Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে সংবিধান কী বলে

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৫

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে সংবিধান কী বলে

প্রতীকী ছবি

রাজনীতিতে আলোচনায় আছে পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনব্যবস্থা। বলা হচ্ছে, এটি গণতান্ত্রিক উন্নয়ন কিংবা নির্বাচন সংস্কারের অংশ। কিন্তু বাস্তবে এটি ছোট গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্য এক ধরনের হুমকি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ও আত্মসমর্পণের শামিল। কারণ এই ব্যবস্থায় জনগণের সরাসরি মত প্রকাশের অধিকার কার্যত খর্ব হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধান জনগণের সার্বভৌমত্বের নীতিকে মূল ভিত্তি হিসেবে স্বীকার করেছে-প্রস্তাবনা ও অনুচ্ছেদ ৭ এর মাধ্যমে। জনগণ সরাসরি ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন, এই নীতিই সংবিধানের স্বীকৃতি। বর্তমান একক সদস্যভিত্তিক আসন ব্যবস্থায় ভোটার তার প্রার্থীকে বেছে নেন এবং তার কাছে জবাবদিহি দাবি করতে পারেন। কিন্তু পিআর ব্যবস্থায় ভোটার সরাসরি প্রার্থীকে ভোট দেন না, বরং একটি রাজনৈতিক দলকে ভোট দেন। পরে সেই ভোটের অনুপাতে দল সংসদে আসন পায় এবং প্রার্থী মনোনীত হয় দলীয় সিদ্ধান্তে। এতে ভোটার ও প্রতিনিধির সরাসরি সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায়। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হওয়ার কথা উল্লেখ আছে। বাংলাদেশে বরাবরই ৩০০ আসনে সরাসরি ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছে। পাশাপাশি রয়েছে সংরক্ষিত মহিলা আসন। 

জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি সংসদে গিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করে থাকেন। আর পিআর পদ্ধতিতে জনগণ জানতেই পারবেন না তাদের এলাকার এমপি কে হবেন। ফলে প্রতিনিধি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থেকে দলের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যেখানে আগে থেকেই দলীয় প্রধান ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রভাব বিস্তার করে মনোনয়ন নিয়ন্ত্রণ করেন, সেখানে পিআর ব্যবস্থা সেই ক্ষমতাকে আরো কেন্দ্রীভূত করবে। জনপ্রিয়তার বদলে আনুগত্য হবে প্রার্থী হওয়ার মূল যোগ্যতা। এ ছাড়া বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাস স্থানীয় জনসম্পৃক্ততার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর গণভোট, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কিংবা সংসদ নির্বাচন সবই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। পিআর সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশের সংবিধানের মূল নীতি হলো, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। পিআর চালু হলে সেই ক্ষমতা জনগণের হাত থেকে সরে গিয়ে কিছু রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে কেন্দ্রীভূত হবে। এটি গণতন্ত্র, জনগণের অংশগ্রহণ ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অতএব, বাংলাদেশের বাস্তবতায় পিআর প্রবর্তন মানে শুধু নির্বাচনী পদ্ধতির পরিবর্তন নয়; এটি হবে গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার ভাঙন এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রকাশ। গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে শুধু নির্বাচন আয়োজন যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি। নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে প্রকৃত স্বাধীন, প্রশাসনকে করতে হবে নিরপেক্ষ এবং সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মতো অপ্রয়োজনীয় ও অজনপ্রিয় ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে আরো দূরে সরিয়ে দেবে। বরং জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার ও দায়বদ্ধতা বজায় রেখে একটি স্বাধীন, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই হতে পারে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথ। তবে সেই পথে এখনো কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫