
প্রতীকী ছবি
টর্ট আইন সাধারণত ব্যক্তির ক্ষতির জন্য দায়ী কাউকে দণ্ডিত বা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। টর্ট আইন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। টর্ট আইন হলো একটি নাগরিক আইন, যা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করার পর ক্ষতিপূরণ বা অন্য ধরনের প্রতিকার দেওয়ার প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত একে অপরের অধিকার ভঙ্গের মাধ্যমে ঘটে। যেমন-শারীরিক আঘাত, মানসিক আঘাত বা সম্পত্তির ক্ষতি। টর্ট আইনের অধীনে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন-অপরাধমূলক টর্ট, নির্যাতন বা কুৎসা টর্ট, অবহেলার টর্ট এবং চুক্তিভঙ্গির টর্ট। দেশে, যদিও এ আইনের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রতিকার দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
তবে এর প্রয়োগ যথেষ্ট সক্রিয় নয়। এই আইনের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব, আইনি কাঠামোর দুর্বলতা অনেক সময় বাধার সৃষ্টি করে। দেশে টর্ট আইনের প্রচলন তেমন জনপ্রিয় নয়। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফৌজদারি বা অন্যান্য আইনের অধীনে নিষ্পত্তি হয়। যার কারণে টর্ট আইন অনেক সময় অগ্রাহ্য হয়। দেশের বিচারব্যবস্থা সঠিকভাবে কার্যকর করার জন্য এই আইনের প্রসার দরকার। প্রমাণ বা সাক্ষী সংকট, আইনি দিকনির্দেশনার অভাব, মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘ সময়কাল দেশের টর্ট আইনের জন্য বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে যেখানে টর্ট আইন কার্যকর হতে পারে, সেখানে অনেক সময় তা সহজভাবে প্রয়োগ হয় না। উদাহরণস্বরূপ, গাড়ি দুর্ঘটনার মতো সাধারণ ঘটনার ক্ষেত্রে টর্ট আইনের অধীনে ক্ষতিপূরণের মামলা করা যায়, কিন্তু অনেক সময় তা দীর্ঘ সময় নেয়। মামলার জটিলতা বেড়ে যায়। এ ছাড়া ভ্রান্তি বা কুৎসা সম্পর্কিত মামলাগুলোও বেশ কিছু ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিষ্পত্তি হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে টর্ট আইনের প্রয়োগ হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত আঘাত বা অন্যান্য ক্ষতি সম্পর্কিত। একাধিক দুর্ঘটনা এবং রোগ-বালাইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে টর্ট আইনে ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করা হয়েছে। তবে তা প্রায়ই দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে সমস্যায় পড়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যেমন কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। খাদ্য মজুদের কার্যক্রম পরিচালনা করা, যা পরোক্ষভাবে টর্ট আইনের প্রয়োগে সহায়তা করতে পারে। তবে টর্ট আইন সংক্রান্ত অনেক সমস্যার জন্য সরকারের আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বিশেষত, আইনি কাঠামোকে আরো উন্নত করা। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যাতে মানুষ নিজের অধিকার সম্পর্কে জানে এবং টর্ট আইনের আওতায় নিজেদের ক্ষতির জন্য দাবি জানাতে পারে। টর্ট আইনের বাস্তব প্রয়োগে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা হলো মামলার জটিলতা, দীর্ঘ সময়কাল এবং দোষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করার ক্ষেত্রে আইনি ঘাটতি। অনেক ক্ষেত্রে এসব সমস্যার কারণে সাধারণ মানুষ সঠিক সময়ে ক্ষতিপূরণ পায় না। আইনি জটিলতা, মামলা সংক্রান্ত প্রমাণের অভাব এবং দালাল বা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কখনো কখনো ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনি সচেতনতার অভাব এবং টর্ট আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা করার সুযোগ পায় না।
আইনি সহায়তার জন্য আইনজীবীদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বাড়ানোর প্রয়োজন। দেশে টর্ট আইনের প্রচলন এবং বাস্তব প্রয়োগ এখনো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনি সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রয়োগে কিছু উন্নতি এসেছে। আইনি কাঠামো এবং বিচারিক প্রক্রিয়া উন্নতির মাধ্যমে টর্ট আইনকে কার্যকর করা সম্ভব। এটি মানুষের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এর সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আইনি এবং সামাজিক প্রতিকূলতা দূর করা একান্ত প্রয়োজন।