Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

আমিন দিয়ে জমি মেপে হয়রানি, করণীয় কী?

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:০২

আমিন দিয়ে জমি মেপে হয়রানি, করণীয় কী?

প্রতীকী ছবি

জমি নিয়ে বিরোধ একটি জটিল ও বহুল প্রচলিত সামাজিক সমস্যা। ব্যক্তিগত আমিন বা দালালের মাধ্যমে জমি মাপার প্রবণতা গ্রামীণ সমাজে এক ধরনের অঘোষিত প্রথায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় প্রায়ই দুর্নীতি, ভ্রান্তি, পক্ষপাতিত্ব ও প্রতারণার মতো অনিয়ম দেখা দেয়, যার ফলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং একই জমি নিয়ে একাধিক মামলা আদালতে বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে।

এই বাস্তবতায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে জমি মাপজোখ ও আপস-মীমাংসা একটি কার্যকর, স্বচ্ছ, সময়োপযোগী ও আইনসম্মত সমাধান হিসেবে সামনে এসেছে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিস একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, যা ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ অনুসারে পরিচালিত হয়। এখানে নিযুক্ত কর্মকর্তারা সাধারণত সিনিয়র সহকারী জজ বা যুগ্ম জেলা জজ, যারা পেশাদার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে তাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত জমি মাপজোখ কার্যক্রমের আইনি গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি এবং এটি আদালতের স্বীকৃত নথি হিসেবে গণ্য হয়।

জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের স্বাক্ষরযুক্ত আপসনামা বা চুক্তিপত্র সিভিল কোর্টের ডিক্রির সমান কার্যকর, যা ভবিষ্যতে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ পক্ষগণ নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র, যেমনÑদলিল, খতিয়ান, ম্যাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করেন, এতে বিরোধের সীমানা ও প্রকৃতি স্পষ্ট হয় এবং পরবর্তী প্রক্রিয়া নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে শুরু হয়। প্রতিপক্ষকে নোটিশ দিয়ে আলোচনায় বসানো হয় এবং উভয় পক্ষ সম্মত হলে প্যানেলভুক্ত অনুমোদিত সার্ভেয়ার নিয়োগ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় পক্ষগণের অংশগ্রহণ ও সম্মতি অপরিহার্য, ফলে সম্পূর্ণ কার্যক্রম স্বচ্ছ, অংশীদারিমূলক ও দায়বদ্ধ হয়। সার্ভেয়ার সরেজমিনে জমি মাপেন, এ সময় উভয় পক্ষকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়, যাতে কোনো পক্ষপাত বা গোপনীয়তার সুযোগ না থাকে।

মাপজোক শেষে সার্ভেয়ার একটি লিখিত প্রতিবেদন তৈরি করেন, যার একটি কপি আবেদনকারী ও প্রতিপক্ষ উভয়কে সরবরাহ করা হয়। মূল নথি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে সংরক্ষিত থাকে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গণ্য হয়। যদি কোনো পক্ষ আপত্তি জানায়, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার প্রয়োজন মনে করলে সরেজমিন তদন্ত করেন বা নতুন সার্ভেয়ার নিয়োগ করেন। যথাযথ যাচাই-বাছাই শেষে উভয় পক্ষের সম্মতিতে একটি আপসনামা তৈরি হয়, যা আদালতের ডিক্রির সমান আইনি ক্ষমতাসম্পন্ন। এই প্রক্রিয়ায় কয়েকটি বড় সুবিধা রয়েছে, প্রথমত, এটি আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য ও কার্যকর; দ্বিতীয়ত, সমাধান হয়ে গেলে নতুন করে মামলা দায়েরের প্রয়োজন হয় না; তৃতীয়ত, ব্যক্তিগত আমিন বা দালালের ভ্রান্তি, প্রতারণা ও অনিয়ম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়; চতুর্থত, প্রায় বিনা খরচে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ সমাধান পাওয়া যায়; পঞ্চমত, অভিজ্ঞ বিচারক ও অনুমোদিত সার্ভেয়ারের তত্ত্বাবধানে কাজ হওয়ায় এর নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত হয়। এতে প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিরোধ আইনসম্মত ও শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি হয়।

সুতরাং জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে জমি মাপজোক কার্যক্রম শুধু একটি প্রশাসনিক বা বিচারিক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি একটি আধুনিক, টেকসই ও ন্যায়ভিত্তিক প্রক্রিয়া, যা জনসাধারণকে দালাল, হয়রানি ও দুর্নীতির চক্র থেকে মুক্ত রাখে। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচারের সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নের পাশাপাশি আদালতের ওপর মামলার চাপও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। তাই জমি মাপজোখ বা বিরোধ নিষ্পত্তিতে এখনই জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের শরণাপন্ন হওয়াই হতে পারে আইনি ও সামাজিকভাবে সবচেয়ে নিরাপদ ও স্থায়ী সমাধান।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫