Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

আইন যখন অপ্রাপ্ত ছেলেমেয়ের বিয়ের অনুমতি দেয়

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৪

আইন যখন অপ্রাপ্ত ছেলেমেয়ের বিয়ের অনুমতি দেয়

প্রতীকী ছবি

বিবাহ সম্পাদনের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে, অভিভাবক রাজি হলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় বয়স। ছেলে বা মেয়ে কিংবা উভয়ই যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়, তবে বিয়ে বেআইনি। বাল্যবিবাহ রোধে আমাদের দেশে বহুদিন ধরে কার্যকর ছিল বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯। পরে সময়ের প্রয়োজনে তা বাতিল করে প্রণয়ন করা হয় বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭। এই আইনের ১৯ ধারায় যুক্ত করা হয়েছে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের একটি বিশেষ বিধান। 

২০১৭ সালের আইনের ২(৩) ধারায় বলা হয়েছে, বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলের বয়স হতে হবে ২১ এবং মেয়ের ১৮ বছর। তবে ১৯ ধারায় বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমের সুযোগ রাখা হয়েছে। যেমন-অপ্রাপ্তবয়স্কের আত্মহত্যার আশঙ্কা, অপ্রত্যাশিতভাবে গর্ভধারণ, মিসক্যারেজের সম্ভাবনা, সামাজিক অবক্ষয় বা ভ্রমণ হত্যার মতো পরিস্থিতি ইত্যাদি। ধরা যাক, দশম শ্রেণির হাবিব ও নবম শ্রেণির নাতাশা প্রেমে জড়াল এবং একসময় তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ায় মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-এই অনাগত সন্তানের কি কোনো বৈধতা থাকবে না? শুধু তারা প্রাপ্তবয়স্ক নয় বলে যদি বিয়ের অনুমতি না দেওয়া হয়, তাহলে মেয়েটি ও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে?

সামাজিক ও বাস্তবতার এমন নানা দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, ১৯ ধারার এই বিধান অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এমন বিয়ে এক প্রকার ‘মন্দের ভালো’। সমাজ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে আইন প্রণেতাদের বোধ ও প্রজ্ঞার পরিচয়ই এই বিশেষ বিধান সংযোজনের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭-এর ১৯ ধারার বিশেষ বিধান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অপ্রাপ্তবয়স্কের বিয়ের অনুমতির জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে-১. আদালতের নির্দেশ থাকতে হবে, ২. পিতা-মাতা বা অভিভাবকের সম্মতি থাকতে হবে, ৩. নাবালক বা নাবালিকার সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে। 

এ ছাড়া বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা ২০১৮-এর ১৭ বিধি অনুযায়ী, বিশেষ বিধান প্রয়োগে উভয় পক্ষকে যৌথভাবে আদালতে আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে পারবেন-ক. উভয় পক্ষের পিতা-মাতা, খ. আইনগত অভিভাবক, গ. অপ্রাপ্তবয়স্ক পাত্র-পাত্রীর সঙ্গে উভয় পক্ষ। আবেদন পাওয়ার পর আদালত সেটি যাচাইয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট যাচাই কমিটির কাছে পাঠাবেন। কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে কোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করবে। যাচাই কমিটি দুটি বিষয় বিবেচনা করবে-১. বিয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে হচ্ছে কি না, ২. বিয়েটি সর্বশেষ বিকল্প কি না, অর্থাৎ অন্য কোনো বিকল্প উপায় নেই কি না। 

আদালত কমিটির প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হলে অনুমতি দেবেন, না হলে নামঞ্জুর করবেন বা পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। প্রয়োজনে কমিটিকে আদালতে ডেকে শুনানিও নিতে পারেন। কমিটি চাইলে বিয়ের সুপারিশ না-ও করতে পারে, যদি বিয়ে জোরপূর্বক হয় কিংবা অপহরণ, ধর্ষণ বা জোরপূর্বক মিলনের ফলাফল হয়।

তবে মনে রাখতে হবে, ১৯ ধারার আওতায় বিয়ের অনুমতি পাওয়া মোটেও সহজ নয়। আদালত দুই পক্ষের আবেদনের পর অপ্রাপ্তবয়স্কের স্বার্থ যাচাই করে এবং সব আইনি শর্ত পূরণের পরই অনুমতি দিতে পারেন। আইন ও বিধিতে সরাসরি বলা হয়নি কোন আদালত এই অনুমতি দেবেন। তবে আইন ও বিধি একত্রে পড়লে বোঝা যায়, এ বিষয়ে যথাযথ ফোরাম হলো বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। কারণ বিধিতে ‘বিচারিক আদালত’ ও ‘মোবাইল কোর্ট’ পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ২৯ ধারা ও দ্বিতীয় তফসিলের অষ্টম কলাম অনুযায়ী, ‘অন্যান্য আইনবিরোধী চেষ্টা’ নীতিতে দুই বছর পর্যন্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এ আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত ও বিচার করবেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। অতীতে অনেক সময় এফিডেভিটের মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে দেওয়া হতো। এখন আর সে সুযোগ নেই। বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণে বৈধ কাগজ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে-জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, এসএসসি সার্টিফিকেট, জেএসসি সার্টিফিকেট, পিইসি সার্টিফিকেট ও পাসপোর্ট।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫