
সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর একসময় ছিল স্বচ্ছ নীল পানি, পাহাড়ি ঝরনা ও সাদা পাথরের মোহনীয় সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। কিন্তু অবৈধ পাথর উত্তোলনের ফলে আজ এই স্থান প্রায় মরুভূমিতে পরিণত। এখানকার ৭৫ শতাংশ পাথর এরই মধ্যে তুলে নেওয়া হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রশাসন ও পুলিশের উপস্থিতিতেই এই অবৈধ কার্যক্রম চলেছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর নিয়ে উদ্বেগের নানা চিত্র চোখে পড়লেও দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ পাথর উত্তোলন চলছে, প্রশাসনের চোখের সামনেই। কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলার অবস্থাও একই রকম। গত বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখান থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। আজ সেখানে কেবলই ক্ষতবিক্ষত ভূমি আর ধ্বংসের চিহ্ন। পরিবেশবিদদের মতে, এভাবে পাথর তোলা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দশকে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। পাথর অপসারণে পাহাড়ি টিলার স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে, ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে, স্থানীয় কৃষিজমি ও পানির উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা মানুষের চলাচল ও জীবিকায় সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তাই কঠোর ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এবং কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলার সম্পদ রক্ষায় প্রশাসন, স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশ সংগঠনকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। অবৈধ উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, নিয়মিত নজরদারি ও টেকসই পর্যটন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার ও ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। নইলে ‘সাদা পাথর’ শিগগিরই হয়তো ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবে। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা রেখে যাব কেবল একটি ধ্বংসস্তূপ।