Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

অপরকে পীড়ন করলে, নিজেও পীড়িত হতে হয়

Icon

কাজী সানজীদ

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৪৫

অপরকে পীড়ন করলে, নিজেও পীড়িত হতে হয়

এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ভারত তার সব ছোট প্রতিবেশীর সঙ্গে শত্রুতা বজায় রেখেছে। তার একমাত্র কারণ, সে বলতে চায় আমি বড়, তোমাকে আমার কথামতো চলতে হবে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ-এই অভিজ্ঞতায় জর্জরিত। অন্যদিকে ভুটানে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রথম থেকেই অবস্থান করছে। শুধু তা-ই নয়, ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী দেশটির কোনো স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি থাকতে পারবে না।

পাকিস্তানের সঙ্গে অবশ্য ভারত সুবিধা করতে পারে না। তারা সাহসী জাতি এবং ভারতের খাসলতের বিষয়ে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। উপরন্তু, সে দেশে বেঈমান নেই।

সম্প্রতি ভারত নিজে শ্যাম চাচা কর্তৃক প্রচণ্ড পীড়নের মধ্যে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিক সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ভারতকে আমরা সাইজ করব।’ এই সাইজের চাপে ভারত চ্যাপ্টা হয়ে হাঁসফাঁস করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোপনে যুক্তরাষ্ট্রর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে কান্নাকাটি করছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এটাই নিয়ম।

ভারত বড়জোর একটি মধ্যম স্তরের শক্তি। কিন্তু তার খায়েশ, বৃহৎ শক্তির মতো আচরণ। নিজের সাধ্য না বুঝে অসাধ্য আচরণ করতে চাইলে তার হিসেব তো চুকাতেই হবে। শাসক দল এবং একই মানসিকতার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা অশিক্ষার কারণে এই পরিষ্কার বাস্তবতা বুঝতে অক্ষম। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র একসময় ভেবেছিল, বড় আয়তন ও বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারতকে দিয়ে সে চীনকে মোকাবিলা করবে। কিন্তু তার সে ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি। তারা তাদের বড় বড় করপোরেট স্বত্বাকে ভারতে কারখানা স্থাপনের উৎসাহ দিয়েছিল, তারাও এসেছিল। কিন্তু সেখানে তারা নজিরবিহীন বাধাবিপত্তির মধ্যে পড়ে যায়। তার ওপর উৎপাদিত বস্তুর বেশির ভাগ উপাদান চীন থেকে আসে। অন্যদিকে ভারত শ্যামচাচার নিষেধ অমান্য করে নিজের স্বার্থে রাশিয়া থেকে স্বল্পমূল্যে তেল কেনা অব্যাহত রাখে-যা যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করে। তাদের অভিযোগ, এই তেল বিক্রির অর্থেই ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে ভারত ডলার কামাচ্ছে এবং তা দিয়ে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। সেই অর্থেই রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কাজেই এখন ভারতকে টাইট দেওয়ার সময় এসে গেছে।

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরাট বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে। তারা চাপ দিচ্ছে, ভারতের বাজারে কৃষিপণ্যসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্য ঢুকতে দিতে হবে। কিন্তু ভারত তা করতে অক্ষম। এই অভিযোগ এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে এখন তারা ভারতের টুঁটি চেপে ধরেছে। ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিযোগ্য সব ধরনের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারা আরো বলছে, ভারত থেকে আসা ওষুধশিল্পের কাঁচামালের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক বসাবে। এটা হলে ভারতের আত্মসমর্পণ ছাড়া গত্যন্তর নেই। তাদের হাতে খেলার মতো কোনো কার্ড নেই। 

এ ছাড়াও শ্যাম চাচা দেখেছেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পাক-ভারত যুদ্ধে ছোট দেশ পাকিস্তানের কাছে তারা লজ্জাকরভাবে পরাজিত হয়েছে। কাজেই এর ওপর ভরসা করে লাভ নেই।

অন্যদিকে শ্যাম চাচা চীনকে চাপ দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ চীন একটি পরাশক্তি। তার হাতে খেলার মতো অসংখ্য কার্ড রয়েছে। তারা চাচাজিকে হুমকি দিয়ে বলেছে, রেয়ার আর্থ পদার্থ রপ্তানি বন্ধ করে দেব। এই বস্তুটি ইলেকট্রনিকস ও অস্ত্রশিল্পে অপরিহার্য। এটি শুধু চীনেই পাওয়া হয়। কিছু কাঁচামাল অন্যান্য দেশে উৎপাদিত হলেও তা প্রসেস করার শিল্প শুধু চীনেই আছে। কোনো দেশ নতুন করে এই শিল্প স্থাপন করতে চাইলে তা উৎপাদনে যেতে অন্তত ১০ বছর সময় লাগবে। উপরন্তু চীন অন্যান্য নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী রপ্তানি বন্ধ করে দিলে যুক্তরাষ্ট্র অচল হয়ে পড়বে। আরো আছে-চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি  করে। তা বন্ধ করে দিলে মার্কিন অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চীন তিন দশক ধরে নিজেকে তিল তিল করে যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ হওয়ার জন্য তৈরি করেছে। তাই শ্যামচাচা চাইলেই চীনকে চাপ দিতে পারছে না।

বরং এও জানা যাচ্ছে, পর্দার আড়ালে দুজনের আলোচনা চলছে। ড্রাগন শ্যাম চাচাকে প্রস্তাব দিয়েছে, তুমি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করো যে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না। এটা করলে তোমাকে আমি অনেক অর্থ ও সুযোগ-সুবিধা দেব। শ্যাম চাচাও গুরুত্বের সঙ্গে তা বিবেচনা করছে। কারণ তার নিজ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ করুণ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫