
বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম হলো ভরণপোষণ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্ত্রীকে পরিত্যাগ বা সংসার থেকে বের করে দেওয়ার পর স্বামী ভরণপোষণ দিতে অস্বীকার করেন। এমন পরিস্থিতিতে নারীরা প্রায়ই অনিশ্চয়তায় পড়ে যান, তারা ভাবেন-‘কীভাবে আইনি প্রতিকার পাওয়া সম্ভব, কোথায় গেলে সাহায্য মিলবে।’
আইন বলছে, ভরণপোষণ না দিলে স্ত্রী আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ন্যায়বিচার পেতে পারেন। স্ত্রী ভরণপোষণ না পেলে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ অনুযায়ী মামলা করতে পারেন। এই আইনের আওতায় বিবাহবিচ্ছেদ, দেনমোহর, সন্তান লালনপালন ও ভরণপোষণ সংক্রান্ত সব মামলা পারিবারিক আদালতে শুনানি হয়। স্বামী যদি স্ত্রীকে সংসার থেকে বের করে দেন বা যথাযথ কারণ ছাড়াই আর্থিক সহায়তা বন্ধ করেন, তাহলে আদালতকে বিষয়টি জানিয়ে মাসিক ভরণপোষণ দাবি করা যায়। আদালত উভয় পক্ষের আর্থিক অবস্থা ও জীবনযাত্রা বিবেচনা করে নির্ধারিত পরিমাণে ভরণপোষণের আদেশ দিতে পারেন। এ ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে স্ত্রী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন। এই আইনে উল্লেখ আছে, স্বামী
ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী বা সন্তানের জন্য ভরণপোষণ দিতে অস্বীকার করলে আদালত তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন। আদেশ অমান্য করলে আদালত জরিমানা বা কারাদণ্ড দিতে পারেন। ভরণপোষণ না দেওয়ার পাশাপাশি যদি শারীরিক, মানসিক বা আর্থিক নির্যাতনের অভিযোগ থাকে, তাহলে গার্হস্থ্য সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০-এর আওতায়ও প্রতিকার পাওয়া যায়। এই আইনে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, বাসস্থানের নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ আদালত দিতে পারেন। ভরণপোষণ দাবির জন্য সাধারণত যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে রয়েছে বিবাহের দলিল বা বিয়ের নিবন্ধন, স্বামীর আয়-উৎসের প্রমাণ (যেমন-চাকরির পে-স্লিপ, ব্যবসার দলিল বা ব্যাংক হিসাব) এবং স্ত্রী কেন স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন না, তার কারণ সংক্রান্ত তথ্য। সন্তান থাকলে জন্মনিবন্ধন বা শিক্ষার খরচের কাগজপত্রও সহায়ক প্রমাণ হিসেবে আদালতে দাখিল করা যায়। প্রথমে অনেক সময় আইনজীবীর মাধ্যমে স্বামীকে একটি নোটিশ পাঠানো হয়, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভরণপোষণ প্রদানের অনুরোধ থাকে। তাতে সাড়া না পেলে পারিবারিক আদালতে মামলা করা হয়। আদালত চাইলে অস্থায়ী বা ইন্টারিম ভরণপোষণের আদেশ দিতে পারেন। যাতে মামলার নিষ্পত্তির আগেই স্ত্রী কিছু আর্থিক সহায়তা পান। যদি আদালতের আদেশের পরও স্বামী ভরণপোষণ না দেন, তাহলে আদালতের নির্দেশে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে। এমনকি আদালত অবমাননার অভিযোগে শাস্তিও হতে পারে। স্ত্রীকে ভরণপোষণ দেওয়া কোনো দয়া নয়, এটি তার আইনসম্মত অধিকার। স্বামী সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে আইন তার পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ রেখেছে। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী নারীদের নীরব না থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যাতে নারীর ন্যায় ও অধিকার দুটোই সুরক্ষিত থাকে।