
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি। একদিকে চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে নিয়োগকর্তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছেন না। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা দেশের প্রধান শ্রমশক্তি হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে দক্ষ জনশক্তির অভাবে এদের এক কোটিরও বেশি নিষ্ক্রিয়।
প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র নেই। দর্শন, ইতিহাস কিংবা সমাজবিজ্ঞানের মতো বিষয়ে বছরের পর বছর ব্যয় করে ডিগ্রি অর্জন করলেও এসবের বাস্তব প্রয়োগ বা চাকরির নিশ্চয়তা নেই। ফলে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পরও অনেককে চাকরির জন্য ঘুষ দিতে হয়, তবুও চাকরি মেলে না। এ এক ভয়াবহ জাতীয় ট্র্যাজেডি।
বিশ্ব শ্রম সংস্থার সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশের ৭৫ শতাংশ উদ্যোক্তা লোক নিতে চান, কিন্তু প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল পান না। ফ্যাশন খাত, সাপ্লাই চেইন এমনকি চামড়াশিল্পেও একই সংকট। ফলে শিল্পের প্রসার ঘটলেও দক্ষতার ঘাটতি অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে।
এই অবস্থার জন্য দায়ী একদিকে পরিকল্পনাহীন শিক্ষানীতি, অন্যদিকে শ্রমবাজারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ পাঠক্রম। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যায়, সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থায় ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে এই খাত অবহেলিত। এর ফলে চাকরিমুখী ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা গড়ে ওঠেনি।
তাই এখনই সময় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার। গতানুগতিক ডিগ্রিকেন্দ্রিক শিক্ষার প্রায়োগিক বাস্তবতা খতিয়ে দেখতে হবে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। শ্রমবাজারের ভবিষ্যৎ চাহিদা বিশ্লেষণ করে শিক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। বিদ্যমান শ্রমশক্তিকে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। নইলে আমাদের অদক্ষ যুবসমাজ কেবল অর্থনীতির বোঝা নয়, বরং সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে।