 
					বাংলাদেশে নদীভাঙন ও চর জাগা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বর্ষা মৌসুমে নদীগর্ভে জমি বিলীন হয়ে যায়, আবার শুষ্ক মৌসুমে চর জেগে ওঠে। অনেক সময় সেই চর পুরোনো জমির জায়গাতেই জেগে ওঠে, ফলে পুরোনো জমির মালিকরা আবার তাদের জমি ফিরে পাওয়ার দাবি করেন। কিন্তু এই জমি ফেরত পেতে কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা অনেকের অজানা। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী, নদীর ভেতরে জেগে ওঠা জমি বা চর সাধারণত সরকারি খাসজমি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন যে চরটি তার বা তার পূর্বপুরুষের জমির জায়গাতেই জেগেছে, তাহলে তিনি আইন অনুযায়ী জমি পুনরুদ্ধারের অধিকার রাখেন। এই ক্ষেত্রে প্রমাণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমি পুনরুদ্ধার করতে হলে আবেদনকারীকে দেখাতে হবে-১.জমিটি আগে তার বা তার পূর্বপুরুষের নামে রেকর্ডভুক্ত ছিল। ২. এটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছিল। ৩. বর্তমানে যে চরটি জেগেছে, তা সেই একই জায়গায় অবস্থিত। এসব প্রমাণের জন্য পুরোনো খতিয়ান, দলিল, মৌজা ম্যাপ, নকশা ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা জরুরি। চর জেগে ওঠার পর জমি ফেরত পেতে আবেদন করতে হয় উপজেলা ভূমি অফিসে (সহকারী কমিশনার, ভূমি)। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। সার্ভে ও তদন্ত রিপোর্টে যদি দেখা যায় জমিটি পূর্বের আবেদনকারীরই ছিল এবং এখন একই জায়গায় চর জেগেছে, তাহলে প্রশাসনিকভাবে জমি ফেরতের ব্যবস্থা করা হয়।
তবে প্রশাসনিকভাবে সমাধান না হলে জমির মালিক সিভিল কোর্টে (জজ কোর্ট) মালিকানা পুনঃস্থাপনের মামলা করতে পারেন। আদালত প্রমাণ ও সাক্ষ্য বিবেচনা করে জমি ফেরতের আদেশ দিতে পারেন। ভূমিবিষয়ক নতুন আইন ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’-এ ভূমিসংক্রান্ত অপরাধগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং পাশাপাশি দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার অনেকাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই আইনের ধারা ৮(৭) অনুযায়ী, ভূমির দখল উদ্ধারের জন্য দেওয়ানি আদালতে কোনো পক্ষের আবেদনে বা আদালত স্বেচ্ছায় বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোনো জমির দখল উদ্ধারের দায়িত্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দিতে পারবেন। তাই এই নতুন আইনটিও নদীর চরের জমি উদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
১৩ জুলাই ১৯৯৪ সালের একটি আইন রয়েছে। সেই আইনে নদীগর্ভে কারো জমি ভেঙে গেলে এবং সেই জমি ৩০ বছরের মধ্যে জেগে উঠলে পুরোনো মালিক বা তার উত্তরাধিকার সেই চরের মালিক হবে। কিন্তু ৩০ বছর পরে যদি জেগে ওঠে তবে সরকার মালিক হবে। তবে চরের জমি ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। যদি জমির পূর্বের প্রমাণ না থাকে, তাহলে সরকার সেই জমিকে খাসজমি হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে চর দখল করলে অবৈধ দখলদারি মামলা হতে পারে। জমি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে পুরোনো খতিয়ান ও দলিল, নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সরকারি রেকর্ড (যদি থাকে), নতুন সার্ভে ম্যাপ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নপত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণ।
অনেকেই চর জেগে ওঠার পর তাড়াহুড়ো করে দখল নিতে গিয়ে আইনি জটিলতায় পড়েন। তাই চর জাগলে প্রথমেই প্রশাসনিকভাবে আবেদন করা এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ করা উচিত। এতে জমি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।


