসল শক্তি হবে তার মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও চিন্তাশক্তি, যা দর্শনের শিক্ষা থেকে জন্ম নেয়। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, প্রযুক্তি মানুষ সৃষ্টি করেছে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারও মানুষের হাতে। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ বজায় রাখতে হলে দর্শনমনস্কতা অপরিহার্য।
সুতরাং প্রযুক্তির এই রঙিন, দ্রুতগামী জগতে দর্শন শিক্ষার গুরুত্ব আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরো বেড়েছে। প্রযুক্তি আমাদের যাত্রার গতি নির্ধারণ করতে পারে, কিন্তু কোন পথে যাব, কেন যাব এবং কার মঙ্গলের জন্য যাব-এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পেতে দর্শন অপরিহার্য। আজকের ছাত্রছাত্রীদের তাই শুধু প্রযুক্তিবিদ হওয়া নয়, বরং বিবেকবান চিন্তাবিদ ও মানবিক নেতা হয়ে ওঠা জরুরি। আর সেই যাত্রার শুরু হয় দর্শনের পাঠ থেকে।
শিক্ষক : কক্সবাজার ইউনিভার্সিটি