Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানের দায়িত্ব কার

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৭

বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানের দায়িত্ব কার

প্রতীকী ছবি

পারিবারিক আইনে প্রায় সব ধর্মেই বাবা সন্তানদের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক। সাধারণত মা-বাবার বিচ্ছেদ বা তাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তখনই অভিভাবকত্বের বিষয়টি সামনে আসে। বাংলাদেশে সন্তানের হেফাজত ও অভিভাবকত্ব মূলত তিনটি আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। এগুলো হলো মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরিয়ত) প্রয়োগ আইন, ১৯৩৭। অভিভাবকত্ব ও নাবালক আইন, ১৮৯০ এবং পারিবারিক আদালত অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৫।

মুসলিম ব্যক্তিগত আইন ১৯৩৭-এর ২ ধারা অনুসারে, মুসলমানদের ব্যক্তিগত বিষয়, যেমন-বিয়ে, তালাক, সন্তানের কাস্টডি‌ বা‌ হেফাজত এবং উত্তরাধিকার ইত্যাদি ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী পরিচালিত হবে। মুসলিম পারিবারিক আইনে সন্তানের তিন ধরনের অভিভাবকত্বের কথা বলা হয়েছে-সন্তানের অভিভাবকত্ব, সন্তানের সম্পত্তির অভিভাবকত্ব এবং সন্তানের বিয়ের অভিভাবকত্ব। এই আইনে শিশুসন্তানের সবচেয়ে বড় অধিকারী হচ্ছেন ‘মা’। মুসলিম আইনে মায়ের দায়িত্ব হলো সন্তানের দেখাশোনা করা, সঠিকভাবে প্রতিপালন করা। তবে মাকে কখনোই সন্তানের আইনি অভিভাবক হিসেবে গণ্য করা হয় না। মুসলিম আইনে শিশুসন্তানের ক্ষেত্রে মা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সন্তানের জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণভাবে ছেলে সন্তানের জন্য মায়ের জিম্মাদারির মেয়াদ সাত বছর এবং মেয়ে সন্তানের জন্য বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত থাকে। তবে আদালত যদি মনে করেন যে, মায়ের কাছে সন্তানের থাকা তার শারীরিক এবং মানসিক উন্নতির জন্য উপকারী, তাহলে আদালত সেই সন্তানের জিম্মাদারি বাড়িয়ে দিতে পারেন। এমনকি বয়সের সীমা ছাড়িয়েও মা সন্তানকে তার জিম্মায় রাখার জন্য রায় দিতে পারেন।

একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, যদি মা পুনরায় বিয়ে করেন, তবে সে সন্তানকে জিম্মায় রাখার অধিকার হারান। কিন্তু এটি সব সময় সত্য নয়। আদালত মায়ের পুনরায় বিয়ে করার পরও সন্তানের কল্যাণকে বিবেচনায় নিয়ে সন্তানের জিম্মাদারি মায়ের কাছে রাখতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রে আদালত নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবে। অভিভাবকের দায়িত্ব শুধু সন্তানের শারীরিক, মানসিক ও শিক্ষাগত উন্নতি নিশ্চিত করতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সন্তানের ভরণ-পোষণ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্য সব খরচের দায়িত্বও তাদের নিতে হয়। এটি একজন অভিভাবকের নৈতিক এবং আইনি দায়িত্ব। যদি অভিভাবক হিসেবে কারো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো মতবিরোধ থাকে-এক পক্ষ সন্তানের অভিভাবকত্বের জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে চায়, তাহলে পারিবারিক আদালতে মামলা করা যায়। 

যদি মা-বাবার মধ্যে সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং আপস-মীমাংসায় পৌঁছানো সম্ভব না হয়, তখন পারিবারিক আদালত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। আদালত সন্তানের কল্যাণ এবং তার ভবিষ্যতের বিষয়ে চিন্তা করে উপযুক্ত রায় দেবেন। এ ছাড়া আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করা সম্ভব। একজন অভিভাবক তার সন্তানের কল্যাণের কথা ভেবে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন। আদালত সন্তানের সর্বোত্তম কল্যাণকে প্রাধান্য দেবেন। 

মা-বাবার ভালোবাসা এবং পরিচর্যা একটি শিশুর সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য। আদর্শ পরিবেশে সন্তানের বেড়ে ওঠার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা এবং কল্যাণের জন্য সহমত হওয়া উচিত। আশা করা যায়, মা-বাবা সন্তানের কল্যাণ এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের মধ্যে যেকোনো বিরোধ সমাধান করবেন এবং সন্তানের কথা ভেবে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫