
আজ বাবা দিবস। মা দিবসে যেমন আমরা ফেসবুকে মায়ের সাথে ছবি পোস্ট দেই, আজ বাবা দিবসেও তাই হচ্ছে।
মা-বাবা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। বুখারি শরীফের একটি হাদীসে রয়েছে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) আবু হুরাইরা (রা.) কে মুসলিম উম্মাহর জন্য পাঁচটি বিষয়ে ওসিয়ত করে গেছেন। সেই পাঁচটি ওসিয়তের মধ্যে একটি হচ্ছে মা-বাবার সাথে সদাচারণ করা।
কোরআনে সূরা নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে ১০টি করণীয় দিক সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে- মা-বাবার প্রতি সদাচারণ করা।
কোরআন ও হাদীসের আলোকে মা-বাবা দুইজন জীবিত থাকলে কিংবা যেকোনো একজন জীবিত থাকলেও তাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে ‘উফ’ শব্দটিও বলতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কোরআন ও হাদীসে। এও বলা আছে, যদি বেহেশত পেতে চাও তাহলে মা-বাবার সেবা করো।
মা-বাবার জন্য কোরআনে মহান আল্লাহ একটি দোয়া আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন- “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা”।
পাশ্চাত্য ঘরনার ‘বাবা দিবস’কে ঘিরে লেখার শুরুতে কোরআন ও হাদীসের রেফারেন্স উল্লেখ করলাম এই জন্য যে, বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব কিংবা মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্বর কথা আমরা ভুলে যাই। অযথাই তাদের সাথে কটু কথা বলি। এক ঘণ্টা সময়ও তাদের খুশির জন্য ব্যয় করি না। অথচ বাবা দিবসে আজকে বাবার সাথে ছবিতে ফেসবুক ভরে যাবে।
এক তারকা বন্ধু গতকাল আমাকে বললেন, বাবা দিবস নিয়ে পত্রিকায় কোনো আয়োজন থাকছে কিনা? আমি দিনটির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। তাকে বল্লাম- বাবা দিবস কবে? তিনি আমার প্রতি খুব বিরক্ত হলেন। তাকে বল্লাম, বাবার জন্য কিছু বলতে হলে, তাকে উপহার দিতে হলে দিবস লাগবে কেন? আমার কথার কোনো উত্তর আর তিনি দিলেন না।
আমার বাবা খুব সাদাসিধে মানুষ। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের তিন ভাইবোনের ওপর কোনো দিন রাগতে দেখিনি তাকে। পেশায় তিনি আইনজীবি। সরকারি এপিপি, পিপি ছিলেন দীর্ঘদিন। এতো সহজ সরল মানুষ কিভাবে আইনের মতো একটি জটিল পেশায় যুক্ত ছিলেন আমার এখনো বোধগম্য হয় না।
একটি সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যে আমরা ভাইবোনরা বড় হয়েছি। বাবা আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। বিশেষ করে দেশের অন্যতম আবৃত্তি সংগঠন স্বরুপ সাংস্কৃতিক সংগঠন যার পেছনে সময়, অর্থ দুটো দিয়ে তিনি আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন। সংস্কৃতি প্রিয় হিসেবে আবৃত্তি অঙ্গনেও আমার বাবার আলাদা সম্মান রয়েছে। তিনি জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত। তবে তাকে কখনো উচ্চাবিলাসী হতে দেখিনি। খুব সাধারণ জীবন-যাপন করেন তিনি। যখন ছোট ছিলাম প্রত্যেক ঈদে দেখতাম বাবা নিজের জন্য কোনো শপিং করতেন না। আমরা প্রায়ই তাকে বলতাম, তুমি কেন কিছু কেনো না? তিনি শুধু হাসতেন। আজ যখন বড় হয়েছি, নিজে আয় রোজগার করছি, আজ উৎসব এলে নিজের জন্য কিছু কেনার কথা মনে থাকে না। আবার অনেক সময় সামর্থ্যও থাকে না। এখন বুঝি বাবা কেন হাসতেন। আসলে বাবারা এমনি হন।
পৃথিবীর সব বাবারাই এমন হন। তারা সন্তানের জন্য নিজের সময় ও শ্রম, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে থাকেন। আমরা একটু অসুস্থ হলেই আমাদের জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। অথচ এই বাবাদের জন্য সন্তানরা কি দায়িত্ব পালন করছে? বাবার কি লাগবে না লাগবে সন্তানরা কি তার খোঁজ নেই? অসুখ হলে একটু কাছে বসে মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করি- বাবা তুমি কেমন আছো?
বাবাকে খুশি করতে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না সন্তানের। একটু খোঁজখবর রাখা, একসাথে চা খাওয়া, অন্তত রাতের খাবারটা পরিবারের সবার সাথে খাওয়া, বাবার পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া এটুকুই তো।
বাবার ওষুধ লাগবে কিনা, চশমা ভেঙে গেল কিনা, বাবা একটু আরামে ঘুমালো কিনা এই কাজগুলো আমরা অনায়াসেই করতে পারে। এসবের জন্য কোনো দিবস লাগে না। প্রতিদিন বাবার জন্য, মায়ের জন্য এসব করা যায়। যার বাবা বেঁচে নেই, তিনি কিন্তু ঠিকই তাকে অনুভব করেন প্রতিমূহুর্ত। মৃত বাবা মায়ের জন্য সবসময় দোয়া করতে হবে সন্তানকে। কারণ মা-বাবা যখন কবরবাসী হয়ে যান তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সদকায়ে জারিয়া হিসেবে সন্তানের দোয়া মা-বাবার কবরে পৌঁছানো হয়।
যারা আজকে বাবা দিবস উদযাপন করছেন তাদের জন্য বলবো, আজকের মতো প্রতিদিন বাবাকে খুশি রাখুন। বাবার প্রতি আপনার দায়িত্ব পালন করুন সবসময়। দিনে একবার হলেও জিজ্ঞেস করুন, বাবা তুমি কেমন আছো?