Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

গৃহকর্মীরা আইনি অধিকার কবে পাবেন?

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৫২

গৃহকর্মীরা আইনি অধিকার কবে পাবেন?

প্রতীকী ছাবি

ঢাকা শহরে গৃহকর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। নগরজীবনের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই শ্রমবাজার দ্রুত বিস্তৃত হয়েছে। তবে এই বাজার সবার জন্য এক রকম নয়; বাড়ির মালিকের অবস্থান এবং আর্থিক সামর্থ্যরে ওপর ভিত্তি করে গৃহকর্মী নিয়োগের ধরন পরিবর্তিত হয়। গৃহকর্মীদের বাজারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-অভিজাত এলাকা, উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের আবাসিক এলাকা এবং নিম্নমধ্যবিত্তদের মহল্লা।

ঢাকার গৃহকর্মীদের বেশির ভাগই নারী, যাদের অভিজ্ঞতা এবং পরিস্থিতি প্রায়ই কঠিন। শহরে গৃহকর্মীরা প্রধানত তিন ধরনের কাজ করেন : সার্বক্ষণিক গৃহকর্মী, যারা পুরো সময় বাড়িতে কাজ করেন; সকাল-সন্ধ্যা কাজ করা গৃহকর্মী, যারা দিনে কাজ শেষে রাতে বাড়িতে ফিরে যান এবং ঠিকে গৃহকর্মী, যারা একাধিক বাড়িতে কাজ করে থাকেন। গুলশান-বনানী-বারিধারার মতো এলাকাগুলোর গৃহকর্মীরা মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা উপার্জন করেন। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে এবং সার্বক্ষণিক কর্মীদের জন্য থাকার স্থানও দেওয়া হয়। তবে অনেক সময় চিকিৎসার খরচ এবং অন্যান্য সুবিধা তারা নিজেরাই বহন করেন। নিম্নবিত্ত এলাকার গৃহকর্মীদের মাসিক বেতন সাধারণত দুই-তিন হাজার টাকার বেশি হয় না। তারা সাধারণত পুরোনো জামাকাপড় পান এবং খাবারের ব্যবস্থা সীমিত থাকে। গৃহকর্মীদের জীবন সব সময় চাপের মধ্যে থাকে। অনেক গৃহকর্মী শহরে বাস করলেও তাদের পরিবার অন্যত্র থাকে।

কিছু পরিবারে গৃহকর্মীদের প্রতি আচরণে সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব দেখা যায়। বেতন দেওয়ার সময় কখনো বিলম্ব হয় বা বেতন আটকে রাখা হয় যাতে গৃহকর্মী কাজ ছেড়ে যেতে না পারেন। আবার খাবারের ক্ষেত্রেও বৈষম্য দেখা যায়; গৃহকর্মীদের জন্য প্রায়ই গৃহস্থের খাবারের উচ্ছিষ্ট থাকে, যা তাদের আত্মসম্মানকে ক্ষুণ্ন করে। গৃহকর্মীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও খুব সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে মারধর, না খাইয়ে রাখা এমনকি গুরুতর আঘাত দেওয়া পর্যন্ত ঘটে। মানসিক নির্যাতন যেমন বেতন আটকে রাখা, ছোট ভুলের জন্য জরিমানা বা পেটানো, তেমনি যৌন নিপীড়নও ঘটে, যা খুবই ভয়াবহ। গৃহকর্মীরা ভয় বা বাধ্যতার কারণে এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারেন না।

দেশে গৃহকর্মীদের জন্য ২০১৫ সালে ‘গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি’ প্রণয়ন করা হয়, যেখানে তাদের কাজের পরিবেশ, ন্যায্য মজুরি, অবসর এবং শিশুশ্রম থেকে সুরক্ষার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি বাধ্যতামূলক না হওয়ায়, কার্যত গৃহকর্মীরা আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। গৃহকর্মীদের কল্যাণের জন্য কার্যকর আইন নেই। এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। সরকারিভাবে গৃহকর্মীদের জন্য একটি শক্তিশালী আইন তৈরি করতে হবে, যা তাদের সুরক্ষা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করবে।

গৃহকর্মীদের সংগঠনগুলোকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ‘জাতীয় নারী গৃহকর্মী ইউনিয়ন’ এবং ‘গৃহকর্মী অধিকার নেটওয়ার্ক’ এই দুটি সংগঠন গৃহকর্মীদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে গৃহকর্মীদের অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। গৃহকর্মীদের জন্য সঠিক বেতন কাঠামো, সুযোগ-সুবিধা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এতে তাদের অর্থনৈতিক অবদান স্বীকৃত হবে এবং সমান সুযোগ-সুবিধা দাবি করা সহজ হবে। বিশ্বব্যাপী গৃহকর্মীদের জন্য জাতিসংঘের ১৮৯ নম্বর সনদ রয়েছে, যা ২০১১ সালে গৃহীত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সই করা সত্ত্বেও এটি এখনো অনুমোদন হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে গৃহকর্মীরা আইনি সুরক্ষা ও সঠিক অধিকার পেতে পারেন। এই বাস্তবতায়, বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের জন্য আইনি ও সামাজিক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫