Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

পালিত পশুর আক্রমণে ক্ষতির আইনি প্রতিকার

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৬:৫৯

পালিত পশুর আক্রমণে ক্ষতির আইনি প্রতিকার

দেশে অনেকেই শখে পশু পালন করে থাকেন। সেই পশুর দ্বারা যদি কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে বাংলাদেশ আইনে তার প্রতিকার রয়েছে। বিশেষ করে গৃহপালিত কুকুর, বিড়াল, গরু, ঘোড়া বা অন্য যেকোনো প্রাণীর আক্রমণে মানবদেহে কোনো ক্ষতি হলে তার আইনি ফলাফল কী হতে পারে, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হয়। পশুর মালিকের প্রতি কিছু আইনি দায়বদ্ধতা রয়েছে, যার মাধ্যমে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০-এর অধীনে গৃহপালিত পশুর মালিকের প্রতি কিছু বিশেষ দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। মালিকের দায়িত্ব হচ্ছে তার পশু যাতে কোনোভাবে সাধারণ জনগণের ক্ষতি না করে। যদি কোনো ব্যক্তি গৃহপালিত পশুর আক্রমণে আহত হন, তবে সেই পশুর মালিককে দায়ী করা যেতে পারে।

এ ছাড়া ধারা ২৮৯-এর অধীনে যদি পশুর মালিক তার পশু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন এবং পশু আক্রমণ করে, তবে মালিককে দায়ী করা হবে। এমনকি পশুর দ্বারা যদি কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত হন, তখন মালিককে আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হতে পারে। এই ধারায় পশুর মালিকের ছয় মাসের জেল অথবা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।  

গৃহপালিত পশুর আক্রমণের ফলে যদি কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত হন বা প্রাণহানির শিকার হন, তবে অপরাধমূলক মামলা করা যেতে পারে। এই ধরনের মামলায় পশুর মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। আদালত সেসব দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার জন্য মালিককে শাস্তি দিতে পারে। এ ছাড়া ওই ব্যক্তি যদি শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে তিনি দেওয়ানি মামলা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। দেওয়ানি আদালতে মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে, যা সেই ব্যক্তির চিকিৎসা বা মানসিক ক্ষতির জন্য ব্যবহৃত হবে। গৃহপালিত পশুর আক্রমণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আদালতে ক্ষতিপূরণের দাবি করতে পারেন। এর মাধ্যমে তিনি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের আবেদন করতে পারেন। আদালত এই ক্ষেত্রে মালিকের ক্ষতিপূরণের জন্য একটি আদেশ দিতে পারেন, যাতে আক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির আর্থিক ও শারীরিক দিকের ক্ষতি পূরণ করা হয়।

বাংলাদেশে পশু নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত কিছু আইন ও বিধি রয়েছে, যা পশুর মালিকদের দায়বদ্ধতার প্রতি সতর্কতা জারি করে। উদাহরণস্বরূপ, গৃহপালিত কুকুর বা অন্য কোনো পশুর মালিকের দায়িত্ব রয়েছে তাদের পশুকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং তা যেন কোনো সাধারণ মানুষকে আক্রমণ না করে, তা নিশ্চিত করতে। এ ধরনের বিধি ভঙ্গ করলে পশুর মালিককে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে, কুকুর বা অন্যান্য বিপজ্জনক প্রাণীর মালিকদের জন্য আরো কঠোর বিধি ও নিয়মাবলি রয়েছে। যদি এ ধরনের প্রাণী কাউকে আক্রমণ করে, তবে মালিককে সুনির্দিষ্টভাবে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। গৃহপালিত পশু দ্বারা আক্রমণের ফলে ক্ষতি হলে মালিককে জরিমানা, শাস্তি কিংবা ক্ষতিপূরণ প্রদানের আওতায় আনা হতে পারে। এর মাধ্যমে পশুর মালিককে জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ে আরো সচেতন করা হয়। শাস্তি ও জরিমানা পশুর মালিকের উদাসীনতা দূর করতে সহায়ক হতে পারে।

গৃহপালিত পশুর আক্রমণ বা ক্ষতির ঘটনা ঘটলে প্রথমত ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে থানায় অভিযোগ করতে হবে। এরপর পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে এবং প্রমাণ সংগ্রহ করবে। তদন্ত শেষে আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হবে। মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গৃহপালিত পশুর আক্রমণে ব্যক্তির ক্ষতি হলে বাংলাদেশের আইন পশুর মালিককে দায়ী করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম। এ ছাড়া অপরাধমূলক ও দেওয়ানি মামলায় পশুর মালিকের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই আইনি ব্যবস্থাগুলো পশুর মালিকদের দায়িত্বশীল করে তোলে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫