
নদীপথ একসময় ছিল বাংলাদেশের মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ সেই নদীপথ আজ হত্যার পর মরদেহ ফেলার ডাম্পিং জোনে পরিণত হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে চারটি মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দেড় বছরে নদী থেকে ৭৪১টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯১ জনের পরিচয় আজও অজ্ঞাত। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৪৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে এবং প্রায় এক-তৃতীয়াংশের পরিচয়ই শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
এই পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলার অবনতিই নয়, বরং মানবাধিকার সংকটেরও প্রতিচ্ছবি। অনেক ক্ষেত্রেই নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার কোনো উত্তর পাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় পানিতে থাকার কারণে মরদেহ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। জনবল ও আধুনিক লজিস্টিক ঘাটতির কারণে এই সংকট আরো গভীর হয়েছে।
প্রশ্ন জাগে, নদীপথ কেন ক্রমেই অপরাধীচক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে? মাদকপাচার, মানবপাচার, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত শক্তিগুলো নদীকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। সেই সঙ্গে অন্য জায়গায় খুন করে লাশ গুম করার জন্য তারা ব্যবহার করছে নদীকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর টহল ও নজরদারির সীমাবদ্ধতা অপরাধীদের কার্যক্রমকে আরো উৎসাহিত করছে।
এখন প্রয়োজন নৌ পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো। আধুনিক প্রযুক্তি, পর্যাপ্ত জনবল ও ফরেনসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দ্রুত মরদেহ শনাক্ত করা যায়। একই সঙ্গে নদী ও তীরবর্তী অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতের পর সিসিটিভি স্থাপন করে, নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করতে হবে। এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে হবে। পাশাপাশি নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও ডাটাবেস হালনাগাদ রাখা প্রয়োজন। রাষ্ট্রকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে নদী আবার জীবনের স্রোতধারা হয়ে ওঠে, ভয়ের প্রতীক নয়।