Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

ইতিহাসের বাঁকবদলের পরতে পরতে জড়িয়ে স্যাটায়ার

Icon

আবিদ চৌধুরী

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪:০৪

ইতিহাসের বাঁকবদলের পরতে পরতে জড়িয়ে স্যাটায়ার

রাজধানীর ধানমন্ডির ৩ নম্বর রোডে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ। গত ৩১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এখানে প্রদর্শিত হয়েছে ব্যঙ্গচিত্র ‘বিদ্রুপে বিদ্রোহ’। প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ‘ই-আরকি’ এবং ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা’। 

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের বিভিন্ন বিতর্কিত ও আলোচিত মন্তব্যকে উপজীব্য করে বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শিত হয়। ব্যঙ্গচিত্র ছাড়াও গণ-অভ্যুত্থানের গান, কবিতা, ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘ড্রামা কুইনের লাইভ ড্রামা’, ‘স্বৈরাচারকে ধরার জন্য দৌড়’, ‘শাট-ডাউন টানেল’, ‘স্মৃতিময় জুলাই করিডোরসহ’ বিভিন্ন লাইভ অ্যাক্টিভিটিও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল।


প্রদর্শনী চলাকালে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ঢুকতেই সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান লুঙ্গি ও লাইফ জ্যাকেট পরে দুজন দুই দিকে তাকিয়ে নৌকায় বসে থাকার দৃশ্য। তাদের মাথার ওপর ব্যঙ্গ করে লেখা রয়েছে ‘ওরে নীল দরিয়া...’। যদিও আয়োজকরা এখানে তাদের নাম উল্লেখ করেননি, তবে ব্যঙ্গচিত্রটি দেখে দর্শনার্থীরা মূল বিষয়টি বুঝে নিয়েছে। 

জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারী শনাক্ত করতে রাস্তায় চলাচলরত মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তাদের স্মার্ট ফোনের গ্যালারি এবং ফেসবুক আক্টিভিটি খতিয়ে দেখত। সেই ঘটনার অনুকরণে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, জিন্স ও শার্ট পরা এক ব্যক্তির বাঁ হাতে রয়েছে একটি হাতুড়ি, ডান হাত এগিয়ে ব্যক্তিটি বলছে, ‘আপনার মোবাইলটা একটু দিন-চেক করব’। একটি ব্যঙ্গচিত্রে দেখা গেছে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন, চিত্রের ওপরে লেখা ‘শেখ হাসিনা পালায় না।’ 

মজার একটি বিষয় ছিল শেখ হাসিনার নানা সময়ের বক্তব্য নিয়ে। মায়াকান্না, হুমকি, স্বজন হারানোর বেদনা, বিষাক্ত কথা, রেসিপি, এই কথা কে বলেছে, আমি আমি শিরোনামে একটি করে বাটন ছিল। বাটনগুলো টিপলেই শিরোনামের সঙ্গে মানানসই সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীর ওই সংক্রান্ত ভাষণগুলো বেজে ওঠে। 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান যখন চরম আকার ধারণ করেছে তখন তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘সরকার দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করেনি, বন্ধ হয়ে গেছে। মোনাজাতের ভঙ্গিতে থাকা জুনাইদ আহমেদ পলকের একটি ছবির ওপরে এই মন্তব্যটি লেখা। ব্যঙ্গচিত্র থেকে বাদ যাননি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে করা একটি মন্তব্য ‘নাইস অ্যান্ড অ্যাট্রাক্টিভ’ জুড়ে দেওয়া হয় ব্যঙ্গচিত্রের সঙ্গে। যদিও এখানে রাষ্ট্রপতির নাম ব্যবহার করা হয়নি। 


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান এবং আওয়ামী লীগের আরো বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীর ব্যঙ্গচিত্র ছাড়াও ছিল হারুনের ভাতের হোটেলের একটি প্রতীকী উপস্থাপন। প্রদর্শনীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের ছবি ও নামযুক্ত দুটি গ্যালারি প্রদর্শিত হয়েছে। প্রদর্শনী দেখতে আসা সুচিতা হক সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, এখানে এসে আমার মনে হচ্ছিল আমি জুলাই অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে ফিরে গেছি। প্রতিটি ঘটনা, মন্তব্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। যদিও তারা হাস্যরসাত্মকভাবে ঘটনার অবতারণা করেছে, তবুও ওই দিনগুলো মনে পড়ে।

প্রদর্শনীর বিষয়ে ‘ই-আরকি’ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানুষের কথা বলার অধিকার যখন ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছিল, তখন থেকে শুরু করে জুলাই আন্দোলনে অনলাইন ও অফলাইনে সরব ছিল ‘ই-আরকি’।

শুধু চব্বিশ নয়, এ দেশের জন্মের প্রারম্ভ থেকে ইতিহাসের বাঁকবদলের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে বিদ্রুপ বা স্যাটায়ার। পথেঘাটে, চায়ের আড্ডা, রাজপথ থেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রবল বিচরণ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ব্যক্তি পর্যায় ছাড়িয়ে স্যাটায়ার বা বিদ্রুপের নানা ফর্ম জায়গা করে নিয়েছে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও রাজনৈতিক বার্তায়।”

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫