
প্রতীকী ছবি
সিলেট নগরী থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝরনাগুলো থেকে যে নদীর উৎপত্তি হয়ে ভোলাগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে সেই নদীর নাম ধলাই নদ। পাহাড় থেকে ঝরনার পানির স্রোতে এই নদী বেয়েই সাদাপাথর নেমে আসে। যতদূর চোখ যায় দুই দিকে কেবল সাদাপাথর আর মাঝখানে স্বচ্ছ নীল পানি, আরেক দিকে পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন। দেখে মনে হয়, কাশ্মীরের মতো এক স্বর্গরাজ্য। সৌন্দর্যের এক অনবদ্য এক ক্যানভাস।
তবে সেই ক্যানভাসের সাদাপাথরে চোখ পড়েছে লুটেরাদের। তারা দিনের পর দিন পাথর চুরি করে আসছে। তবে এবার যেটা হয়েছে তা হচ্ছে পাথর লুটপাট। এই সাদাপাথর লুট বা চুরি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অবৈধভাবে সাদাপাথর খনন এবং চুরির কারণে শুধু পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে না, বরং এটি আইনি দিক থেকেও গুরুতর অপরাধ।
বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী, খনিজ সম্পদ চুরির ফলে পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে এটি একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আইনে খনিজ সম্পদের অপব্যবহার এবং পরিবেশের ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই আইনের আওতায় অবৈধ খনন কার্যক্রমের ফলে পরিবেশের ক্ষতির জন্য দণ্ডিত হতে পারে অপরাধীরা।
দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০ অনুযায়ী, সাদাপাথর চুরি সাধারণ চুরির অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এর ফলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা যদি এই অপরাধে জড়িত থাকেন, তবে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
সাদাপাথর চুরির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে ভূমির গঠন ও পরিবেশের ওপর। খনিজ সম্পদ খনন করায় মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে, যা ভবিষ্যতে ভূমিধসের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। সাদাপাথর খনন প্রাকৃতিক বাসস্থানে পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। মাটি খনন হওয়ায় পানির উৎসেও দূষণ ঘটে, যা জলজ প্রাণী এবং মানুষের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
পাথর চুরি একটি গুরুতর অপরাধ, যা পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে। এটি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিবেশের সুরক্ষা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে সাদাপাথর চুরির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের উচিত-এসব অপরাধ দমনে কার্যকর অভিযান পরিচালনা করা এবং অবৈধ খনন কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পরিবেশ রক্ষায় জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে কার্যকর অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত পাথর লুট ও উদ্ধারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন-এটা সাধারণ মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার করে। সেই সঙ্গে সাদাপাথর এলাকা আগের পরিবেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা পর্যটক ও পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।