Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

চেকের মামলায় টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০২

চেকের মামলায় টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া

প্রতীকী ছবি

চেক ডিস-অনারের মামলায় আসামি যদি জেল খাটেন, তবুও তিনি দায়মুক্ত হন না; তাকে চেকের টাকার পরিমাণ পরিশোধ করতেই হয়। এটি আইনত বাধ্যতামূলক, কারণ ফৌজদারি আদালতের রায়ে প্রদত্ত অর্থদণ্ড একটি আর্থিক দায়, যা থেকে জেল খেটে মুক্তি পাওয়া যায় না। যদি আসামি টাকা না দেন, তবে জেলেই থাকতে হবে। তবে বাদীপক্ষ বা পাওনাদার যদি আদালতে পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ না নেন, তখন আসামি রেহাই পেতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারায় এই টাকা আদায়ের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। 

যে আদালত আসামিকে দণ্ড দেন, বাদীপক্ষ সেই আদালতের কাছেই ৩৮৬ ধারার আওতায় টাকা আদায়ের আবেদন করতে পারেন। ৩৮৬ (১) (বি) ধারায় বলা হয়েছে, আদালত একটি লেভি ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন, যা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হবে। এরপর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসামির স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়ের মাধ্যমে পাওনা টাকা আদায়ের ব্যবস্থা নেবেন। যদি দেখা যায়, আসামি বা দায়িক তার সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন বা বন্ধক রেখেছেন, তাহলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ রেখে বাদীপক্ষকে অন্য সম্পত্তির তথ্য দিতে বলবেন। দায়িকের অন্য সম্পত্তি থাকলে সেটি ক্রোক করে বিক্রি করে অর্থ আদায় করা হবে। তবে মামলা দায়েরের আগেই বিক্রি করা সম্পত্তির ওপর ক্রোক জারি করা যাবে না। কিন্তু মামলা চলাকালীন যদি দেখা যায়, আসামি পাওনাদারকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে সম্পত্তি বিক্রি করেছেন, তবে সেটি কৌশলগত হস্তান্তর হিসেবে গণ্য হবে এবং লেভি ওয়ারেন্ট কার্যকর থাকবে। 

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ (১) (বি) ধারায় ইস্যুকৃত লেভি ওয়ারেন্টকে দেওয়ানি আদালতের ডিক্রির সমতুল্য ধরা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ওয়ারেন্ট পৌঁছালে তা সরকারি দাবি হিসেবে গণ্য হয় এবং সরকারি দাবি আদায় আইন, ১৯১৩ অনুযায়ী আদায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সেই আইনের ১৪ ধারায় বলা আছে, সার্টিফিকেট অফিসার সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়, ডিক্রি ক্রোক বা দেনাদারকে গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে অর্থ আদায় করতে পারেন। যদি দেনাদারের কোনো সম্পত্তি না থাকে, তাহলে তাকে দেওয়ানি কয়েদে আটক রেখে টাকা আদায় করা যায়। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। ১৯৯০ সালে পাবনা জেলা প্রশাসক ত্রাণ বিতরণের জন্য ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেন। এর মধ্যে বেড়া পৌরসভার একজন কমিশনার ২০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় বিভাগীয় বিশেষ বিচারক তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করেন, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময়ে আসামি হাইকোর্টে আপিল করলে আদালত আপিল খারিজ করে দেন এবং জরিমানা আদায়ের নির্দেশ বহাল রাখেন (মো. রওশন আলী বনাম রাষ্ট্র, ২০০২ বি.এল.ডি., পৃষ্ঠা-৩৩)। ওই রায় থেকে স্পষ্ট হয়, ফৌজদারি আদালতের আরোপিত জরিমানা একটি আর্থিক দণ্ড, যা রাষ্ট্রীয় ক্ষতির ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায়যোগ্য। আসামি শুধু কারাদণ্ড ভোগ করেই দায়মুক্ত হতে পারেন না। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারায় জরিমানা দেওয়ানি আদালতের ডিক্রির মতো কার্যকর হয় এবং জরিমানার টাকা সরকারি পাওনা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অর্থ দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সম্পত্তির ওপর দায় হিসেবে থাকে, এমনকি তার মৃত্যুর পরও তা আদায়যোগ্য থাকে। আসামির সম্পত্তি থেকে টাকা আদায় সম্ভব না হলে তবেই কারাদণ্ড ভোগের বিকল্প কার্যকর হয়। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত তার সম্পত্তি বা আর্থিক সক্ষমতা থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব, ততদিন পর্যন্ত দায় বহাল থাকবে। ফলে চেক ডিস-অনার মামলায় জেল খাটলেও টাকা পরিশোধ না করে দায়মুক্তি পাওয়া যায় না, এটাই আইনের মূল বার্তা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫