
বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ছয় বছর পর, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচন ছাত্ররাজনীতির মোড় ঘোরানোর সুযোগ এনে দিয়েছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহে নানা ছাত্রসংগঠন, জোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভিড় যেমন প্রমাণ করছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র হবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট, তারা চান একটি ভিন্নধর্মী ছাত্ররাজনীতি।
জুলাই অভ্যুত্থান দেশের রাজনীতিতে যেমন পরিবর্তনের সূচনা করেছে, তেমনি ক্যাম্পাস রাজনীতির চিত্রও পাল্টেছে। গেস্টরুম সংস্কৃতি ও দখলদারির অবসান ঘটেছে, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, ছাত্ররাজনীতি কি সত্যিই শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক হবে, নাকি আবারও বড় দলের ছায়াতলে ‘গুপ্ত রাজনীতি’র মাধ্যমে পুরোনো দখলদারিতন্ত্র ফিরে আসবে?
স্মরণ রাখা জরুরি, একসময় ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত অসংখ্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্ররাই। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তির কারণে ছাত্ররাজনীতি বরং রাজনৈতিক দলের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তবে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্ররাই মূল নেতৃত্ব দিয়ে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, তাদের আবাসন সংকট, রিডিং রুম ও গবেষণার অভাব, পরিবহন সুবিধার ঘাটতিসহ নানা সমস্যা সমাধানে ডাকসু কার্যকর হয়ে উঠবে। রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে ছাত্ররা মৌলিক অধিকারের ভিত্তিতে রাজনীতি করতে পারবে, কিন্তু ক্যাম্পাসে সংগঠনের নামে দখলদারত্ব, চাঁদাবাজি বা সহিংসতা বন্ধ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব একটি নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীরা পরিবর্তন চান। দেখার পালা, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সেই পরিবর্তন কতটা বাস্তবে রূপ পায়। বলাবাহুল্য এটা নির্ভর করবে প্রার্থীদের সততা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতি দায়বদ্ধতার ওপর।