Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

রোগী মৃত্যুর পূর্বে ডাক্তারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে

Icon

প্রণব চক্রবর্তী

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৩:১৭

রোগী মৃত্যুর পূর্বে ডাক্তারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে


ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগী মারা গেল-বহুল প্রচলিত একটি প্রবচন এবং অবশ্যই বহু মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলামত সম্পৃক্ত। ডাক্তার আসিবার আগে রোগীর মৃত্যু-পুরো প্রয়াসটিকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ প্রবাদটি জলজ্যান্ত সত্য। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আমরা এখনো সামর্থ্য হইনি।

তবে এ লেখাটি স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক নয়, বরং এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষণ ও এর গতিসংক্রান্ত। ওপরের বিষয়ের সঙ্গে এর মৌলিক মিল গতিসংক্রান্ত। গতির অভাবে সমাজে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা দমনে সরকারের সদিচ্ছা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে ঠিক তেমনি আইন ভঙ্গকারীদের মনে অধিকতর অনিয়মে জড়িত হওয়ার প্রত্যাশা সৃষ্টি হতে পারে।

জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের পরিবর্ধিত রূপ ‘গণ-অভ্যুত্থান’। এই অভ্যুত্থানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগদান করেছে। তাদের কার কি এজেন্ডা ছিল তা বিশদভাবে জানা সম্ভব নয়।

ফলে সাংবিধানিক নিয়ম অনুসরণ করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও কারো কারো ধারণা এটি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরণে ব্যবহৃত হবে। শিক্ষকদের জুতার মালা পরানো, জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা, চাঁদা দাবি, জায়গা দখল, বিভিন্ন মামলার আসামিরা পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ডিম মারা, শারীরিক আঘাত হানা, নারীর সম্ভ্রমহানি, হুমকি, ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ অভিধায় জুতার মালা পরানো ইত্যাদি বিষয় ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে সৃষ্ট এ কথা অবিশ্বাস করার জো নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানরা এসব বিষয়ে সচেতন হতে আহ্বান জানালেও কুচক্রীরা এতে হতদ্যম নয়। এরা সরকারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অদক্ষ বানিয়ে প্রতিবিপ্লবী ধারণা বাস্তবায়নে তৎপর কি না তাও খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছেন এবং সংবিধান অনুসরণ করে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। সংবিধান কী বলে দেখি-

নাগরিক ও সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য

২১. (১) সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। 

২. সব সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।

জাতীয় স্মৃতিনিদর্শন প্রভৃতি

২৪. বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা স্থানগুলোকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হতে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

নাগরিকের যে নির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে সে ব্যাপারে  বেশির ভাগ নাগরিক সচেতন। কিন্তু সমাজের কিছু কূটচালকারী বিভিন্ন অসিলায় নাগরিক দায়িত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের ও গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারে তৎপর। এরা ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৯১, ২০০১, ২০০৯, ২০২২ সালেও বিভিন্ন ধরনের আইন ভঙ্গকরণে যুক্ত থেকে সাধারণ ও সংখ্যালঘু অর্থাৎ ক্ষমতাহীন লোকের মাঝে ত্রাস সঞ্চার করতে সচেষ্ট হয়েছিল। এদের অস্ত্র বিবিধ। এরা ধর্ম, আঞ্চলিকতা, বৈদেশিক ইস্যু, দ্রব্যমূল্য, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি, শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি ইস্যুকে বগলদাবা করে রাজপথকে উত্তপ্ত করে দিতে সক্ষম।

অন্যদিকে সরকারি কর্মচারী অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা (পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য) সবাই জনগণের সেবা করার জন্য সচেষ্ট থাকবেন।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার ছবি, ভিডিও পর্যালোচনা করলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ‘ধীরে চলো নীতি’ অনুসরণ করে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। অথবা পুলিশ আক্রমণকারীদের মনের ঝাল বা হাতের সুখ (জুতাসহ) মেটাবার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু আমরা উদাহরণস্বরূপ ধানমন্ডি থানার ওসির কথা স্মরণ করতে পারি, যিনি উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে মামলা করে আসার যুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করেছেন এবং মব দাবিদারদের আবদার অনুযায়ী এরেস্ট করেননি। অনুরূপ একটি ঘটনায় সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে আটক ব্যক্তিকে উত্তেজিত ছাত্র-জনতার হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। 

আক্রান্তকে উদ্ধারে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা যেমন বৃদ্ধি করবে, তেমনি সরকারের কার্যকারিতা সম্পর্কে সঠিক বার্তা দেবে আইন ভাঙায় উৎসাহীদের। ফলে তারা 

আপনা-আপনি স্তিমিত হয়ে পড়বে। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে আইনানুগ সমর্থন পাবেন এ 

কথাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে।

আইনের দৃষ্টিতে সমতা

২৭. সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।

আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার

৩১. আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যেকোনো স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী, ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। ৩২. আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না।

ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় অন্যায় কাজে যুক্ত থাকায় দায়েরকৃত মামলায় কাউকে জনতা আটক করলে তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর কাছে তাকে তুলে দেওয়া ও নির্যাতন না করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সবাইকে অবহিত করতে হবে। এ জন্য প্রেস ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে পর্যাপ্ত অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে উপযুক্ত নির্দেশনা দিতে হবে, তথ্য অধিদপ্তর নিজ উদ্যোগে এ ধরনের স্কিড বানিয়ে মিডিয়াকে প্রচারের জন্য সরবরাহ করতে পারে।

মোদ্দা কথা হলো, আইন কাউকে হাতে তুলে নিতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে বিষয়টি ঝালাই করতে ঐকমত্য কমিশনের এজেন্ডাভুক্ত করার বিষয় বিবেচনা করতে হবে। দেশে যে আইনের শাসন বিদ্যমান তা সবাইকে অবহিত করা সম্ভব হলে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি হ্রাস পাবে, তাতে সংশয় থাকার কথা নয়। তবে অনুরূপ উল্টাপাল্টা কাজে কোনো প্রতিবিপ্লবী মহল সরকারকে ‘ব্যর্থ’ বানাতে গোপন কার্যক্রম চালাচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখার অবকাশ রয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫