Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

জুলাই সনদকে গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা দিতে হবে: সামান্তা শারমিন

Icon

শিতাংশু ভৌমিক অংকুর

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪১

জুলাই সনদকে গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা দিতে হবে: সামান্তা শারমিন

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন

জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। তিনি অভিযোগ করেছেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের দলে ভাঙন ধরাতে চাইছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নানা কর্মকাণ্ডেও তিনি প্রকাশ করেছেন অসন্তোষ। সাম্প্রতিক দেশকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন চেয়েছেন গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম এই নেত্রী। দাবি করেছেন, এনসিপির যে রাজনীতি, সেটিই সঠিক এবং জনগণ এই রাজনীতি গ্রহণও করেছে। তার সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের রিপোর্টার শিতাংশু ভৌমিক অংকুর।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে এনসিপি ১৫০টি আসন পেতে পারে। এই আত্মবিশ্বাসের উৎস কী?

ভোটের আগে কোনোভাবে বলা যায় না আসলে কত আসন পাওয়া যাবে। তবে আমাদের দেখতে হবে ডাকসু নির্বাচন। সেখানে আমরা দেখলাম, মানুষ যদি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার উপায় কারো নেই। আমরা চাই সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করতে। তার জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ধর্মতাত্ত্বিক পরিচয় যেন মুখ্য না হয়ে ওঠে। তার অধিকার আদায়ের লড়াই এবং অধিকারভিত্তিক আন্দোলন যেন মুখ্য হয়ে ওঠে। সেই জায়গা থেকে আমরা বলছিলাম, সব ধরনের মানুষকে আমরা আমাদের দলে যুক্ত করব। আমরা চাই যারাই আসবে তারা ব্যক্তি পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশি হয়ে উঠবে, মূলধারার রাজনীতিতে অবদান রাখবে।

ডাকসু নির্বাচনে শিবির এই রাজনীতিটাই করেছে। তারা ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী প্যানেল বলে পরিচিত করিয়েছিল। আমরা এনসিপি যে বয়ানটি তৈরি করেছি, তারা সেটা উপস্থাপন করেছে, শিক্ষার্থীরা সেটাকে গ্রহণ করেছে। তার মানে আমাদের রাজনীতিটা ঠিক আছে। সেই সঙ্গে আমরা দেখলাম প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল, তাদের রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন সেভাবে পেরে উঠল না।

এই পুরো প্রক্রিয়া থেকে আমরা শিখলাম যে, এবার ভোট অন্যবারের ভোটের চেয়ে আলাদা হবে। আপনি যতই সমীকরণ করেন না কেন, যতই জরিপ করেন না কেন, যত যাই করেন না কেন, সেটা আপনি ভোটের মাঠে নাও দেখতে পারেন। এবার মানুষ ভোট দেবে ব্যক্তির সুনাম, আস্থা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা, মর্যাদা ও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেখে।

আপনারা যে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলছেন, আর এখন যে বলছেন এবার মানুষ ভোট দেবে ব্যক্তিকে দেখে, তাহলে দুই দাবি সাংঘর্ষিক হয়ে গেল না?

না, মোটেও সাংঘর্ষিক না। দলগুলোর মধ্যে যেসব ব্যক্তি যে আসনে দাঁড়াবেন, সেই ব্যক্তিদের চরিত্র, তার স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা এবং তার ইশতেহারের বিষয়গুলো মুখ্য হয়ে উঠতে পারে। আরেকটা বিষয় দেখতে হবে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী। এটা মাথায় নেওয়া দরকার। এই তরুণ জনগোষ্ঠী যদি মনে করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন শক্তির দরকার, তাহলে এই ভোটিং কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

আপনি বললেন ডাকসু নির্বাচনের কথা। ডাকসু নির্বাচন কি সুষ্ঠু হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

হ্যাঁ, আমি মনে করি ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

কিন্তু আপনাদের ছাত্রসংগঠন বাগছাস তো এই নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ ও অনিয়মের কথা বলছে।

দেখুন, এখানে একদম পুরোপুরি পরিচ্ছন্ন হয়েছে, সেটা কেউই বলতে পারবে না। কিছু কিছু ঝামেলা থাকতে পারে। কিন্তু আগে যেটা করা হতো, সেটা এবার হয়নি। বাগছাস যে দাবিটি করেছে সেটা তাদের স্বতন্ত্র দাবি। ওটাকে খারিজ করা আমার কাজ না।

গণঅধিকার পরিষদ ও নাগরিক পার্টির মধ্যে একীভূত হওয়ার যে আলাপ উঠেছে সেটি কতটুকু সত্য?

আমাদের কাছে মনে হয়েছে একসঙ্গে আরো বেশি কাজ করা যায়। এখন নির্বাচনী জোট নাকি দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করবে, এই বিষয়গুলো ঠিক করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় না এখন আর ওই (একীভূত) হওয়ার কোনো সুযোগ আছে। একীভূত হওয়া কোনো দলের জন্য সম্মানজনক হবে না। হলেও সেটা খুব বিশেষ পরিস্থিতিতে, দুই দলের বা এনসিপির জায়গাটা, তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, রাষ্ট্রীয় রূপকল্প এবং দলের চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে যতটুকু করা সম্ভব, সেটা করব।

কিন্তু একসঙ্গে কাজ করার এই চিন্তাই বা কেন?

গণঅধিকার পরিষদ পাঁচ বছর ধরে পুরোনো একটি রাজনৈতিক দল। তারা নিবন্ধিত, প্রতীকও আছে। তারা ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে এসেছে। মানুষের অনেক আশা-আকাক্সক্ষা ছিল এই দল ও তাদের নেতাদের নিয়ে। দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ তাদের সমর্থন জুগিয়েছে, সহযোগিতা করেছে। কিন্তু দলটা আবার মানুষকে অনেক জায়গায় হতাশও করেছে। এখন গণ-অভ্যুত্থানের পরে একটা সুযোগ এসেছে, তরুণদের একটা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে, এই আশাটা শুধু মানুষের নয়, আমাদেরও।

কেউ কেউ এনসিপি থেকে বের হয়ে নতুন দল গঠনের চেষ্টা করছে বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা সব সময়ই সম্ভাবনাময় দলকে ভাঙার চেষ্টায় থাকে। নতুন একটা রাজনৈতিক দল আসা মানে এই চেষ্টা করতেই পারে। আপনারা দেখছেন যে দিল্লিবিরোধী অবস্থান থেকে আমাদের রাজনীতির ছকটা এসেছে। এই ছককে নষ্ট করার জন্য চেষ্টা যদি তারা না করত, তাহলে বরং আমি অবাক হতাম। তবে আমি মনে করি, তাদের চেষ্টা সফল হবে না। কারণ এখানে এজেন্ট হয়ে যারা ভাঙার কাজ করছে, সেই সংখ্যাটা খুবই কম।

জুলাই পদযাত্রায় সারা দেশ ঘুরলেন এবং সামনে জাতীয় নির্বাচন, সারা দেশে এনসিপির প্রস্তুতি কেমন?

পুরো পদযাত্রায় আমি কোনো নির্বাচনের কথা শুনিনি। আমি প্রায় ৫৭ জেলা ঘুরেছি। সেখানে আমি কোথাও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা শুনিনি। আমরা পদযাত্রায় গেছি মানুষের কথা শোনার জন্য। মানুষ বলছে, তাদের নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে। তারা বুঝতে পারছে যে সিস্টেমটা অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই 

গণ-অভ্যুত্থানের মতো ঘটনা ঘটছে, মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। গণপরিষদ নির্বাচন না হলে এনসিপি জাতীয় নির্বাচনে যাবে?

গণপরিষদ নির্বাচন করার জন্য এবারই উর্বর সময় ছিল। ঐকমত্য কমিশনকে আপনি ৯ মাস খাটিয়েছেন, সেখান থেকে একটি কাগজ বের করেছেন। সেই কাগজ আপনি কী দিয়ে বৈধতা দেবেন? পরবর্তী সরকার এসে সুপ্রিম কোর্টকে বলে এগুলো মুছে ফেলবে। এর একটা জিনিসও টিকবে না। দলগুলো এখন খুব ভালো ভালো কথা বলছে, ‘হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই করব!’। নব্বইতেও তো এমন বলেছিল, পরে তো তা টেকেনি। তার মানে জুলাই সনদকে অবশ্যই গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা দিতে হবে।

কেন এই জুলাই সনদ একেবারেই কাজে লাগবে না আমরা এখনই বলে দিচ্ছি। বিএনপি এটাকে কোনোভাবেই কার্যকর করবে না। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। এ জন্য দরকার ছিল গণপরিষদ। গণপরিষদ নির্বাচনে যারা জয়ী হয়ে আসবে তারা নতুন করে সংবিধান বানাবে। কিন্তু যদি এখন গণপরিষদ ছাড়া নির্বাচন হয়, তাহলে নির্বাচিত সরকারকে আবার একটি গণভোট করে সংবিধান তৈরি করতে হবে, যেটা তারা করবে না।

আপনাদের দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-আক্রমণ হচ্ছে এবং আপনারা বলছেন সরকার আপনাদের বা জুলাই শক্তিদের সহযোগিতা করছে না। কেন এমন হচ্ছে?

সরকার সহযোগিতা করবে না। এই সরকার তো ভুল, সবারই ভুল। 

এই সরকার আনার ক্ষেত্রে আপনাদেরও তো ভূমিকা ছিল।

বললাম তো আমাদের জায়গা থেকে, বাংলাদেশ সরকারকে যারা ম্যান্ডেট দিয়েছে, তাদের সবার জন্য একটা ভুল, অন্তর্বর্তী সরকার একটা ভুল।

আপনি যদি বলেন, এই সরকার কার জন্য কাজ করে?

তারা কাজ করে যারা এস্টাবলিশমেন্টের পক্ষে, কাজ করে যারা এর আগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, কাজ করে যারা দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি বজায় রাখতে চায়, যারা তদবির বাণিজ্য বজায় রাখতে চায়, যারা আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনতে চায়, তাদের পক্ষে। বাকি সবার জন্য এই সরকার ভুল।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫